নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ডার্বি হারের জেরে অগ্নিগর্ভ ইস্ট বেঙ্গল। মঙ্গলবার বিকেলে কোচের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন স্প্যানিশ কোচ আলেজান্দ্রো মেনেন্ডেজ গার্সিয়া। পরবর্তী কোচের দৌড়ে সুব্রত ভট্টাচার্য ও বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের নাম শোনা গেলেও কোয়েসের আপত্তি রয়েছে। শোনা যাচ্ছে, ভারতে কোচিং করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন কোনও বিদেশিকেই আনা হবে। সেই দৌড়ে আপাতত এগিয়ে আছেন আলেজান্দ্রোর প্রাক্তন সহকারী মারিও রিভেরা।
মঙ্গলবার দুপুর একটা নাগাদ কোয়েস ইস্ট বেঙ্গলের পদত্যাগী সিইও এবং কোচ আলেজান্দ্রোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর সুব্রত নাগ। লাল-হলুদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসার আগে তিনি কোচকে বুঝিয়ে দেন, এবার থেকে ফুটবল টিম চালাতে গেলে সাবেক কর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলতে হবে তাঁকে। কোচকে ওই সভায় আরও বলা হয় যে, টিমের বিদেশি রিক্রুট মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। সেপ্টেম্বর থেকে বয়ে নিয়ে চলা বোরহা গোমেজকে নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কল্যাণীতে গোকুলামের কাছে হারের পর গ্যালারিতে দর্শকরা চড়ও মেরেছিলেন কোয়েস ইস্ট বেঙ্গলের সিইওকে। ওই ঘটনা মেনে নিতে না পেরে কোচ আলেজান্দ্রোও ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বেঙ্গালুরুর কোয়েস কর্তাদের কাছে। মঙ্গলবার সুব্রত নাগের কাছে সবকিছু শুনে আলেজান্দ্রো ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শতবর্ষে টানা ব্যর্থতায় সমর্থকদের ক্ষোভ যেভাবে বাড়ছিল, তাতে আলেজান্দ্রো কোচের পদে আর থাকতে চাননি।
গত মরশুমে ইস্ট বেঙ্গল এই স্প্যানিশ কোচের তত্ত্বাবধানে আই লিগে রানার্স হয়েছিল। কিন্তু চলতি মরশুমে লাল-হলুদের পারফরম্যান্স যথেষ্ট খারাপ। । ডুরান্ড ও কলকাতা লিগে ব্যর্থ হওয়ার পর আই লিগে টানা তিনটি ম্যাচে হেরে যায় আলেজান্দ্রোর প্রশিক্ষণধীন ইস্ট বেঙ্গল। সেই অক্টোবর থেকেই ইস্ট বেঙ্গলের সাবেক কর্তারা বলে আসছিলেন দলের কয়েকজন বিদেশি ফুটবলারকে বদল করতে। এমনকী জানুয়ারিতে ফিফা উইন্ডো খোলার পর ইস্ট বেঙ্গলের শীর্ষ কর্তারা প্র্যাকটিসের পর তাঁর কাছে ওই আবেদন নিয়ে ফের হাজির হয়েছিলেন। ক্রেসপি আর মার্কোসকে বদল করতে বললে আলেজান্দ্রোর উত্তর ছিল, ‘ফুটবল রাইটস’ তো আপনাদের কাছে ঩নেই। তাই বিদেশিদের নিয়ে আপনাদের কোনও মতামত শুনব না।’ এদিন সন্ধ্যায় হঠাৎই লাল-হলুদ তাঁবুতে দেখা যায় আনসুমানা ক্রোমাকে। নতুন বিদেশি হিসেবে তাঁকে নেওয়ার জোর চিন্তাভাবনা চলছে। তবে তার আগে বোরহা গোমেজকে রিলিজ দিতে হবে। কোয়েসের শীর্ষ কর্তা অবশ্য স্প্যানিশ ডিফেন্ডারটিকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে ছাড়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া মার্কোসের বদলে কৃষ্ণাঙ্গ স্ট্রাইকার আনার পরিকল্পনা রয়েছে লাল-হলুদ কর্তাদের।
গত ১৪ জানুয়ারি বেঙ্গালুরুতে গিয়ে ফুটবল টিমের ৭০ শতাংশ ‘রাইটস’ ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে কোয়েসের দুই শীর্ষ কর্তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন লাল-হলুদ কর্তারা। ওই সভায় ঠিক হয়, ডার্বির পর কলকাতায় গিয়ে সুব্রত নাগ কথা বলবেন ইস্ট বেঙ্গল কর্মকর্তাদের সঙ্গে। ইতিমধ্যে সোমবার সন্ধ্যায় ইস্ট বেঙ্গলকে ‘রাইটস’ ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটি চূড়ান্ত হয়ে যায়। তখনই বেজে গিয়েছিল আলেজান্দ্রোর বিদায় ঘণ্টা। মঙ্গলবার ইস্ট বেঙ্গলের চার কর্তা সুব্রত নাগের সঙ্গে দেখা করতে নিউ টাউনে কোয়েস অফিসে পৌঁছানোর আগেই আলেজান্দ্রো ইস্তফা দিয়ে দেন। লাল- হলুদ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগেই আলেজান্দ্রোর পদত্যাগের খবর ‘ই-মেল’ মারফত জানিয়ে দেওয়া হয় সংবাদমাধ্যমকে। ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তাঁকে ইস্ট বেঙ্গলের চিফ কোচ হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন কোয়েস কর্তারা। এবারের আই লিগে সপ্তম ম্যাচের পর ইস্ট বেঙ্গলকে সাত নম্বরে রেখে ইস্তফা দিলেন আলে স্যার। এই সাতটি ম্যাচের মধ্যে জয় দু’টিতে। ড্র দু’টিতে। আর টানা তিনটি ম্যাচে হার। স্প্যানিশ কোচকে নিয়ে ইস্ট বেঙ্গলের সমর্থকদের একাংশ যতই মাতামাতি করুন না কেন শেষ পর্যন্ত তাঁর কোচিংয়ে প্রাপ্তির ভাঁড়ার কিন্তু শূন্য।
আলেজান্দ্রো ইস্তফা দেওয়ার পর তাঁর আনা স্প্যানিশ সাপোর্ট স্টাফরা নাও থাকতে পারেন এমন একটি আশঙ্কা তৈরি হয়। এমনকী ইস্ট বেঙ্গলের স্প্যানিশ গ্রুপের কিছু ফুটবলার রিলিজ চাইতে পারেন বলেও এমন জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে কলকাতায় থাকা কোয়েস কর্তাদের মধ্যে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে সুব্রত নাগ সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ নিউ টাউনের রোজবেল অ্যাপার্টমেন্টে যান। সেখানেই থাকেন সাপোর্ট স্টাফ এবং বিদেশ ফুটবলাররা। সেখানে স্প্যানিশ ফুটবলারদের সঙ্গে কথাও হয় তাঁর। আপাতত চেন্নাই সিটি ম্যাচের জন্য আলেজান্দ্রোর আনা বিদেশি ফুটবলাররা থাকছেন। বুধবার ইস্ট বেঙ্গল ফুটবলারদের অনুশীলন করাবেন বাস্তব রায়।