মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযো ... বিশদ
বেজিংয়ের অন্যতম আকর্ষণ তিয়েন আনমেন স্কোয়্যার। ১৯৮৯ সালের ছাত্র বিক্ষোভের কেন্দ্রভূমি ছিল ৪৪ হেক্টর বিস্তৃত পাথর বাঁধানো ৮৮০ মিটার লম্বা ও ৫০০ মিটার চওড়া দুনিয়ার সর্ববৃহৎ চত্বরটি। এই স্কোয়্যারের চারপাশে রয়েছে অ্যারোমিনার, চুং ইয়াং ফ্রন্ট গেট, ন্যাশনালওয়ার মেমোরিয়াল মনুমেন্ট, অপেরা হাউস, জাতীয় সংগ্রহশালা, মাও মেমোরিয়াল আর বিখ্যাত দ্য গ্রেট হল অব দ্য পিপল। শেষেরটি দেশের সংসদ ভবন। লাগোয়া সম্মেলন মঞ্চে ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়।
তিয়েন আনমেন স্কোয়্যারের গায়েই মিং রাজাদের প্রাসাদ ফরবিডেন সিটি। এরই একটি প্রবেশদ্বারের নাম চেয়ারম্যান গেট। ৭২ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই বিশাল প্রাসাদ অঞ্চল দৈর্ঘ্যে ৯১৬ মিটার আর প্রস্থে ৭১৬ মিটার। ভিতরে হেঁটে হেঁটে দেখতে হবে একাধিক শিল্পমণ্ডিত প্রাসাদ, মহল। ভিতরে চৈনিক বর্ণাঢ্য শিল্পকলা বিস্ময়ে হতবাক করে। মিং ও কিউয়ং রাজারা ১৯১১ সাল পর্যন্ত এখান থেকে দেশ শাসন করেছিলেন। এই প্রাসাদপুরী তৈরিতে শ্বেতপাথর আর উজ্জ্বল হলুদ ও লাল রঙের ব্যবহার চোখ টানে। শহরের মধ্যে রয়েছে ১৪ শতকে তৈরি প্যাগোডাকৃতির টেম্পল অব হেভেন। এটি সেকালে ছিল সম্রাটদের প্রার্থনা স্থল।
বেজিংয়ে অবশ্যই দেখবেন পুরনো পাড়া হুটং। সরু গলিপথের দুধারে বস্তির মতো ছোট ছোট বাড়িঘর, দোকানপাট, মন্দির নিয়ে এইসব পুরনো পাড়ায় আজও স্থানীয়দের বসবাস। রয়েছে চীনা খাবারের রেস্তরাঁ। সাজানো সাইকেল রিকশয় চেপে হুটং অঞ্চলে ঘুরতে ভালো লাগবে। শহরে রয়েছে রাজ আমলের কয়েকটি উদ্যান আর হ্রদ। যার মধ্যে বিহাই হ্রদ লাগোয়া পার্ক, জিংসান পার্ক, শিশাহাই হ্রদ উল্লেখযোগ্য। সবুজে সাজানো বাগানগুলি বৈচিত্র্যময়। গ্রীষ্মে সেখানে রঙিন ফুলের বাহার। আধুনিক স্থাপত্য কলার অনবদ্য নিদর্শন অলিম্পিক পার্ক। সেখানে মুখ্য দ্রষ্টব্য বার্ড নেস্ট অলিম্পিক স্টেডিয়াম।
শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে কুনমিং হ্রদের ধারে ১১ শতকে গড়ে উঠেছিল সামার প্যালেস। ৩ বর্গকিমি বিস্তৃত বাগানে ঘেরা এই প্রাসাদে জিনবংশের সম্রাট শিয়ান থেকে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। হ্রদের ধারে কয়েকটি টিলা পাহাড়ও রয়েছে।
