যে কোনও ব্যবসায় অগ্রগতি আশা করা যায়। মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের কর্মের প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে সমস্যা হতে ... বিশদ
দু’জনের মধ্যে ব্যক্তিগত যোগাযোগ দূর, পরিচয়ও নেই। ভোটের নিরিখে তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বী না হলেও দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছেই। বয়স বা প্রজন্মের তফাতও বিস্তর। সামাজিকভাবে দু’জনের মধ্যে বিভেদ আছে। সেই যাবতীয় বিভেদে ঐক্য এনেছে আলুপোস্ত। রচনা এমনিই হাসেন। আলুপোস্তর কথা শুনে হাসি আরও চওড়া করে বলেন, ওনিয়ে ঘটি ও বাঙাল একটা লড়াই আছে। কিন্তু আমি আলুপোস্তর ভক্ত। খুব ভালোবাসি। সদ্য সিঙ্গুরে চেটেপুটে খেয়েছি। দীপ্সিতাও হাসছেন। তবে লাজুক মুচকি হাসি। বললেন, প্রায়ই আলুপোস্ত খাই। পুরো ভাত সাবাড় করে দিতে পারি। পছন্দটা কমরেডরা জেনে গিয়েছেন। তাই পাত পেড়ে বসলে আলুপোস্ত থাকছেই।
মিলছে ডান-বাম। মিলছে আরও অনেককিছু। ইতিহাসের সঙ্গে মিলছে ভূগোল, জুড়ছে দেশ ও বিদেশ। জুড়ছে এপার এবং ওপার বাংলা। জেলার নাম হুগলি বলেই গল্পটা আরও একপ্রস্থ মিলনান্তক। ইতিহাস বলে, রাজ্যের হুগলিতেই প্রথম আলুচাষের রমরমা শুরু হয়েছিল। যোগ ছিল পর্তুগীজ আর ইংরেজের। পোস্তর সঙ্গেও আছে পর্তুগীজ আর ইংরেজের যোগ। আর হুগলি? সেও তো প্রথমে পর্তুগীজ পরে ইংরেজদের কলোনি। শুধু রান্নার উপকরণ হিসেবে পোস্তর ব্যবহার এদেশে মুঘল বাদশা হুমায়ুনের কালে। তখন আরব বণিকদের হাত ধরে এদেশে পোস্ত আসত। তারপর পপি গাছ, যা থেকে পোস্তদানার জন্ম তা নিয়ে আফিম তৈরি, আফিম যুদ্ধ, সবেতেই জুড়ে আছে বাংলার নাম। আর ‘আলুপোস্ত’ পদের জন্ম এই সেদিন, উনিশশতকে। আলু থেকে ঝিঙে হয়ে পোস্ত তার মায়া ছড়িয়েছে অনেকদূর। প্রজ্ঞাসুন্দরীদেবী থেকে বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায়ের রান্না বিষয়ক বইয়ের মাধ্যমে আলুপোস্ততে এসেছে বিভেদও। তিন ফোড়ন না পাঁচ ফোড়ন, দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে এপার আর ওপার বাংলা। আবার মিলেও গিয়েছে ফোড়ন ছাড়াই আলুপোস্ত রেঁধে।
মনপ্রীত জানেজা নামে একজন লেখক খাবারের সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, বাঙালির আলুপোস্ত প্রেমের সঙ্গে জুড়ে আছে ভাতঘুমের টান। যদিও রচনা ও দীপ্সিতা বলছেন, আলুপোস্ত মানে ভালোলাগা। তাতেই এই তীব্র দহনে ছোটার শক্তি পাচ্ছি। সত্যিই ছুটছেন দু’জনেই। আলুপোস্তে মিলে যাচ্ছেন এবং মেলাচ্ছেন।