নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ঘরেই তৈরি হচ্ছে আধুনিক প্রজন্মের ৭.৬২ এমএম-এর ইনসাস রাইফেল। যেগুলির কার্তুজের দৈর্ঘ্য ৫১ এমএম। ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির তরফে ভারতীয় সেনাকে এই রাইফেল নিয়ে ট্রায়াল দিতে বারে বারে আবেদন করা হলেও, তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। অথচ, ইতিমধ্যেই প্রায় ৭০০ কোটি টাকা দিয়ে আমেরিকা থেকে বিপুল পরিমাণ অ্যাসল্ট রাইফেল কেনার অনুমোদন দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। এর ফলে সেনাবাহিনী ৭২ হাজার ৪০০টি এসআইজি-৭১৬ অ্যাসল্ট রাইফেল পাবে। ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির কর্তাদের দাবি, আমেরিকা থেকে যে রাইফেলগুলি আসছে, সেগুলির সমগোত্রীয় রাইফেল তৈরি করা হয়েছে তাঁদের ফ্যাক্টরিতেই। ফ্যাক্টরির জেনারেল ম্যানেজার দিলীপকুমার মহাপাত্রের কথায়, ভারতীয় সেনাবাহিনীকে একাধিকবার এই রাইফেলে ট্রায়াল দিতে বলা হয়েছিল। ২০১৭ সালে নভেম্বর পর্যন্ত প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট টিম (পিএমটি) ছ’বার এসে রাইফেল দেখেও গিয়েছে। কিন্তু তারপর আর সেনাবাহিনী গুরুত্ব দেয়নি। অথচ, একই ধরনের রাইফেল আসছে বিদেশ থেকে। এদিন ফ্যাক্টরির কর্তারা জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে যে ৭.৬২ এমএম রাইফেল এবং ৫১ এমএম দৈর্ঘ্যের কার্তুজ তৈরি হয়েছে, তা ৮০-৮৫ হাজার টাকায় সেনাবাহিনীকে দেওয়া সম্ভব হতো। অথচ, একই রাইফেল সেনাবাহিনী কিনছে প্রায় সওয়া এক লক্ষ টাকারও বেশি দিয়ে। জেনারেল ম্যানেজারের কথায়, ভারত সরকার হয়তো বুঝেছে, আমেরিকা থেকে কেনা রাইফেলগুলি আরও আধুনিক হবে, সেকারণেই এই ফ্যাক্টরির বদলে ওই বিদেশি রাইফেলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই, ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বার্তার বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যেখানে ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরিতে গত এক বছরের কাছাকাছি সময় ধরে ৭.৬২ এমএম ইনসাস রাইফেল তৈরি হচ্ছে, সেখানে কেন বাইরের দেশকে এদেশে ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনী ৭ লক্ষ রাইফেল, ৪৪ হাজার লাইট মেশিন গান এবং ৪৪ হাজার ৬০০ কার্বাইন কেনার প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু নানা কারণে তা আটকে যায়।
আবার আমেথিতে রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে কালাশনিকভ রাইফেল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। কিন্তু তাদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে যে রাইফেল তৈরি হবে, সেটির ক্ষমতার সঙ্গে সমানে সমানে পাল্লা দিতে পারে ইছাপুরের ফ্যাক্টরিতে তৈরি ৭.৬২ এমএম ‘ঘাতক’ নামের ইনসাস রাইফেল। বর্তমানে প্রায় চার হাজারের কাছাকাছি বানানো রয়েছে। এমনই দাবি করলেন জেনারেল ম্যানেজার। আমেথিতে যে একে-২০৩ রাইফেল তৈরি হবে, তাতে যে ধরনের প্রযুক্তি যুক্ত করা হবে, তা ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির পক্ষেও সম্ভব ছিল। প্রসঙ্গত, গত এক বছরের সিআরপিএফ, সিআইএসএফ, আইটিবিপি এই ঘাতক রাইফেল নিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র আমন আনন্দ বলেন, ফরোয়ার্ড এলাকায় সেনাবাহিনীর চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য এখন অত্যাধুনিক রাইফেল প্রয়োজন। স্থানীয়ভাবে যেগুলি তৈরি তা এক্ষেত্রে যথোপযুক্ত হচ্ছে না।
বর্তমানে ভারতীয় জওয়ানদের তরফে হাল্কা ওজনের আধুনিক ক্ষমতাসম্পন্ন ইনসাস রাইফেলের দাবি জানানো হচ্ছে। সেনাবাহিনীর কর্তাদের দাবি, যত কম ওজনের রাইফেল হাতে পাবেন তাঁরা, তত অন্যান্য অস্ত্রও বহন করতে পারবেন। বর্তমানে ভারতীয় বায়ুসেনা এবং নৌসেনার কমান্ডোরা ইজরায়েল থেকে কেনা যে রাইফেল ব্যবহার করেন, সেগুলি এতটাই হাল্কা যে, সেনারা আর আড়াই-তিন কেজির রাইফেল কাঁধে নিতে চাইছেন না। এমতাবস্থায় ‘ঘাতক’ রাইফেলের ওজন প্রায় তিন কেজি। এর ওজন কমিয়ে আনলেই ভারতীয় সেনাবাহিনী দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘ঘাতক’ ব্যবহার করতে পারবে।