হঠাৎ জেদ বা রাগের বশে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া শ্রেয়। প্রেম-প্রীতির যোগ বর্তমান। প্রীতির বন্ধন ... বিশদ
আমরা জানি সিনেমা বা থিয়েটার, অন্যতম সেরা জনমাধ্যম। এরাই সমাজ দর্পণ। সমাজের বুকে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে সাধারণের হয়ে। সৎ-অসতের বিভাজন, অন্যায়ের প্রতিবাদের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে সময়ে সময়ে। বর্তমানের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সেই কাজটাই করে দেখাল ‘দৃষ্টি এখন’ নাট্য সংস্থা, তাদের সাম্প্রতিক দুটি প্রযোজনার মাধ্যমে। এই সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার দুটি দলিল – ‘কাল বা পরশু’ এবং ‘চুপ! প্রশাসন চলছে!’
দিন দিন বেকারত্ব বাড়ছে। একটা চাকরির অভাবে জীবনটাই এগতে পারছে না। ওদিকে বয়স তার নিয়মেই বেড়ে চলেছে। রাজনীতির ছত্রছায়ায় থেকে লাভ নেই। বেকারদের যে ব্যবহার করা হয়, এটা তারা বুঝতে পারছে। তাদের মাথায় পা রেখে একের পর এক সিঁড়ি ভাঙ্গে নেতারা। তাদের মিথ্যা ভাষণে আর ভুলতে চায় না বেকার যুবকেরা। জীবন থেকে আর কিছু পাবার নেই, তাহলে কেন মুখোমুখি হই না! যেখানে গলা ফাটালে, মাথা খুঁড়লে প্রতিকার পাওয়া যায় না, সেখানে প্রতিশোধই কাম্য। হোক না সেই পথ বিকৃত! বেকার যুবকদের সম্মিলিত প্রতিশোধের এক কঠিন বাস্তব উঠে আসে ‘কাল বা পরশু’ নাটকে।
ভোট আসে, ভোট যায়। অনেক আশা নিয়ে সাধারণ মানুষ চেয়ে থাকে নতুন দিনের আশায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই বদলায় না। এক রাজা যায়, নতুন রাজা আসে। কিন্তু পরিস্থিতি একই থাকে। নতুন রাজা যখন, তখন কিছু তো নতুন চাই। আম জনতার চোখে রঙিন চশমা পরিয়ে দেয় নতুন রাজা। পর পর রঙিন ছবি – রঙের প্রলেপে সেজে উঠতে চায় জীর্ণ শহর, বাজার, ব্রিজ, হাসপাতাল। ঝলমলে বাতিস্তম্ভ, ঝকমকে বাণিজ্য সম্মেলন, নানা উৎসব, মেলা, ক্লাবের জৌলুস, আরও কত কত আশাব্যঞ্জক ছবি। দিন যায়, রঙিন ভাবনার ফানুসগুলো চুপসে যেতে থাকে। সাধারণ মানুষ সেই তিমিরেই। হ্যাঁ মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হয়তো সুরাহা হয়। কিন্তু সেই সামান্য সংখ্যক মানুষকে নিয়ে তো কোনও ধারণা তৈরি হতে পারে না। অতপর বেকারের আরও বেহাল দশা, এল না শিল্প, গরীব আরও গরীব হল, বড়লোকের পকেট ফুলে ফেঁপে উঠল। দিবে আর নিবের কনসেপ্টে রাজনীতির চাকা গড়্গড়িয়ে চলতে লাগল। আর আম জনতা নিরাপদ দূরত্বে থেকে জেগে জেগে ঘুমোতে লাগল। ঘুম ভাঙানোর বান্দা যে নেই!
তাদের সীমিত প্রচেষ্টায় সেই কাজটাই করল ‘দৃষ্টি এখন’এর রাজনৈতিক নাটক ‘চুপ! প্রশাসন চলছে’। অত্যন্ত সততা এবং সাহসের সঙ্গে দু’টি নাটককে পরিপূর্ণ রূপ দিয়েছেন নির্দেশক অভিষেক দেবরায়। রূপকের মধ্যে দিয়ে এই সময়ের রাজনৈতিক আস্থিরতার দুটি বাস্তব দিক উন্মোচিত হয়েছে পরপর মঞ্চস্থ হওয়া নাটক দুটিতে। দু’টি নাটকের মুখ্য ভূমিকায় অভিষেকের ভিন্ন অভিনয় মুগ্ধ করে রাখে। শিল্পীদের সম্মিলিত অভিনয় নাটক দুটিকে গতিময় করে তোলে। বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে হয় সঞ্চারী দাস,পলাশ হালদার, দেবায়ন নন্দী, সৌরদীপ চক্রবর্তী, সব্যসাচী চক্রবর্তী, রাহুল মজুমদার এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম।
বাবলু সরকারের আলো, টিঙ্কু দে’র মঞ্চ এবং মানবী রায়-অমন সাউয়ের আবহ, নাটক দুটির সঙ্গে দর্শকদের একাত্ম হতে সাহায্য করেছে।