সংবাদদাতা, পুরাতন মালদহ: বৃহস্পতিবার পুরাতন মালদহ ব্লকের কৃষক বাজারে কৃষকদের নাম রেজিস্ট্রেশনের যন্ত্র খারাপ হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘক্ষণ আটকে রইলো ধান কেনার কাজ। দূরদূরান্ত থেকে আসা কৃষকরা হয়রান হয়ে বিক্ষোভ দেখালেন। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিসকে খবর দেওয়া হয়। মালদহ থানার পুলিস এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিন সকালে পুরাতন মালদহ ব্লকের কৃষক বাজারে সেন্ট্রালাইজড প্রকিউরমেন্ট সেন্টারে (সিপিসি) ধান কেনার রেজিস্ট্রেশন ঘিরে বিক্ষোভ দেখান কৃষকরা। এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। জানা গিয়েছে, যে যন্ত্রটিতে রেজিস্ট্রেশন হয়, সেটির হার্ডডিক্স খারাপ হয়ে যাওয়ায় সিপিসির কর্মীরা এদিন সকাল থেকে রেজিস্ট্রেশন করাতে পারেননি। ফলে কার্যত এদিন গোটা ধান কেনা প্রক্রিয়াটাই ব্যাহত হয়ে পড়ে। দূরদূরান্ত থেকে আসা কৃষকরা ভোগান্তিতে পড়েন। ধৈর্য হারিয়ে অনেকেই বিক্ষোভ দেখান। ওই সিপিসিতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। উত্তেজিত কৃষকরা সেন্টারে ভাঙচুর চালাবার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। যদিও পরে মালদহ থানার পুলিস এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। খাদ্য দপ্তরে আধিকারিকদের বক্তব্য, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ওই কেন্দ্রে সমস্যা হয়েছে। তবে জেলাজুড়ে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু রয়েছে।
এবিষয়ে জেলা মহকুমা খাদ্য নিয়ামক প্রণব দে বলেন, প্রতিটি সিপিসিতে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চলছে। পুরাতন মালদহের বিষয়টি আমার জানা নেই। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সমস্যা হলেও হতে পারে।
পুরাতন মালদহ সেন্ট্রালাইজড প্রকিউরমেন্ট সেন্টারের ইনচার্জ কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, এদিন সাড়ে এগারোটার পর থেকেই হার্ডডিক্স খারাপ হয়ে যায়। তাই রেজিস্টশন কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল। সেসময়ে কিছু কৃষক উত্তেজনা তৈরি করেন। যদিও পরে আমরা রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করে দিয়েছি।
কৃষকদের অভিযোগ, রেজিস্ট্রেশন করাতে এসে সকাল থেকে লম্বা লাইন দিতে হচ্ছে। অথচ অনেক সময়ই রেজিস্ট্রেশন না করিয়েই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। এদিনও অনেকে বাধ্য হয়ে ফিরে গিয়েছেন। রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকায় এধরনের সমস্যা হচ্ছে। এদিকে ব্লকে ব্লকে সিপিসিগুলিতে ভিড় বাড়ছে। অনেক কৃষক সকাল থেকে লাইন দিয়ে ভিড়ের চাপে রেজিস্ট্রেশন না করিয়েই বাড়ি ফিরছেন। এনিয়ে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ জমছে।

পুরাতন মালদহের নবাবগঞ্জের এক কৃষক এনামুল হক বলেন, সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। কম্পিউটার খারাপ থাকার কারণে রেজিস্ট্রেশন আটকে রয়েছে। কখন ঠিক হবে জানা নেই। কয়েকদিন ধরেই ঘুরছি। ভিড়ের কারণে রেজিস্ট্রেশন করাতে পারিনি। এদিন এসেও দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি রাখলে আমাদের সুবিধা হয়।
বিক্ষুব্ধ কৃষকরা বলেন, সিপিসি তে ভাঙচুরের চেষ্টা হয়নি। আমরা রেজিস্ট্রেশন করাতে গেলে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগে পড়ি। সেই সময় দায়িত্বপ্রাপ্তদের দ্রুত রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু করার জন্য আবেদন করেছিলাম। মালদহ থানার পুলিস জানিয়েছে, সাময়িক উত্তেজনা হয়েছিল যদিও পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে।
জেলা খাদ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি নভেম্বর মাস থেকেই ধান কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জেলা জুড়ে মোট ১২টি সেন্ট্রালাইজড প্রকিউরমেন্ট সেন্টারে সরকারি উদ্যোগে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। সিপিসি গুলোতে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া জোরকদমে চলছে। যে সমস্ত কৃষক কৃষকবন্ধু প্রকল্পভুক্ত রয়েছেন তাঁদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য কেবলমাত্র এপিক কার্ড আনতে হয়। যারা কৃষকবন্ধুর আওতার বাইরে রয়েছেন, তাঁদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে। রেজিস্ট্রেশন হওয়ার পরে কৃষকরা ধান বিক্রি করতে পারবেন। তার বিনিময় চেকের মাধ্যমে সরকারি মূল্য কৃষকরা পাবেন। যদিও বিভিন্ন কেন্দ্রগুলিতে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় কৃষকরা হোঁচট খাচ্ছেন বলে অভিযোগ। এদিন পুরাতন মালদহ সিপিসিতে হার্ডডিক্স বিকল হয়ে যাওয়ায় সকাল সাড়ে ১১ থেকেই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। সারা দিনে মাত্র চারজন কৃষক রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছেন।