ব্যবসায়িক কাজকর্ম ভালো হবে। ব্যবসার প্রসারযোগও বিদ্যমান। উচ্চশিক্ষায় সন্তানের বিদেশ গমনের সুযোগ আসতে পারে। গৃহশান্তি ... বিশদ
শীত মানেই মেলার মাঠ জমজমাট। খাবার, পোশাক, গয়না দেদার পাবেন মেলায়। স্টল ভাড়া নিয়ে আপনার পটুত্ব অনুযায়ী জিনিস সাজিয়ে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন বিক্রেতা। নিজের শখকে পেশায় রূপান্তরিত করার প্রথম ধাপ হতেই পারে মেলার একটি স্টল। এই ধরনের মেলায় অংশগ্রহণ করতে গেলে একটু পড়াশোনা করে নেওয়াও দরকার।
ধরুন আপনার রান্নার প্রচণ্ড শখ। সেই অনুযায়ী দেশি বিদেশি বিভিন্ন পদ বানাতে সিদ্ধহস্ত। এবার সেই আত্মবিশ্বাসের উপর ভর করে মেলার ফুড কোর্টে স্টল নিলেন। একটু অপরিচিত পদের মাধ্যমে অতিথিদের রসনা তৃপ্ত করবেন এমন বাসনা নিয়ে বানিয়ে ফেললেন কন্টিনেন্টাল বিভিন্ন পদ। অথচ মেলায় তেমন বিক্রি হল না। আপনি হতাশ। ভুলটা কোথায় হয়েছে ধরতেই পারলেন না।
স্বাদ এবং দাম দুটোই গুরুত্বপূর্ণ
রন্ধন বিশেষজ্ঞ রঞ্জনা মহাপাত্র এই বিষয়ে বলতে গিয়ে জানালেন, ‘মেলায় স্টল দেওয়ার ক্ষেত্রে মূলত পরিচিত খাবার রাখতে হবে। নাহলে লোকে তা কিনতে আগ্রহী হবে না।’ নতুন যাঁরা খাবারের স্টল দিচ্ছেন তাঁদের কিছু জিনিস মনে রাখতে হবে।
এক্ষেত্রে প্রথম বিবেচ্য পরিচ্ছন্নতা। হাতে গ্লাভস, মাথায় টুপি, প্রয়োজনে মুখে মাস্ক পরে হাতা, চামচ ইত্যাদির সাহায্যে খাবার পরিবেশন করা দরকার। খাবার নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করার ক্ষেত্র মেলা নয়। এখানে এমন খাবারই বিক্রি করুন যা মোটামুটি লোকে চেনে। খাবার বানানোর খরচ কম রাখুন। নাহলে লাভের মুখ দেখতে পারবেন না। মেলায় খাবারের দাম খুব বেশি হলে বিক্রি করা কঠিন।
মেনুতে স্ন্যাক্স গোছের পদ বেশি রাখুন
যে খাবার রাখবেন তার দাম মোটামুটি ৩৫ টাকা প্লেট থেকে ১৫০ টাকা প্লেটের মধ্যে রাখতে পারলে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হবে। তবে কোনওমতেই যেন খাবারের দাম ২৫০ টাকা না ছাড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। সেইমতো পদই বানাবেন।
কেমন খাবার রাখবেন?
