নিকট বন্ধু দ্বারা বিশ্বাসঘাতকতা। গুরুজনের স্বাস্থ্যহানি। মামলা-মোকদ্দমায় পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে থাকবে। দাম্পত্য জীবনে ভুল বোঝাবুঝিতে ... বিশদ
বুধবার জন্মেঞ্জয় নামে ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমি ঘটনার সঙ্গে কোনওভাবেই জড়িত ছিলাম না। মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ায় ভালো লাগছে। ওই যুবকের কথায়, আর এসব নিয়ে ভাবতে চাই না। এখন ভালোয় ভালোয় জীবন যাপন করতে চাই। এতগুলি বছর নানা অসম্মান নিয়ে কাটাতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আদালত থেকে বিচার মেলায় ভালো লাগছে।
আদালত সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালের ১৪ জানুয়ারি ভোরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঢোলাহাট থানার ভৈরবীতলার বাসিন্দা জন্মেঞ্জয় ও তাঁর বন্ধু প্রদীপ এক বিশেষ কাজে মথুরাপুরের পথে রওনা দেন। পরে প্রদীপের মৃতদেহ পাওয়া যায় মথুরাপুর রেল স্টেশনের কাছে। প্রদীপের বাবা বারুইপুর জিআরপি থানায় ছেলের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ওই ঘটনায় অভিযুক্ত করেন জন্মেঞ্জয়কে। তাঁর অভিযোগ ছিল, ছেলেকে ষড়যন্ত্র করে রেললাইনে ধাক্কা দিয়ে খুন করে তাঁর বন্ধু জন্মেঞ্জয়। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিস এফআইআর দায়ের করে খুনের মামলা রুজু করে জন্মেঞ্জয়ের বিরুদ্ধে। তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হয়। ওই ঘটনার পুলিসি তদন্ত শেষে খুনের অভিযোগ এনে আদালতে চার্জশিট পেশ করা হয়। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে সেখানে সরকার পক্ষ থেকে সাক্ষ্যে অভিযোগ আনা হয়, জন্মেঞ্জয়ের স্ত্রীর সঙ্গে মৃত প্রদীপ গায়েনের একটা অবৈধ সম্পর্ক ছিল। আর তার জেরেই আক্রোশবশত জন্মেঞ্জয় বন্ধু প্রদীপকে চলন্ত ট্রেনের সামনে ধাক্কা দিয়ে খুন করেন।
যদিও সেই মর্মে কোনও জোরালো তথ্য সরকার পক্ষ আদালতে পেশ করতে পারেনি। এমনকী কয়েকজন সাক্ষী আদালতে বলেন, এই ধরনের কোনও ঘটনাই ঘটেনি তাঁদের দু’জনের মধ্যে। ওদের দু’জনের মধ্যে ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। ছিল না কোনও কুমতলব। এই ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। পাশাপাশি মামলার সওয়াল-জবাবে অভিযুক্তের আইনজীবী বলেন, ঘটনার দিন আমার মক্কেলের বন্ধু প্রদীপ গায়েন প্রাতঃকৃত্য সারার জন্য রেললাইন পেরতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান। তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়নি। তাই আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে এই খুনের মামলা চলতে পারে না।
এই মামলার রায় দিতে গিয়ে আদালতের মন্তব্য, এই
হত্যা-মামলায় বিস্তর ফাঁকফোকর ও অসঙ্গতি ছিল। এমনকী
সাক্ষ্যেও অভিন্ন বয়ান পাওয়া যায়নি। বিচারকের মন্তব্য, মামলার তদন্ত ছিল অত্যন্ত ঢিলেঢালা। সিজার লিস্ট তৈরির ক্ষেত্রে ছিল চূড়ান্ত গাফিলতি। বিচারক তাঁর রায়ে মন্তব্য করেছেন, এই হত্যা মামলায় নানা অসঙ্গতির কারণেই আদালতের কাছে অভিযোগের বিষয়টি অত্যন্ত সন্দেহজনক মনে হয়েছে। পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে বিষয়টি কোর্টের কাছে ধোঁয়াশাও মনে হয়েছে। তাই এই অবস্থায় শুধুমাত্র সন্দেহের বশে অভিযুক্তকে কোনও অবস্থায় দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। তাই সমস্ত কিছু বিচার বিবেচনা করে এই হত্যা মামলা থেকে অভিযুক্তকে রেহাই দেওয়া হল।