সপরিবারে নিকট ভ্রমণের পরিকল্পনা। সহকর্মীরা কর্মক্ষেত্রে শত্রুতা করতে পারে। নতুন কোনও কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মক্ষেত্রে বদলির ... বিশদ
বাস্তবিক, নিবেদিতাকে বুঝিতে হইলে, নিবেদিতার গুরুর কথা অনিবার্য্য-রূপে আসিয়া পড়ে। তাঁহার হৃদয়ে গুরুর প্রতি ভক্তি ও আনুগত্যের যে তন্ময়তা প্রতিষ্ঠিত হইয়া গিয়াছিল, তাহাই তাঁহার সকল শক্তির উৎস—তাঁহার চরিত্রসৌধের ভিত্তি। গুরুভক্তির সহিত তাঁহার চরিত্র এমন নিখুঁতভাবে তদাকারকারিত হইয়া গিয়াছিল যে, তাঁহার সহিত যাঁহারা গুরুর সম্পর্কে সম্পর্কিত নহেন, উহার অস্তিত্বই হয় তো তাঁহাদের চোখে পড়িত না। কিন্তু তাই বলিয়া আমাদিগকে কি গুরুর কথা বাদ দিয়া নিবেদিতার কথা আলোচনা করিতে হইবে? অসম্ভব। যিনি ঐরূপ বাদ দিবার পক্ষপাতী, তিনি বুঝেন না যে, ঐরূপ করিলে তাঁহার গুরুর প্রতি অন্যায় করা না হইলেও, নিবেদিতার প্রতি অত্যন্ত অন্যায় করা হয়। যাঁহারা মনে করেন, নিবেদিতার সহিত তাঁহার গুরুর সম্পর্ক সাম্প্রদায়িকতার দুর্গন্ধে দূষিত, অতএব ঐ সম্পর্ক অন্তরালে থাকিলেই ভাল, তাঁহারা নিবেদিতার বিশ্বজনীনভাব বুঝিতে পারেন নাই, এবং সেইভাবের মূল-আকর ও শিক্ষাগুরুর বিরুদ্ধে তাঁহারা নিজেরাই সাম্প্রদায়িকতার একটা উৎকট প্রাচীর গড়িয়া তুলিতেছেন।
এই কারণে আমাদের মনে হয় যে, “নিবেদিতা”-লেখিকা শিষ্যার জীবনের আলোচনা করিতে যাইয়া, প্রথমেই যে গুরুর প্রভাব নির্ণয় করিয়াছেন, তাহাতে নিবেদিতাকে বুঝিবার চেষ্টা বঙ্গসাহিত্যে প্রকৃত গতি লাভ করিয়াছে। শ্রীমতী লেখিকা “The Master as I saw Him” নামক পুস্তক হইতে দেখাইয়াছেন যে, নিবেদিতা যখন হিন্দুসন্ন্যাসীকে গুরু-রূপে বরণ করিলেন, তখন কেবল একটা উচ্চতর মতবাদের নিকট তিনি আত্মসমর্পণ করেন নাই। প্রকৃত কথা, তিনি অসাধারণ ত্যাগ ও সত্যানুরাগের নিকটই আপনার সর্ব্বস্ব বিকাইয়া দিয়াছিলেন। তিনি বুঝিলেন যে, “তিনি (স্বামী বিবেকানন্দ) আজ যাহা মনের সহিত সত্য বলিয়া গ্রহণ করিয়াছেন, এবং সর্ব্বলোকসমক্ষে প্রচার করিতেছেন, কাল যদি সেই মতে ভ্রম দেখিতে পান, তাহা হইলে, বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করিয়া তখনই তাহা পরিত্যাগ করিতে পারেন; কেন না, তিনি সত্যানুরাগী, তিনি বীর;—তিনি ত্যাগমন্ত্র গ্রহণ করিয়া এমনভাবে আপনাকে বিসর্জ্জন দিয়াছেনযে, মানযশ প্রভৃতি কিছুরই আর আকাঙ্ক্ষা রাখেন না।”
রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির প্রকাশিত ‘দীপান্বিতা নিবেদিতা’ থেকে