চীনে এসে চীনের প্রাচীর দেখতে যেতেই হবে। ২২০ খ্রিস্টপূর্বে এই প্রাচীরের নির্মাণকাজ শুরু হয়। তবে প্রাচীনকালের প্রাচীরের সামান্য অংশই অবশিষ্ট রয়েছে। ১৩ শতকে মিং রাজাদের আমলে ইট, কাঠ, পাথর দিয়ে আরও মজবুত করে এই নতুন রূপে প্রাচীরটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। চীনের উত্তরপ্রান্ত আর মোঙ্গোলিয়ার দক্ষিণপ্রান্ত ছুঁয়ে আছে এই প্রাচীর। উত্তর বেজিংয়ের বাদালিং, মুতিয়ানিউ, সিমাতাই আর জিনশান লিং এই চারটি স্থান থেকে ভালোভাবে চীনের প্রাচীরকে দেখা যায়। চীনের প্রাচীর দেখতে পর্যটক সমাগম বেশি হয় বেজিং থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরের বাদালিং অঞ্চলে। বাদালিং থেকে কেবলকারে চেপে প্রাচীরের উপর পৌঁছে এরপর হেঁটে ঘোরা যায় প্রাচীরের অনেকটা অংশে। পাহাড়ের গা বেয়ে ছড়িয়ে রয়েছে ৬৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিস্ময়কর এই প্রাচীর। বেজিং থেকে বাদালিং যাত্রাপথে দেখবেন মিং রাজাদের সমাধিক্ষেত্র মিং টম্ব। বেজিংয়ে অবশ্যই দেখবেন অ্যাক্রোব্যাটিক শো ও পিকিং অপেরা শো।
প্রয়োজনীয় তথ্য
দিল্লি থেকে সরাসরি বিমান যাচ্ছে বেজিং। কলকাতা থেকে বিমানে কুনমিন পৌঁছে আবার সেখান থেকে বিমান বদলে বেজিং যাওয়া যায়। গ্রীষ্মে চীন ভ্রমণে হালকা শীতপোশাক প্রয়োজন। ভিসা কলকাতা থেকেই করিয়ে নিন। চীনের মুদ্রা ইউয়ান। স্থানীয় সময় ভারতের থেকে আড়াই ঘণ্টা এগিয়ে। চীনে খাবার সমস্যা থাকলেও জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট সিটিতে ভারতীয় খাবারের রেস্তরাঁ পাবেন। শপিংয়ের ক্ষেত্রে এই দেশেও দরদাম করা যায় অনেক বাজারে।
বুলেট ট্রেনে সাংহাই
চীন ভ্রমণে অন্যতম আকর্ষণ দ্রুতগামী বুলেট ট্রেন সফর। বেজিং থেকে এই ট্রেনে চেপে চলুন বন্দরনগরী সাংহাই। শপিং ডেস্টিনেশন হিসেবেও এই শহরের খ্যাতি রয়েছে। আধুনিকতার জৌলুসে মোড়া ছবির মতো সুন্দর শহর। এখানে দেখবেন জেড বুদ্ধ টেম্পল, পিপলস স্কোয়্যার, ইউগার্ডেন, শপিং স্ট্রিট প্রভৃতি দ্রষ্টব্য। শহরকে দু’ভাগ করে বয়ে চলেছে হোয়াং ফু নদী। নদীর দুই তীরের বান্দও পুদং চওড়া রাস্তা, পার্ক, বাগান, অসাধারণ স্থাপত্যের সমাহারে সাজানো। সন্ধেবেলা রঙিন আলোয় ঝলমলে হয়ে ওঠে।
পছন্দের ভ্রমণসূচি
প্রথম দিন- কলকাতা থেকে কুনমিং বা দিল্লি হয়ে বেজিং পৌঁছন।
দ্বিতীয় দিন- বেজিং শহর দর্শন। সন্ধেবেলা দেখুন অ্যাক্রোব্যাটিক শো।
তৃতীয় দিন- মিং টম্ব আর চীনের প্রাচীর দর্শন। সন্ধেতে দেখবেন পিকিং অপেরা।
চতুর্থ দিন- বেজিং থেকে বুলেট ট্রেনে সাংহাই পৌঁছন। সন্ধেতে নদীতে জলবিহার।
পঞ্চম দিন- সারাদিন সাংহাই ঘুরে দেখুন।
ষষ্ঠ দিন- সাংহাই থেকে বিমানে কুনমিং হয়ে কলকাতা ফিরুন।