সংবাদদাতা, হলদিয়া: নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পর হলদিয়া পুরসভার দায়িত্ব মহকুমা শাসক ও প্রাক্তন পুর কাউন্সিলারদের নিয়ে গঠিত ‘বোর্ড অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর’-এর হাতে দেওয়ার জল্পনা শুরু হয়েছে। সোমবার নবান্নে পুরসভাগুলিকে নিয়ে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় এমন ইঙ্গিত মিলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। পুরবোর্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর যে সমস্ত পুরসভায় মহকুমা শাসকদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল, সেখানে কাউন্সিলারদের নিয়ে ভাবনাচিন্তার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই হলদিয়া পুরসভায় বোর্ড অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগের জল্পনা শুরু হয়েছে। ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষের পর হলদিয়ার মহকুমা শাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়কে পুর প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ২১ মাস ধরে প্রশাসক হিসেবে পুরসভা চালাচ্ছেন মহকুমা শাসকই। ওই সময়কালে পুর পরিষেবা নিয়ে কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি পুরসভায় বিক্ষোভ করেছে, ডেপুটেশন দিয়েছে। শাসকদল হওয়ায় তৃণমূল পুরসভায় বিক্ষোভ না দেখালেও বিভিন্ন ফোরামে নেতারা উষ্মা প্রকাশ করেছেন। 
লোকসভা নির্বাচনের সময় পুরসভা নিয়ে পর্যোলোচনা করতে গিয়ে প্রাক্তন কাউন্সিলাররা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পুরসভার কাজকর্ম ও প্রশাসকের সমালোচনা করেছেন। এরপর লোকসভা ভোটের ফলাফলে হলদিয়া পুর এলাকায় তৃণমূল ১৪ হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়ার পর থেকেই প্রশাসককে নিয়ে গুঞ্জন তীব্র হয়। হলদিয়ায় তৃণমূলের নেতৃত্ব বদলের পাশাপাশি সরকারি প্রশাসকের ঘাড়ে কোপ পড়ার আশঙ্কা করছিল রাজনৈতিক মহল। জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পুর পরিষেবা নিয়ে ভূরি ভূরি অভিযোগ জমা পড়েছে। পুর পুরষেবা নিয়ে হলদিয়ার মানুষের বিরক্তিই লোকসভা ভোটের রেজাল্টে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। সোমবার পুর বৈঠকের সময় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী হলদিয়ার মহকুমা শাসক তথা পুর প্রশাসককে ‹শোকজ› করার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে প্রাক্তন কাউন্সিলারদের নিয়ে কী করা যায় তা নিয়ে পুরদপ্তরকে আলোচনা করতে বলেন। মুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত দেওয়ার পরই হলদিয়ায় বোর্ড অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর গঠন এবং পুরভোট নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। হলদিয়া পুরসভায় ২০১৭ সালে একবার বোর্ড অব অ্যাডমিনিস্ট্রটর থাকলেও সেখানে কোনও কাউন্সিলার ছিলেন না। মহকুমা শাসক ও তৎকালীন সাংসদকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল প্রশাসক বোর্ড। 
এবার প্রাক্তন কাউন্সিলারদের নিয়ে হলদিয়ায় প্রশাসক বোর্ড তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পুর প্রশাসন চালানোর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার পাশাপাশি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এবং জনসংযোগে পটু এমন তিন চারজনকে নিয়ে তৈরি হবে ওই বোর্ড। সেখানে প্রাক্তন পুর চেয়ারম্যান, পুর পারিষদ বা কাউন্সিলারদের মধ্যে দল কাকে বেছে নেয় তা নিয়ে মঙ্গলবার দিনভর চর্চা চলেছে হলদিয়ায়। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, হলদিয়ায় এই নয়া প্রশাসক বোর্ড গঠন করা বেশ কঠিন কাজ। হলদিয়ায় তৃণমূলের অন্দরে প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই ২১ মাস আগে নেতাদের না বসিয়ে মহকুমা শাসককে প্রশাসক পদে বসানো হয়েছিল। ভোটের ফল প্রকাশের পর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়েছে। তবে হলদিয়ার প্রাক্তন পুর চেয়ারম্যান সুধাংশু মণ্ডল মনে করেন, প্রাক্তন কাউন্সিলারদের নিয়ে প্রশাসক বোর্ড তৈরি করে কয়েকমাস পর হলদিয়ায় পুরভোট হলে ভালো ফলাফল হতে পারে। তিনি বলেন, পাঁশকুড়ায় প্রশাসক বোর্ড থাকলে হলদিয়ায় কেন হবে না? এর ফলে কাউন্সিলারদের সঙ্গে মানুষের সংযোগ তৈরি হবে। একই বক্তব্য আর এক প্রাক্তন পুর চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডলের। তিনি বলেন, পুর এলাকার নেতারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়াতেই ভোটে খারাপ ফল হয়েছে। প্রশাসক বোর্ড গড়ে প্রথমে মানুষের আস্থা ফেরাতে হবে। হলদিয়া পুরসভা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। তবে বিরোধীদের বক্তব্য, তৃণমূল হেরে যাওয়ার ভয়েই পুর ভোট করছে না। এখন বিপাকে পড়ে দলের নেতাদের বাঁচাতে মহকুমা শাসককে টার্গেট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।