পারিবারিক সম্পত্তি বিভাজনে আইনি চাপ বাড়তে পারে। কাজকর্মে যোগাযোগের অভাবে বিঘ্ন। ... বিশদ
কর্ণাটকের অতি ক্ষুদ্র একটি সম্প্রদায় ‘গুডিগার’। কন্নড় ভাষায় যার অর্থ—‘মন্দিরের কারিগর।’ চন্দন কাঠ ও হাতির দাঁতের উপর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তোলার দক্ষতায় গুডিগারদের জুড়ি মেলা ভার। তেমনই এক শিল্পীর নাকি নাড়ির টানে জড়িয়ে কলকাতা! শুনে চমকে উঠতে হয়। সত্যিই জগদীশের পূর্বপুরুষরা একসময় শস্যশ্যামলা বাংলারই বাসিন্দা ছিলেন। থাকতেন খাস কলকাতার উপকণ্ঠে। পরে ভাগ্যান্বেষণে জাহাজে চেপে সপরিবারে তাঁরা পাড়ি জমান গোয়ায়। সেখানে তখন পর্তুগিজ শাসন। তাদের নির্মম অত্যাচার সইতে না পেরে আবার পথকেই বেছে নেওয়া। সেখান থেকে কর্ণাটকে। তারপর কুমটা, সিরশি, হুন্নাভার ঘুরে থিতু হওয়া এই সাগরে। সেও বহু বছর আগের কথা। বর্তমানে সাগরে কমবেশি দেড়শো পরিবারের বাস। জগদীশ আজন্ম এখানেই মানুষ। কলকাতায় যাননি কখনও। তবু কলকাতার নামে তাঁর জিয়া নস্টাল। খোঁজখবর রাখেন ভালোই। দিদি-মোদির লড়াইয়ের কথাও জিজ্ঞাসা করলেন।
তারপর আবার ফিরে গেলেন নিজের দুনিয়ায়। শোনালেন গুডিগারদের কথা। মূলত কাঠ ও পাথরের উপরই এখন পুরাণ ও ইতিহাসের নানা অধ্যায়কে ফুটিয়ে তোলেন এই শিল্পীরা। কারণ, হাতির দাঁত নিষিদ্ধ। চন্দন কাঠের সরবরাহও কম। কর্ণাটক রাজ্য হস্তশিল্প উন্নয়ন নিগমের সুবাদে কিছু চন্দন কাঠ মিললেও তা যথেষ্ট নয়। ফলে অন্যান্য কাঠকেই বেছে নিতে হয়েছে তাঁদের। কীভাবে হয় কাজ? জগদীশ জানালেন, ‘এই ধরনের সূক্ষ্ম কাজের জন্য কাঠ হতে হয় নরম। সেগুলিকে বিভিন্ন আকারে কেটে, উপরে পেনসিল দিয়ে ছবি এঁকে নেওয়া হয়। এবার শুরু হয় খোদাই। কাজটা সময়সাপেক্ষ। তবে একটা কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, যত উন্নতমানের যন্ত্রই আসুক না কেন, গুডিগারদের এই দক্ষতাকে পাল্লা দিতে পারবে না। অশোক গুডিগার, জেড মঞ্জুনাথপ্পারাই তার প্রমাণ।’
এটা অত্যুক্তি যে নয়, তার সাক্ষী ইতিহাস। মাইসুরু প্রাসাদ ও সেখানকার চারতলার ছাদের বেশিরভাগ কাঠের কাজ, ইক্কেরি, কেলাদি, টোগারসি, হুনচাদাকাত্তের একাধিক মন্দিরের ভাস্কর্যে গুডিগারদের দক্ষতার ছাপ স্পষ্ট। শিল্পীদের মধ্যে কম হলেও রয়েছেন মহিলারাও। তাঁরা চন্দন কাঠের মালা তৈরির জন্য বিখ্যাত। কর্ণাটকের উত্তরাংশে পাথরের গায়ে কারুকীর্তি খোদাই অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু সেকাজে শিল্পীর সংখ্যা বর্তমানে বেশ কম। নতুন প্রজন্মকে ঐতিহ্যশালী এই পেশায় উৎসাহ দিতে সরকারের তরফে দু’বছরের সার্টিফিকেট কোর্স শুরু হয়েছে। সাড়াও মিলেছে।