শেয়ার ও বিমা সূত্রে অর্থাগম হতে পারে। কাজের প্রসার ও নতুন কর্মলাভের সম্ভাবনা। বিদ্যা হবে। ... বিশদ
কেউ ভেবে পায় না, ভোটের প্রচার এবং জনসভা করতে কি এত টাকা লাগে? ভোট ক্রয় এবং ভোট লুটেরাদের পুষতে ও গরমাগরম সরঞ্জাম কিনতেই বেশিরভাগ টাকা বেরিয়ে যায় না কি? সোজা কথায়, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন ও অর্থায়ন নিয়েই মানুষ তিতিবিরক্ত। রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়েছে ভদ্র শিক্ষিত যুব সমাজ। এই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির কথা কোনও পার্টির এবং নেতার অজানা নয়। তাই রাজনৈতিক দলের ভাঁড়ার কানায় কানায় পূর্ণ করে তুলতেই মোদির প্রথম অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি চালু করেছিলেন ইলেক্টোরাল বন্ড। ‘সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার’ দাবি করেছিলেন তিনি। কিন্তু জনগণের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের এমন একটি ব্যবস্থায় জবাবদিহিতার কোনও জায়গাই তিনি রাখেননি। কোন ব্যক্তি বা কোম্পানি কোন দলকে কত টাকা দিচ্ছে, তা পুরোপুরি গোপন থাকবে—ভাবা যায়! সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এই আজগুবি ‘স্বচ্ছতার’ গপ্পো মেনে নেয় কী করে? তাই নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শুরুতেই সরব হয় নাগরিক সমাজ। তারা পরিষ্কার বুঝে যায়, এই কাণ্ডের আড়ালে কী ঘটে চলেছে।
বিষয়টি আদালতের গোচরে আনার পর সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য কঠোর হতে দেরি করেনি। ইলেক্টোরাল বন্ড ব্যবস্থা ‘অসাংবিধানিক’ জানিয়ে অবিলম্বে তা বন্ধ করারই নির্দেশ তারা দিয়েছে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে বন্ড বিক্রেতা ব্যাঙ্ক এসবিআই এ-পর্যন্ত যেসব তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতেই ফাঁস হয়ে গিয়েছে—মোদি সরকারের এই কেরামতিতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে বিজেপি। এমনকী, কিছু সংস্থার রাজনৈতিক দল-প্রীতি দেখে তাজ্জব বনে যাওয়ার অবস্থা। প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মধ্যে একটি কোম্পানি কোনও রাজনৈতিক দলকে আর্থিক অনুদান বা চাঁদা দিতে পারবে না। বহাল এই আইন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একাধিক সদ্যোজাত কোম্পানিও কিনেছে বিপুল অর্থের নির্বাচনী বন্ড। কারও কারও ক্ষেত্রে বন্ড ক্রয়ের মাধ্যমে পুজো চড়ানোর আর্থিক মূল্য তার মোট পুঁজিরই বহু বহুগুণ! এই ধারাবাহিক তথ্য ফাঁসের নবতম সংযোজনের নাম শেল কোম্পানি। অস্তিত্বহীন কোম্পানিগুলির জন্ম আর আজগুবি স্বচ্ছতার রহস্য একাকার হয়ে গিয়েছে। অর্থমন্ত্রীর স্বামী পরকলা প্রভাকর যথার্থই তোপ দেগেছেন, ‘নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থাই হল বিশ্বের বৃহত্তম দুর্নীতি।’ ‘না খায়ুঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’র কাঁধ ঝাঁকুনি কি চুরমার হয়নি এই কেলঙ্কারিতে? যখন মুখ লুকনোই ছিল ভদ্রসমাজোচিত শিষ্টাচার, ঠিক তখনই বন্ড ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করলেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। শনিবার এক সাক্ষাৎকারে তাঁর দাবি, ‘বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পও ফিরিয়ে আনা হবে!’ এজন্য নির্মলাকে তীব্র আক্রমণ করেছে রাহুল গান্ধীর দল। তারা বলেছে, নির্বাচনী বন্ডকে সুপ্রিম কোর্ট ‘অসাংবিধানিক’ ও ‘বেআইনি’ ঘোষণাসহ ‘বাতিল’ করার পরও অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। দেশের প্রধান বিরোধী দলের অভিযোগ, বিজেপি এই ‘পে পিএম’ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে জনগণের চার লক্ষ কোটি টাকা লুট করেছে। সেই লুটের কারবারই বজায় রাখতে চাইছে তারা। ভোট গ্রহণের বাকি এখনও ছয় দফা। তাই বন্ড ব্যবস্থা ফেরানোর ব্যাপারে এত আগাম চিন্তা না করলেই পারেন নির্মলা। গেরুয়া শিবির বরং এটাই ভাবতে থাকুক, মানুষ সেই সুযোগ তাদের আদৌ আর দেবে কি না।