যে কোনও ব্যবসায় অগ্রগতি আশা করা যায়। মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের কর্মের প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে সমস্যা হতে ... বিশদ
মানেকা গান্ধী সুলতানপুর থেকে প্রার্থী। তাঁর সঙ্গে দেখা করা যায় কীভাবে? তিনি এখন কোথায় আছেন? কথায় কথায় এই প্রশ্ন করতেই উমাশঙ্কর ফোন ঘোরালেন। স্পিকার অন। ফোনে কারও থেকে জেনে নিলেন মানেকার ব্যক্তিগত সচিবের নম্বর। পান মশলার আড়ালে হেসে বললেন, ম্যাডাম আজ রিমোটে। এহেন স্মার্ট উমাশঙ্কর দুবের মুখ ভার হয়ে যায় আমেথির ভোটের কথা এলে। কেন? বললেন, ‘আমেথির বিজেপি তো বাইরের লোকের হাতে চলে গিয়েছে। আমাদের আর গুরুত্ব নেই। ৩০ বছর ধরে বিজেপি করি। আমার দাদাজি স্বামীনাথ দুবে বাজপেয়ীজির সঙ্গে বিজেপি করতেন। গত মাসে দাদাজি মারা গেলেন। একটা নেতাও এল না! আমেথিতে ২০১৯ সালে স্মৃতি ইরানি জেতার পর পুরনো বিজেপি মুছে যাচ্ছে। এখন নতুন বিজেপি। পুরনো বিজেপি নেতা-কর্মীদের অপমান করা হয়।’
আমেথির প্রধান ইস্যু কংগ্রেস বনাম বিজেপি নয়। নতুন বিজেপি বনাম আদি বিজেপি। পুরনো বিজেপি এবার নতুন বিজেপিকে ভোট দেবে না। ঘরে বসে আছে। ফুরসতগঞ্জ, মোহনগঞ্জ, কেসরিয়া, তিলোই, শঙ্করগঞ্জ, জগদীশপুর, ইত্যাদি আমেথির প্রতিটি প্রান্তে একটাই চর্চা—‘রাহুল কিংবা প্রিয়াঙ্কা প্রার্থী হলে তো প্রশ্নই ছিল না। আমেথিতে এবার স্মৃতি ইরানি হেরে যেতেন। এমনকী প্রিয়াঙ্কার স্বামী রবার্ট ওয়াধেরা প্রার্থী হলেও ঝড় উঠত।’ কেন? স্মৃতি ইরানি যা ঘোষণা করেছিলেন, তার কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। বেকারত্ব মূল্যবৃদ্ধি তো আছেই, আমেথির যেটুকু শিল্প সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, সেও বিশ বাঁও জলে। স্মৃতি ইরানি জিতলেন কেন ২০১৯ সালে? কারণ একটাই। গান্ধীদের উদাসীনতা। আমেথি-রায়বেরেলিকে তাঁরা পারিবারিক জায়গীরদার ভেবে এসেছেন। তাই বছরে কতদিন আসতেন? কখনও কখনও একদিনও না। অথচ স্মৃতি ইরানি কিন্তু ২০১৪ সালে পরাজয়ের পর মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন। গ্রামে গ্রামে গিয়েছেন। যোগাযোগ রেখেছেন। তাই তিনি রাহুলকে হারিয়ে জায়ান্ট কিলার। এখন কি তাঁকে হারানো অতই সহজ?
সহজ নয়। একথা ফুরসতগঞ্জ অথবা মোহনগঞ্জের কংগ্রেস কর্মীরা বিশ্বাস করেন। কিন্তু আশার আলো একেবারেই যে নেই, তা নয়। কী সেটা? জাতপাতের সমীকরণ। এই প্রথম আমেথি এবং রায়বেরেলিতে দেখা যাচ্ছে ‘ইন্ডিয়া’র শক্তি। অখিলেশ যাদব দুই কেন্দ্রেই এসে দলের কর্মীদের বলে দিয়েছেন—‘মরিয়া হয়ে ঝাঁপাও। মনে করবে সাইকেলই লড়ছে।’ অর্থাৎ সমাজবাদীর প্রতীক। আর অখিলেশের সেই আহ্বানে সাইকেল এবং হাতের জোটবন্ধন এবার প্রকট। তারই ফলশ্রুতি, ব্রাহ্মণ, মুসলিম, যাদবের একটি আশ্চর্য ভোটব্যাঙ্কের এককাট্টা হওয়া। কংগ্রেস প্রার্থী কিশোরীলাল শর্মা একদিকে যেমন গান্ধী পরিবারের ঘরের লোক, তেমনই আবার ব্রাহ্মণ। আবার অখিলেশের একনিষ্ঠ ভোটব্যাঙ্ক যাদব এবং মুসলিম। সুতরাং এই ভোটব্যাঙ্কের পাশাপাশি কিশোরীলাল শর্মা ব্রাহ্মণ ভোটও পাবেন। কেন পাবেন? নিজে ব্রাহ্মণ বলেই? না। আরও গভীর এক সমীকরণ। যোগী আদিত্যনাথের রাজত্বে উত্তরপ্রদেশজুড়ে ঠাকুর কাস্টের প্রবল রমরমা। কারণ তিনি নিজে ঠাকুর। প্রশাসন এবং বিজেপিতে ঠাকুরদের এই দাপট দেখে বিজেপির নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক, অর্থাৎ অন্য উচ্চবর্ণরা বিরক্ত, ক্ষুব্ধ। অতএব সেই ভোটব্যাঙ্কের কিয়দংশ ব্রাহ্মণ আমেথিতে নিজেদের জাতিগত প্রার্থী কে এল শর্মাকেই ভোট দেবেন। তাছাড়া সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারে রাহুল-প্রিয়াঙ্কা-সোনিয়ার লাগাতার আবেগঘন আহ্বান আমেথিকে দুর্বল করছে। গ্রামগঞ্জে সেটা স্পষ্ট। উনিশে স্মৃতি ইরানি অসাধ্য সাধন করেছেন বটে, কিন্তু এবার তাঁকে সবথেকে বেশি ভাবাচ্ছে জাতিগত সমীকরণ এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আগ্রাসী প্রচার।
প্রিয়াঙ্কা ঝড় বারবার স্মৃতি ইরানিকে যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে—একটা নির্বাচনের জয়ই শেষ নয়। ভাববেন না আমরা পালিয়ে গিয়েছি... আমেথি থেকে আমরা পালাই না। ‘কিঁউ কি আমেথি ভি কভি গান্ধী থি!’