সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক, কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
এসবই আসলে জনশ্রুতি। কল্পিত লোকগাথা। এই কল্পকথার সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনও সম্পর্ক নেই। নৃতাত্ত্বিক, গবেষক, শাস্ত্রীয় পণ্ডিত ও ঐতিহাসিকদের মতে, অসুর সম্প্রদায়ের মানুষেরা আসলে উন্নত দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর মানুষ। আদিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান, বলবান ও প্রজ্ঞাবান ছিল এই অসুর সম্প্রদায়। তাঁদের গায়ে আছে আসুরিক শক্তি। তাঁরা লোহার কাজ ভালো জানত। আর্যদের আধিপত্য কায়েম করার সময় যাঁরা তাঁদের কথা শুনত না, আর্যরা তাঁদের কাউকে অসুর, কাউকে রাক্ষস আবার কাউকে দুর্বৃত্ত ও শয়তান বলে অভিহিত করেছিল। বেদ ও উপনিষদ সহ সমস্ত ধর্মগ্রন্থেই সুস্পষ্টভাবে এর উল্লেখ আছে। মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন দেবীদুর্গা। এটা কল্পিত কাহিনী। এই কাহিনীর সঙ্গে অসুর সম্প্রদারয়ের আসলে কোনও সম্পর্ক নেই।
আর্যরাই সেই সময় অসুর সম্প্রদায়ের মানুষের অসুরের বংশধর বলে অভিহিত করেছিল। যদিও সেই মিথ বা কল্পকাহিনী কালের নিয়মে এখনও অসুরদের মধ্যেই কেউ কেউ বিশ্বাস করে থাকেন। কিন্তু অসুরদের বর্তমান প্রজন্ম মূলস্রোতেই আছে। বর্তমান প্রজন্ম পূর্বপুরুষদের এসব কল্পকাহিনী মানতে রাজি নয়। তাঁরা সমাজের আর পাঁচজনের মতোই নতুন জামাকাপড় পরে প্রতিমা দর্শনে যান। পুজোর ভিড়েও মিশে থাকেন। আলিপুরদুয়ারের লোকসংস্কৃতি গবেষক প্রমোদ নাথ বলেন, অসুর সম্প্রদায়ের মানুষ দ্রাবিড় সভ্যতার মানুষ। ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক মতেই তা সত্য ও বিজ্ঞানসম্মত। আর্যরাই শোষণের উদ্দেশে অসুর সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর মানুষকে অসুর বা মহিষাসুরের বংশধর বলে অভিহিত করেছিল। কাজেই অসুর সম্প্রদায়ের মানুষ দুর্গা প্রতিমা দেখতে যান না এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। অসুর সম্প্রদায়ের মানুষ সমাজের মূলস্রোতের সঙ্গেই আছে।
আলিপুরদুয়ার জেলায় ৫৪টি জনগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস। তাঁদের মধ্যে অন্যতম অসুর সম্প্রদায়। অসুর সম্প্রদায়ের মানুষেরা চা বাগান, বনবস্তি ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করেন। আলিপুরদুয়ারের কালকূট বনবস্তি, গরম বনবস্তি, মাঝেরডাবরি, পানিয়ালগুড়ি, শিবকাটা ও তপসিখাতার শালবাড়ি এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসুরদের বংশধররা। কোচবিহারের মাথাভাঙা মহকুমার কেদারহাট, ইন্দ্রেরকুঠি এবং জলপাইগুড়ির ক্যারন ও জিতি চা বাগানেও অসুর সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে। ওরা একটি এলাকায় নিজেদের পরিবার নিয়ে দলবদ্ধভাবে বসবাস করতেই ভালোবাসে। তবে চা বাগান ও বনবস্তি গ্রাম পঞ্চায়েতের আওতায় এলেও তাঁদের দারিদ্র এখনও সেভাবে ঘোচেনি। সরকারি নানা প্রকল্প থেকেও তাঁরা বঞ্চিত। ১০০ দিনের কাজেও তাঁদের নানাভাবে বঞ্চনা করা হয় বলে ঢ্যাঁপা অসুর, ডাহারু অসুর ও জ্যামিন অসুরদের অভিযোগ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অসুর সম্প্রদায়ের অনেকে নিজের ধর্ম পাল্টে খ্রিষ্টধর্মেও দীক্ষিত হয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, অন্যদের মতো তাঁরাও পুজো দেখতে যান।