কর্মে বাধা থাকলেও অগ্রগতি হবে। ব্যবসায় লাভ হবে সর্বাধিক। অর্থাগম যোগটি শুভ। কর্মক্ষেত্রে এবং রাজনীতিতে ... বিশদ
সম্প্রতি আফগানিস্তানে তালিবানদের ক্ষমতা দখলের পর পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের তত্ত্বাবধানে জয়েশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠী কাশ্মীরে হামলা চালানোর জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে। আফগানিস্তানের পর কাশ্মীরই জঙ্গিদের ঘোষিত পরবর্তী টার্গেট। তাই ভূস্বর্গকে অশান্ত করে তুলতে পাক মদতপুষ্ট আইএসআইয়ের মদতেই জঙ্গিরা সন্ত্রাসমূলক কাজ চালাচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। তাঁদের আরও আশঙ্কা, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জঙ্গিদের সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনীর যে এনকাউন্টার চলছে তাতে মিশে রয়েছে পাক কমান্ডোরাও। কারণ জন্মলগ্ন থেকেই পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি ভারতের অমঙ্গলসাধনের চেষ্টা করছে। এবার ভারতীয় গোয়েন্দাদের মাথাব্যথা আরও বাড়িয়েছে বদরি ৩১৩-এর ধাঁচে প্রশিক্ষিত নয়া জঙ্গি ইউনিট হরকত ৩১৩। ফলে কাশ্মীরের পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। এটা স্পষ্ট হচ্ছে, বিশ্বের চোখে কাশ্মীরকে খাটো করে দেখানোর উদ্দেশ্যেই সেখানে ধারাবাহিক নাগরিক খুনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। যাতে ভূস্বর্গের শান্তিভঙ্গ হয়। উপত্যকায় এখন ভরা পর্যটনের মরশুম। দোকানপাট, অফিস কাছারি সব খোলা। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে ছবিটা স্বাভাবিক জীবনযাত্রার। কিন্তু আসলে কি তাই? বছর দুই আগে রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা লোপ পাওয়ার পর থেকে উপত্যকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধ। বকলমে সেখানে কেন্দ্রের শাসন চলছে। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দায়িত্ব তাদেরই। অথচ এখনও কাশ্মীরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা সরাসরি অথবা পরোক্ষে গৃহবন্দি। এলাকায় এলাকায় সেনা তৎপরতা। জঙ্গি-সেনার লড়াই সেখানকার রোজনামচা। এ নিয়েও রীতিমতো ক্ষুব্ধ কাশ্মীরবাসী। এই সুযোগে কাশ্মীরে কর্মসংস্থানের অভাব আর অনুন্নয়নের কারণকে কাজে লাগাচ্ছে জঙ্গিগোষ্ঠী। জঙ্গি হতে চেয়ে অনেক স্থানীয় যুবক নাম লেখাচ্ছেন। তার উপর আবার আফগানিস্তানে পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে তালিবানদের জেহাদ সংবলিত ভিডিও, অডিও ছড়াচ্ছে হু হু করে। এই অবস্থায় সঙ্গত কারণেই জঙ্গি দমনে সেখানে সেনা তৎপরতাও বেড়েছে। দুর্ভাগ্যজনক যে, এতৎসত্ত্বেও ফের অশান্ত ও রক্তাক্ত হয়ে উঠছে কাশ্মীর। বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষও।
পরিস্থিতি বুঝে এখন কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্র নড়েচড়ে বসছে। কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পর উপত্যকাকে উন্নয়নে মুড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা করেছিল মোদি সরকার। ঘোষণা মতো কেন্দ্রীয় প্যাকেজের হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়নযজ্ঞও নাকি শুরু হয়েছে। উন্নয়নের কাজ তদারকি করতে চলতি মাসে নীতিন গাদকারি কাশ্মীর গিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহেরও চলতি মাসে উপত্যকা সফরে যাওয়ার কথা। কিন্তু এসবই যেন আইওয়াশ। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, সব অর্থেই কাশ্মীর পিছিয়ে পড়ছে। কার্যত টানা সেনাশাসন কাশ্মীরবাসীর আত্মপ্রত্যয় নষ্ট করে দিচ্ছে। সেখানকার অর্থনীতি ধসে পড়েছে। স্থানীয় যুবকদের হাতে কাজ নেই। অনেক ঢক্কানিনাদ হলেও গত দু’বছরে সেখানে বিনিয়োগ সেভাবে হয়নি। রাজনৈতিক কাজকর্মও লাটে উঠেছে। কাশ্মীরে আক্ষরিক অর্থেই যেন সেনা শাসন চলছে। সেখানে কবে নির্বাচন হবে, কেউ জানে না। এসবেরই পরিণতিতে ফের অশান্ত কাশ্মীর। ফিরছে পুরনো চেহারায়, বাড়ছে জঙ্গি তৎপরতা। তাই রাজনীতির অঙ্ক না কষে মোদি-শাহদের উচিত, এখনই কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা। উপত্যকার মানুষ সাধারণভাবে শান্তিপ্রিয়। তাঁদের আত্মপ্রত্যয় ফেরাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। এই সহজ সত্যটা মোদি সরকার যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই মঙ্গল।