মেলায় যে ধরনের খাবারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে তার মধ্যে ফুচকা, পাপড়ি চাট, দইবড়া, ভেলপুরি রয়েছে। ফুচকায় একটু ভিন্ন ধরন আনতে তার পুর ও জলের স্বাদ বদলাতে পারেন। এছাড়া একটু বিদেশি খাবারের মধ্যে পাউরুটির উপর বিভিন্ন টপিং দিয়ে তৈরি করতে পারেন সুস্বাদু পদ। তবে সেক্ষেত্রে দেখতে হবে স্টলে প্লাগ পয়েন্ট আছে কি না। থাকলে ইনডাকশন কুকার ও চাটু ব্যবহার করা যাবে। আর তখনই টোস্টের উপর টপিংস দিয়ে পরিবেশন করতে পারবেন।
চাউমিন, পাস্তা, ম্যাগির নানারকম, মোমো, স্যান্ডউইচ, চিলি চিকেন, নানা ধরনের ফ্রাই রাখতে পারেন মেনুতে। ফিশ ফ্রাই রাখলে ছোট সাইজের করবেন। তাতে দাম কম রাখতে সুবিধে হবে। বার্গারের ক্ষেত্রেও স্লাইডার (ছোট বার্গার) রাখুন। খেতে সুবিধে হয় বলে ওটা বিক্রিও বেশি হয়। বাঙালি খাবার রাখলে চপ, কাটলেট, পকোড়া গোছের খাবার রাখুন। ঝোল ঝাল একদমই রাখবেন না। খাওয়ার অসুবিধের কারণে তা বিক্রি হয় কম। কিছু কম্বো মিল, যেমন পোলাও চিকেন কষা, ফ্রায়েড রাইস চিলি চিকেন ইত্যাদি বক্স প্যাক করে রাখতে পারেন। প্রয়োজন মতো গরম করে বিক্রি করবেন। সেক্ষেত্রে অবশ্য মাইক্রো আভেন থাকা জরুরি।
গয়নাগাটির খুঁটিনাটি
এই প্রসঙ্গে জুয়েলারি ডিজাইনার শ্রাবণী দাস বললেন, মেলায় অংশগ্রহণ করার কিছু নিয়ম আছে। প্রথমত স্টলটা যেন খুব সাজানো থাকে। যে জিনিসগুলো আপনি নিয়ে গিয়েছেন সেগুলো সবই যেন সামনে দেখা যায়। এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। খদ্দের কিন্তু জিনিস কিনতে এসে খুঁজে খুঁজে দেখবে না। বরং যা চোখের সামনে দেখবে সেখান থেকেই পছন্দ করবে। ফলে সব জিনিস তার সামনে সাজানো থাকা চাই। মেলার ক্ষেত্রে গয়নায় একটু ভিন্ন ধরনের ডিজাইন থাকলে বেশি বিক্রি হয়। আর কোনও একটা অফার থাকলে ক্রেতাকে আকর্ষণ করতে সুবিধে হবে। দামটা অবশ্যই পকেটসই হতে হবে। তাহলে একটার বদলে একাধিক বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
নকশায় নতুনত্ব থাকা চাই যেমন ঠিক, তেমনই আবার জিনিসটা পরিচিত হলেই ভালো। ফলে মেলার ক্ষেত্রে অন্তত হার, দুল, আংটি ইত্যাদির স্টকই বেশি রাখুন। বিক্রি এবং লাভ দুটোই হবে।
পোশাক বাছুন ভেবেচিন্তে
প্রথমবার মেলায় স্টল দিচ্ছেন? পোশাকের ক্ষেত্রে ভাবনাচিন্তা করে নিন কী রাখবেন, কী রাখবেন না। বুটিকের কর্ণধার অনন্যা রায় জানালেন, মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ৮০০ টাকার জিনিস। তার মধ্যে ওড়না, স্টোল, রেডিমেড ব্লাউজ, কুর্তি, টপ, পালাজো, র্যাপার ইত্যাদির চাহিদা খুব বেশি। শাড়ির কেনার ক্রেতা একেবারেই আলাদা। ছোট ব্যবসায়ী বা নতুন মেলায় স্টল দিচ্ছেন, এমন হলে প্রথমেই শাড়ি রাখবেন না। রেডিমেড ব্লাউজের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। যদি একটু নতুন ডিজাইন রাখতে পারেন তাহলে বিক্রি বেশি হবে। ডিজাইনের পাশাপাশি ফ্যাব্রিকের দিকেও নজর দেওয়া দরকার। সুতির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। নাহলে সফট সিল্ক, স্লাব কটন ইত্যাদিরও মোটামুটি চাহিদা আছে। নকশায় নতুনত্ব পোশাকের ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। হাতের কাজেরও কদর প্রচুর। কাঁথা, গুজরাতি বা অন্য যে কোনও সেলাই তো চলছেই, পাশাপাশি হ্যান্ড পেন্টের কদরও রয়েছে।
শাড়ি রাখতে চাইলে একটু কম দামি দিয়ে শুরু করুন। যেমন মাল কটন, প্রিন্টেড শাড়ির মধ্যে আজরাখ, ভেজিটেবল ডাই ইত্যাদি রাখতে পারেন। ফ্যান্সি শাড়ি রাখলে উল্লেখযোগ্য নকশা হওয়া দরকার। নাহলে বিক্রি হওয়া মুশকিল।
স্টলে যে ধরনের জিনিস রাখবেন তার প্রচুর ভ্যারাইটি যেন থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আর সব জিনিসই ক্রেতা যেন দেখতে পায় সেভাবে স্টল সাজাবেন।
মেলায় বিক্রিবাটা অনেকটাই দেখনদারির উপর নির্ভর করে। তাই খাবার হোক বা পোশাক অথবা গয়না, স্টলটাকে সাজান আকর্ষণীয় স্টাইলে।
ছবি: অতূণ বন্দ্যোপাধ্যায়