কর্মে বাধা থাকলেও অগ্রগতি হবে। ব্যবসায় লাভ হবে সর্বাধিক। অর্থাগম যোগটি শুভ। কর্মক্ষেত্রে এবং রাজনীতিতে ... বিশদ
প্রায় সব বয়সের কোটি কোটি মানুষের ফেসবুক ওয়ালে বিচরণ শুরু হয় গুড মর্নিং দিয়ে আর শেষ হয় গুড নাইটে। এর মাঝখানে কেউ বাড়িতে বা অন্য কোনও স্থানে অলস কিংবা অবসর যাপন করছেন। কেউ যাচ্ছেন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অফিসে। কারও রয়েছে জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, ভ্যালেনটাইনস ডে কিংবা বন্ধুত্ব দিবস, শিক্ষক দিবস, ভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, নারী দিবসের মতো অজস্র উদযাপনীয় মুহূর্ত। করোনা সংক্রমণ, দুর্ঘটনা থেকে প্রিয়জন বিয়োগের মতো স্বাভাবিক ব্যথা-বেদনাতেও বহু মানুষ কাতর হচ্ছেন। কেউ ছবি আঁকেন, কেউ লেখেন কবিতা কিংবা সুন্দর আবৃত্তি, অভিনয় অথবা মডেলিং করেন। কারও শখ শুধু সিনেমা দেখা অথবা পাহাড়ে, সমুদ্রে, জঙ্গলে ভ্রমণ। কারও আজ বই/পত্রিকার উদ্বোধন অথবা প্রিয়জনের বিবাহ অনুষ্ঠান। কারও এলাকায় আচমকা নেমে এসেছে টর্নেডোর বিপর্যয় কিংবা বন্যায় ভেসে যাচ্ছে জনপদ। এই সমস্ত ধরনের মানুষ তাঁদের একান্ত/ব্যক্তিগত ভালোলাগার কিংবা বিষাদের বহু কথা, তথ্য ও মুহূর্ত সরাসরি শেয়ার করে দিতে ফেসবুককেই হাতিয়ার করেছেন। ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠান অনেকাংশে টেলিভিশনের নিকট বিকল্প হয়ে উঠেছে। ফেসবুকের সিঁড়িতে পা রেখে অনেক সাধারণ মানুষ আচমকা সেলিব্রিটি হয়ে উঠছেন। তাঁদের কেউ সাহিত্য জগতের মানুষ, কেউ অভিনয় জগতের, কেউ-বা রাজনীতির আঙিনার। একদশক আগে ব্যাপারটা কষ্টকল্পনাতেও আনা যায়নি। ফেসবুক বহুকিছুকে অতি সহজলভ্য করে তুলেছে। দুষ্প্রাপ্যতাতেই যে জিনিসের প্রকৃত মূল্য নির্ধারিত হয়, প্রবাদের সত্যটিকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে ফেসবুকের এই অভাবনীয় কাণ্ডকারখানা।
এখানেই বাসা বেঁধেছে ভয়ানক বিপদ। আইনের খাতায় কী আছে, ফেসবুকের ক্ষেত্রে তার বাস্তব প্রতিফলন নগণ্য। পরিতাপের বাস্তবটা হল, ফেসবুক প্রায় নিয়ন্ত্রণহীন। যে সোশ্যাল মিডিয়ার কাঁধে চেপে বিশ্বের যেকোনও প্রান্তে মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছনো যায়, অথচ সেটা কাছাখোলা—এই সুবিধেটা নেওয়ার সুযোগ কোন মতলববাজ হাতছাড়া করবে? কোনও মতলববাজই বোকা নয়। তাদের প্রায় সকলেই সুযোগটির সদ্ব্যবহার করেছে। বিশেষ করে সঙ্কীর্ণ রাজনীতির কারবারিরা এই প্ল্যাটফর্মের সুযোগটা নিয়েছে পূর্ণমাত্রায়। এই উপমহাদেশের রাজনীতির পিছনে ধর্মব্যবসায়ীদের কালো হাত ভীষণভাবে সক্রিয়। তাই দেখা যাচ্ছে, ধর্মব্যবসায়ীরা সংগঠিতভাবে ফেসবুককে ব্যবহার করছে। বহু মানুষ যেকোনও মানের প্রচারের দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। তথ্য একটা পেলেই হল। তা যাচাই করার ইচ্ছে, বুদ্ধি এবং অবকাশ—কোনওটাই নেই। সেটা নিয়েই মেতে উঠল এবং মুহূর্তের মধ্যে ব্যক্তিগত বন্ধুদের শেয়ার করে দিল এবং হাটে-বাজারে, গাড়িতে-বাড়িতে সর্বত্র তা নিয়ে চর্চা জারি রাখল। এইভাবে প্রতিদিন বহু ডাহা মিথ্যে জলজ্যান্ত সত্যির মতো শক্তিমান হয়ে ওঠে। ভারতের ক্ষেত্রে আরএসএসের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলির ক্ষতি করার জন্য তারা এই অন্যায়টি দীর্ঘদিন ধরে করছে। একটি বিশেষ ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়েই তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, রাজনৈতিক ক্ষমতার বিস্তার ঘটাতে বদ্ধপরিকর। বহুচর্চিত বিষয়টি বিস্ফোরক তথ্য হিসেবে এবার পেশ হয়েছে মার্কিন সেনেটে। এই ঘটনায় শুধু ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কলঙ্কিত হল না, ভারতেরও মুখ পুড়ল, বেরিয়ে পড়ল বৃহত্তম গণতন্ত্রের কঙ্কাল! বৃহৎ ব্যবসায়িক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে একটি গ্রহণযোগ্য নিয়ন্ত্রণ জারি রাখতেই হবে। না-হলে সামাজিক মাধ্যমের পরিবর্তে বিশ্বসমাজ ধ্বংসের হাতিয়ার বলে গণ্য হবে ফেসবুক। অন্যদিকে, বিজেপিকেও মাথায় রাখতে হবে তারাই এই মুহূর্তের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি। আরএসএসের উস্কানিতে তারা আচরণে লাগাতার বেলাগাম ও দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে তার প্রভাব পড়বে দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতার উপর। এই ক্ষতি করার কোনও অধিকার তাদের নেই।