হঠাৎ জেদ বা রাগের বশে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া শ্রেয়। প্রেম-প্রীতির যোগ বর্তমান। প্রীতির বন্ধন ... বিশদ
আমাদের ঠাকুর বলেছেন, প্রার্থনা করতে—তিনি কৃপা ক’রে জোর ক’রে নিয়ে চলুন তাঁর দিকে। মনের সচেষ্ট ইচ্ছা থাকবে, পারছি না কিন্তু চাইছি। কাজেই বলতে হবে—তুমিই এটা করে দাও।
যেমন সাধনা তেমন সিদ্ধি। মনকে ইষ্টমুখী করাই সাধনা। সংসারের দিকে মন ছুটছে, চাহিদা জাগছে নানান্ রকমের। কিন্তু কেন? সব চাহিদা সব আকুলতা সংসারকে দেবে কেন? এটা তো ঠিক যে, আমরা কিছুটা অংশ অন্ততঃ ভগবানের দিকে দিতে পারি। কাজেই সেটা দিয়েই শুরু করতে হবে।
নামকীর্ত্তনের সময় খুব উচ্ছ্বাস দেখা যায়। হয়তো সাময়িক কিংবা লোক দেখানোই। ঐ সাময়িক উত্তেজনা উদ্দাম নৃত্য তারও লাভ আছে। এমনি না এলেও বসে ভেতর থেকে আকুলতা জাগানোর চেষ্টা। সেই চেষ্টাটাই সাধনা। দিনের পর দিন এটা করতে করতে শুভ সংস্কারের সৃষ্টি হবে। মানুষই তো শুভ অশুভ সংস্কারের সৃষ্টি করে তার আচরণের দ্বারা, তার কর্মের দ্বারা।
সমস্ত কর্তব্যের মূলে আছে ভালবাসা।
মেয়েদের স্বভাব কোমল হবে, কিন্তু সেটার প্রকাশ হবে অপরের প্রতি সহানুভূতিপূর্ণ মাতৃভাবযুক্ত মনোভাব, দয়া, সেবা ইত্যাদির দ্বারা। এই কোমলতার অর্থ এই নয় যে, নৈতিক দৃঢ়তাকে বিসর্জন দেওয়া। আবার কোমলতাহীনের অর্থ এই নয় যে, নৈতিক কঠোর জিদপরায়ণ হতে হবে। নৈতিক দৃঢ়তার অর্থ আদর্শ জীবনের নীতিতে দৃঢ় থাকা, আধ্যাত্মিক জীবনে গুরুইষ্টের প্রতি নিষ্ঠায় দৃঢ় থাকা, মহৎ কাজে বা বড় কাজে অপরের বা নিজের ক্ষুদ্রতাকে পরিত্যাগ করা।
ঈর্ষা নিজের ও অপরের উভয়েরই ক্ষতি করে।
মেয়েদের কোমল চালচলন এবং ব্যবহারের মধ্যে অনেক সময় মোহকরী শক্তির প্রকাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু তাই বলে কি নির্মম হতে হবে? না, তা নয়। এই কোমলতাকে পবিত্রতায় পরিশুদ্ধ ক’রে নিতে হবে আর তা প্রকাশ করতে হবে দেবভাবের মাধ্যমে।
ভগবানই হচ্ছেন সবচেয়ে আপনজন। তাঁর চেয়ে আপন আর কেউ নেই।
যারা ভগবানকে ভালবাসে, তারাই ঠিক ঠিক মানুষকে ভালবাসে। যারা ভগবানকে ভালবাসে না, তারা মানুষকেও ঠিক ঠিক ভালবাসতে পারে না।
কৃপা করা না করা তাঁর ইচ্ছা। সেক্ষেত্রে ঠাকুরের কাছে এই বলে Order বা হুকুম করা চলবে না—আমি এত করেছি তাই এত দিতে হবে। প্রার্থনা আর Order এক নয়। কৃপার রাজ্যের কথা আলাদা। ঠাকুর যে কখন কাকে কিভাবে কৃপা করবেন, তা কেউ বলতে পারে না।
ভালবাসতে গেলে আঘাত পেতেই হবে। ভগবানের ভালবাসা নিঃস্বার্থ ভালবাসা। ভগবান যখন মানুষরূপে আসেন তাঁকে আঘাত পেতে হয়। অবতার আসেন ভালবাসার চরম আদর্শ দেখাতে।
অন্তরের ক্ষোভ বা বাসনা পুষে রাখলে কখনও সার্থক মানুষ হওয়া যায় না। মনকে সব সময় শান্ত রাখতে হবে। লক্ষ্য রাখবে যাতে কোনও বাসনা ঢুকে মনকে অশান্ত করতে না পারে। সন্ন্যাসী যে হবে তাকে করতে হবে সব কিছুর সম্যক ন্যাস। যার অন্তরের বাসনার সম্যক্ ন্যাস হয়েছে সে-ই সার্থক সন্ন্যাসী। সন্ন্যাসীর কোনও ক্ষোভ থাকবে না। তীব্র বৈরাগ্য না নিয়ে এলে আশ্রমে কেউ ঠিক ঠিক ভাবে থাকতে পারে না। আশ্রমে থাকতে গেলে চাই তীব্র বৈরাগ্য। একমাত্র আধ্যাত্মিক পথই মানুষকে শান্তি দিতে পারে।
যার যেমন সামর্থ্য তার তেমনই চলা উচিত। অন্যের অনুকরণ করে নিজের সামর্থ্যের বাইরে কখনই চলা উচিত নয়। এতে গৃহে অশান্তির সৃষ্টি হয়, মনে বাসনা জেগে ওঠে, তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যে যার নিজের পথে ঠিকমত চললেই সংসারে শান্তি আসবে। এজন্য তীব্র প্রার্থনা করতে হয়।
সত্যপথে চলাটা জীবনের উদ্দেশ্য ঠিকই। কিন্তু শুধু সেটাই সব নয়। এর সাথে ভগবৎ-বিশ্বাস, ভক্তি, ভগবৎ-শরণ, ঠাকুরের প্রতি ভালবাসা এবং নিষ্ঠাকেও যুক্ত করতে হবে। এইভাবেই জীবনের চলা সহজ হয়ে যাবে।
‘শ্রীঅর্চনামায়ের বাণী’ থেকে