হঠাৎ জেদ বা রাগের বশে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া শ্রেয়। প্রেম-প্রীতির যোগ বর্তমান। প্রীতির বন্ধন ... বিশদ
এ রাজ্যে গত আর্থিক বছরে আয়কর আদায় কম ছিল গোড়া থেকেই। দপ্তরের কর্তারা বলেন, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওয়া হিসেব মেলাতে গিয়ে তাঁরা দেখেন, যে পরিমাণ আয়কর আদায় হয়েছে, তা তার আগের বছরের ওই সময়ের নিরিখে বেড়েছে মাত্র ৭.৭ শতাংশ। অথচ গোটা দেশে সেই বৃদ্ধির হার তখন ছিল ১৩.৩ শতাংশ। আয়কর আদায়ে কোপ পড়ায় চোখ কপালে ওঠে দিল্লিরও। পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে দিল্লির সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস বা সিবিডিটি। করের ঘাটতি মেটাতেই সেই সময় টার্গেট করা হয় কলকাতা সহ রাজ্যের বড় পুজোগুলিকে।
কীভাবে কর দেওয়ার কথা পুজো কমিটিগুলির? দপ্তরের কর্তাদের কথায়, কমিটিগুলি মণ্ডপ তৈরির জন্য যেমন বাইরের কোনও সংস্থাকে বরাত দেয়, তেমনই তারা প্রতিমা তৈরির জন্যও পেমেন্ট করে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা ব্যক্তিকে পেমেন্ট করার আগে ১ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত টাকা টিডিএস বাবদ কেটে নিতে হয় কমিটিগুলিকে। তার জন্য ট্যাক্স ডিডাকশন অ্যান্ড কালেকশন অ্যাকাউন্ট নম্বর বা ট্যান থাকতে হয় কমিটিগুলির। সেই ট্যানের সাপেক্ষে ওই টাকা জমা করতে হয় আয়কর দপ্তরে। দপ্তরের কর্তাদের বক্তব্য, সেই টাকা সঠিকভাবে জমা হয়েছে কি না, সেটাই তাঁরা খতিয়ে দেখতে চান। সেই বিষয়ে দপ্তরের তরফে চিঠি ধরানো হয় একাধিক বড় পুজোকে। তাতেই সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীরা।
শাসকদল প্রচার করতে শুরু করে, কেন্দ্রে তুঘলকি সরকার চলছে। যে দেশে মেহুল চোকসি, বিজয় মালিয়ারা মোটা টাকা গায়েব করে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করে বাংলার পুজো নিয়ে পড়েছে কেন্দ্র, অভিযোগ করেন মন্ত্রীরা। তাঁদের মতে, দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে বাংলার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়, বিদেশি পর্যটক আসেন। ব্যবসা হয়। সেই পুজোকেই চক্রান্ত করে বন্ধ করতে চাইছে কেন্দ্র। তাঁরা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পুজো কমিটিগুলির ঘনিষ্ঠতা থাকার কারণেই কমিটিগুলির বিরুদ্ধে কেন্দ্রের এই আক্রোশ। সেই সমস্যা নিয়ে গত মাসে ফের সরব হন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। পুজোগুলিকে হেনস্তা করার অভিযোগ এনে ফের কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তোলেন।
এরপরই বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে দিল্লি। দপ্তরের কর্তাদের কথায়, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, সেখানে দপ্তরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। দপ্তর তা চায় না। সেই কারণেই দপ্তরের তরফে কোনও খামতি রয়ে গেল কি না, তা ফিরে দেখতে চাইছে দপ্তর, বলছেন কর্তারা। সেই কারণেই চাওয়া হয়েছে রিপোর্ট। গত মাসেই পুজো উদ্যোক্তাদের কয়েকজনকে ডেকে পাঠায় আয়কর দপ্তর। তাঁদের আয়কর সংক্রান্ত বিষয়গুলি ফের একবার জানিয়ে দেওয়া হয়। হেনস্তা বা জুলুম করার যে কোনও প্রশ্ন নেই, সেই আভাসই দেন কর্তারা। পুজো ও আয়কর দপ্তরের মধ্যে যে কোনও বৈরিতা নেই, তা বোঝানো হয়। বিষয়টি নিয়ে দপ্তরও আপাতত কোনও দৃঢ় পদক্ষেপের পথে হাঁটবে না, তেমনটাই বলা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন কর্তারা।