যে কোনও ব্যবসায় অগ্রগতি আশা করা যায়। মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের কর্মের প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে সমস্যা হতে ... বিশদ
শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের সাবোরআড়া গ্রামের কালীপদ বা তাঁর বন্ধু কেশবই শুধু নন, পূর্ব মেদিনীপুরের এই লোকসভার অন্তর্গত পাঁশকুড়া পূর্ব, তমলুক, নন্দকুমার, ময়না, নন্দীগ্রামের মতো বিধানসভা এলাকার পান আর ফুলচাষি, আর তাঁদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে প্রায় চার লক্ষের বেশি ভোটার এবার রীতিমতো ফুঁসছেন। ইভিএমের বোতাম টিপেই বদলা নিতে চান তাঁরা। কিন্তু কেন? বারবার দাবি জানালেও কেন্দ্র এখনও পান ও ফুলকে কৃষিজ পণ্য হিসেবে ঘোষণা করেনি। ফলে একদিকে রপ্তানি পর্বে যেমন জিএসটির নাগপাশ শক্ত হচ্ছে, তেমনই আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হলেও শস্য বিমা না মেলার ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা। ধার্য হয়নি ন্যূনতম সহায়ক মূল্যও (এমএসপি), ক্ষোভ বাড়িয়েছে চাষিদের।
কোলাঘাট থেকে নন্দকুমার হয়ে হলদিয়া পৌঁছনো সড়ক এনএইচ-১১৬। এই সড়কের দু’পাশের সাবোরআড়া, পাইকবাড়ি, খামারচক, চিমুলিয়া, মহিষবেড়িয়া, বাড়বেড়িয়া, পাণ্ডববসান, দক্ষিণ দামোদরপুরের মতো একের পর এক গ্রাম বাংলা, মিঠা আর সাঁচি পানের আঁতুড়ঘর। জেলার এই অর্থকরী ফসল সৌদি, ওমান, আরব আমিরশাহি, থাইল্যান্ড পার করে এখন ইউরোপেও রসনা তৃপ্তির উপকরণ। কিন্তু চাষিদের দুর্ভোগ কমেনি, বরং আরও বেড়েছে। এই আবর্তে ভোটযুদ্ধের রথী-মহারথীরা কী বলছেন? ‘বিপ্লব স্পন্দিত বুকে লেনিন’ হতে চেয়েছিলেন যিনি, ‘ভোকাল ফর লোকালের’ গেরোয় প্রাক্তন সেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
এখন ‘জয় শ্রীরামে’ বিশ্বাসী। চে গুয়েভারাকে যিনি ‘নায়ক’ বলে মনে করতেন, গেরুয়া উত্তরীয় গলায় চাপানো পদ্মপার্টির সেই প্রার্থী নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের গুণকীর্তণ করে বেড়াচ্ছেন, স্বপ্ন ফেরি করছেন। প্রায় ৮৫ শতাংশ গ্রামীণ ভোটারের তমলুক
ঘুরে ‘অব কী বার ৪০০’ পার প্রচারে করে বেড়ালেও, পান ও ফুলচাষিদের নিয়ে মুখে কুলপ আঁটা। ‘খেলা হবে’র... রচয়িতা দেবাংশু ভট্টাচার্য নিজেই জোড়াফুলের প্রার্থী। তরুণ দেবাংশুর মুখে তবুও কিছুটা শোনা যাচ্ছে চাষিদের দুর্দশার কথা, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য
এবং কৃষিজ পণ্য ঘোষণার দাবি। ‘ফিরলে লাল, ফিরবে হাল’—এমনটা বলছেন সিপিএম প্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। ফুলচাষিদের অন্যতম সংগঠক নারায়ণ নায়েক এসইউসি প্রার্থী। তাঁর প্রচারেও চাষিদের দুর্দশা। কিন্তু বিজেপি? এক আনাও নেই।
দুর্দশার বাস্তব চিত্রটা ঠিক কেমন? কামারবাড় গ্রামের বাসিন্দা স্বদেশ পাত্র একসময়ে পানচাষের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন হাইরোডের ধারে ঘুগনি-মুড়ি সঙ্গে পান-বিড়ির গুমটি খুলেছেন! চাষের কী হল? জবাব মিলল—‘কেন্দ্রের প্রতিশ্রুতি ছিল, পূরণ হয়নি। জিএসটির চাপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ফড়েদের উপদ্রব। ফসল নষ্ট হলে বিমা মেলে না। খরচই উঠছে না এখন, আমাদের মতো ছোট চাষিদের পক্ষে চাষ করা কি সম্ভব?’ গুমটির সামনে দাঁড়িয়ে চামচ দিয়ে কাচিয়ে ঘুগনিটা শেষ করে মাটিতে বাটি নামিয়ে রাখলেন এক খদ্দের। বিমল দাস মহাপাত্র, বিষ্ণুবাড়ের বাসিন্দা। এবার এক খিলি পানের অর্ডার করলেন। এক কামড়ে মুখে পুরে জিভে চুনটাও লাগালেন। চিবোতে চিবোতেই জবাব—‘চুন বেশি হলে তো জিভ পোড়ে। এবার ইভিএমে সেই চুনই লাগাবে পান-ফুল চাষিরা।’