পারিপার্শ্বিক কোনও ঘটনা চিন্তা বাড়াতে পারে। সাংস্কৃতিক কর্মে যোগদান ও মানসিক তৃপ্তিলাভ। শরীরের খেয়াল রাখুন। ... বিশদ
অনেকের মনে হয়—এই যে ভজন সাধন এ কি আমার মত জীবের পক্ষে সম্ভব? ভজন সাধনের ব্যাপার তো অনেক কঠিন। আমরা কি পারব? কঠিন কিছুই না। এর মত সরল আর অন্য কোনো বস্তুই নেই। এই কথা যে ঠিক, শ্রীকপিলদেব আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। ভক্তি কাকে বলে? বললেন ভক্তের যে গঙ্গাধারার মত মনোবৃত্তি কৃষ্ণের দিকে ছুটছে, তারই নাম ভক্তি। —‘‘মদ্গুণশ্রুতিমাত্রেণ ময়ি সর্ব্বগুহাশয়ে’’। আমার গুণ শুনলেই হবে। বিষয়টা এই রকম: গঙ্গার জল যাচ্ছে সমুদ্রের দিকে, জলের গতি অবিচ্ছিন্নভাবে সমুদ্রমুখী। যেমন কপিলদেব বললেন যে ভক্তের মনোবৃত্তি গতি অবিচ্ছিন্নভাবে কৃষ্ণের দিকে যাচ্ছে। তবে সব জলই কি সমুদ্রের দিকে যাচ্ছে? ডোবার জল, আটকে গেছে। পচে গেছে। পাতা-আবর্জনা ইত্যাদি পড়ে মুখ বন্ধ হয়ে গেছে, পোকা কিলবিল করছে। ওটা কি করে সমুদ্রের দিকে যাবে? বললেন—যাবে। যাওয়ার যোগ্যতা তারও আছে। যে জল সে জলই। তার গতি নিম্নের দিকেই আছে। যদি অনুকূল সহায়তা পায়। যেমন যদি বর্ষার জল প্রচুর পরিমাণে সেই ডোবায় এসে ঢোকে তখন ঐ ডোবার জল স্ফীত হয়ে ওঠে। বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে ডোবার জল পবিত্র হয়ে যায়, পোকামাকড় হারিয়ে যায়, তখন নদীনালা খালবিল বেয়ে গঙ্গা—আর গঙ্গায় পড়ল তো সমুদ্রের দিকে ছুটল। তেমনি বিষয়ী মানুষের চিত্ত হচ্ছে ডোবার পচা জলের মতো। বিষয় বাসনায় দুর্গন্ধ হয়ে পচে গেছে। সেখানে কামনা বাসনার পোকা কিলবিল করছে। জলের কাজ যে স্নান পান তাও হবার সম্ভাবনা তাতে নাই। এখন শ্রীকপিলদেব বলছেন—‘‘মদ্গুণশ্রুতিমাত্রেণ’’, যদি আমার এই গুণ কানের মধ্যে ঢুকে হৃদয় ডোবায় যায় তাহলে তো স্ফীত হয়ে গেল জল, পোকামাকড় হারিয়ে গেল।
এই শ্রবণ কীর্ত্তন সাধুসঙ্গ ইত্যাদির দ্বারা পবিত্র হয়ে এই জল ভক্তিগঙ্গা অভিমুখী হল, আর ভক্তি গঙ্গায় পড়ল তো ছুটল কৃষ্ণের দিকে। এই তো হয়ে গেল। যেমন আমরা বললাম গুণ শ্রবণ মাত্র, তেমনি গুণ-শ্রবণমাত্রেই, ঐ কথাটাই—মদ্গুণশ্রুতিমাত্রেণ। হবে না কেন? অতি সহজেই হবে।