বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: স্বরাষ্ট্র দপ্তরের পদস্থ আমলার পুত্রের ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুদিন আগেই বলেছিলেন, যে যতই প্রভাবশালী হন না কেন, করোনা সংক্রমণ এড়াতে সকলকে আইন মানতে হবে। এবার খোদ স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রবল প্রভাবশালী ‘চিকিৎসক-বিজ্ঞানী’ ডাঃ নীরঞ্জন ভট্টাচার্যের ক্ষেত্রেও করোনা চিকিৎসায় প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠল। স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর জেনারেল নীরঞ্জনবাবু সম্প্রতি নিজের গবেষণা সংক্রান্ত বক্তব্য রাখতে আমেরিকা, ইংল্যান্ড সহ বেশ কয়েকটি প্রথম বিশ্বের দেশে যান। দিনকয়েক আগে শহরে ফেরেন। করোনা আক্রান্ত দেশফেরত বলে তাঁকে বিমানবন্দর থেকে সোজা নিউটাউনে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তথা রাজ্যের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যেতে তীব্র অনিচ্ছা প্রকাশ করা থেকে শুরু করে, নিয়ে যাওয়ার পর খাওয়া-দাওয়া, থাকা, বাথরুম সব বিষয়েই ঘণ্টায় ঘণ্টায় স্বাস্থ্য দপ্তরের শীর্ষ কর্তা এবং প্রভাবশালী মন্ত্রীদের নীরঞ্জনবাবুর ফোন করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। এমনকী সেখানে তাঁকে না রেখে গৃহবন্দি করে রাখার জন্যও চাপ দিয়েছেন বলে খবর। শুধু তাই নয়, কোয়ারেন্টাইনের নিরামিষ খাবার তাঁর মুখে রুচছে না বলে বিশেষ বন্দোবস্ত করার অনুরোধও জানিয়েছেন সকাল-সন্ধ্যায় নোবেল প্রাপকদের সঙ্গে স্কাইপিতে যোগাযোগ রাখেন বলে দাবি করা নীরঞ্জনবাবু। যদিও তাঁর মতো একজন বিজ্ঞানী আন্তর্জাতিক মহামারীর সংক্রমণ এড়াতে তৈরি জাতীয় আইন কানুন না মানার পক্ষে ওকালতি করে ফোন করছেন শুনে অনেকেই বিস্মিত।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ অজয় চক্রবর্তী, শ্রম প্রতিমন্ত্রী নির্মল মাজি এবং সেক্রেটারিয়েটের সচিব পর্যায় সহ একাধিক আধিকারিক এই ধরনের প্রভাব খাটানোর ফোন পেয়েছেন বলে দপ্তর সূত্রের খবর। এমনকী তাঁর থাকা-খাওয়ার অসুবিধা দূর করতে, তাঁর ঘরে যাতে উটকো লোক বেশি না ঢোকে, সেজন্য এক পদস্থ কর্তা খোদ কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পর্যন্ত গিয়েছিলেন, এমনই খবর।
রবিবার যোগাযোগ করা হলে নীরঞ্জনবাবু প্রভাব খাটানোর ফোন করার কথা অস্বীকার করেন। যদিও বলেন, কোথায় আমেরিকার সেরা হোটেল, কোথায় নিউটাউনের এই কোয়ারেন্টাইন সেন্টার! সেরা সেরা জায়গায় গিয়েছিলাম, থেকেছিলাম, ভাষণ দিয়েছিলাম। আর এখন এখানে থাকতে হচ্ছে। কী আর করব! তাঁর ফোন প্রসঙ্গে শ্রম প্রতিমন্ত্রী তথা মেডিক্যালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ডাঃ নির্মল মাজি বলেন, ওঁকে আমি বলেছি, এ কি তোমার বাড়ি যে রাজভোগ খাওয়াব! সকাল-সন্ধ্যা ফোন করছে। নিরামিষ রান্না নাকি ভালো লাগছে না। আরে বাবা, ৬৭ বছর বয়স হয়েছে, খাওয়া দাওয়ার লোভ একটু কমাতে হবে বৈকি। এই বয়সে করোনার কবলে পড়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।