প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। তবে তা বাস্তবায়িত হওয়াতে সমস্যা আছে। লোহা ও ... বিশদ
তখনও রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বেলুড় মঠ তৈরি হয়নি। উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত দাঁ পরিবারের (প্রচলিত কথা অনুযায়ী যাঁদের বাড়িতে মা দুগ্গা গয়না পরতে আসেন) সদস্য পূর্ণচন্দ্র হুগলি নদীর অপর পারে বেলুড়ে রাধারমণ জিউ মন্দির স্থাপন করেন ১৮৯০ সাল নাগাদ। মন্দির ঘিরে তৈরি হল রাস মঞ্চ, শিবমন্দির, নহবতখানা, নাটমন্দির ইত্যাদি। সাবেকি বাংলার স্থাপত্যরীতি মেনে মন্দিরের পাশাপাশি সৌধগুলোতে ইউরোপীয় ছোঁয়া। একসময় খুব জাঁকজমক করে পালিত হতো রাধারমণ জিউ-এর রাসযাত্রা। আয়োজন হতো বিশাল মেলার। ক্রমশ সময়ের সঙ্গে কমে আসে বৈভব, মন্দির চত্বরে দেখা দেয় অনাদরের চিহ্ন, মেলা সরে যায় বাইরে।
কিন্তু এখনও সেখানে গেলে অবাক হতে হয়। বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম সদস্য অতনু দাঁয়ের প্রচেষ্টায় আবার নতুন ভাবে সেজে উঠছে মন্দির চত্বর। শুধু তাই নয়, এক বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে, শুরু হয়েছে হেরিটেজ ট্যুরিজম এবং হোম স্টে। আর আছে পিকনিকের সুবিধা।
জি টি রোড থেকে ঢুকতেই প্রথমে নজরে পড়বে নবরত্ন বিশিষ্ট রাধারমণ জিউ মন্দির যার উল্টো দিকে নাটমন্দির। মন্দিরের চাতাল পার হয়ে গঙ্গার দিকে যেতে কোরিন্থিয়ান পিলারে সাজানো ঘড়িঘর, হয়তো বিশিষ্ট অতিথিদের এখানে অভ্যর্থনা জানানো হতো। ঘড়িঘরের দু-ধারে তিনটি করে আটচালা শিবমন্দির। ঘড়িঘরের ঠিক পিছনে রাসবাড়ির নিজস্ব ঘাট, যা নেমে গিয়েছে একেবারে গঙ্গার কোলে। শিব মন্দিরের সারির দু-ধারে একটি করে নহবতখানা। রাধারমণ জিউয়ের মন্দির পার করে রাস মঞ্চ। এছাড়া ঠাকুরের ভোগ রান্নার ঘর ইত্যাদি তো আছেই। রাসমন্দির পার করে একটি পুরনো বাড়িকে সুন্দর ভাবে মেরামতি করে তৈরি হয়েছে গেস্ট হাউস। গেস্ট হাউসের পিছনে মখমলি সবুজ ঘাসের লন যার ওপারে বয়ে যাচ্ছে গঙ্গা নদী। এখানে দাঁড়িয়ে দেখতে পাবেন ফেরি নৌকোর আনাগোনা, ভগিনী নিবেদিতা সেতু, বালি ব্রিজ আর দক্ষিনেশ্বর মন্দিরের চূড়া।
গেস্ট হাউস পার করে একটি নতুন তিনতলা বাড়ি যেখানে দোতলা ও তিনতলায় রয়েছে আরও চারটি থাকার ঘর। একতলায় ডাইনিং হল। এই নতুন বাড়িতে যাওয়ার পথে দেখবেন একটি ছোট্ট বাগানের মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দের এক বিশাল মূর্তি। প্রথমবার বিদেশ থেকে ফেরার পর স্বামীজিকে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তখন এই রাসবাড়ি প্রাঙ্গণেই স্বামীজি শ্রীরামকৃষ্ণের জন্ম তিথি পালন করেন। এই মূর্তি সেই স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়।
থাকা-খাওয়ার দায়িত্বে রয়েছে বেসরকারি ভ্ৰমণ সংস্থা। দ্বি-শয্যা বিশিষ্ট ঘরের ভাড়া নতুন বিল্ডিং-এ ৩৫০০ টাকা ও হেরিটেজ বিল্ডিং-এ ৪০০০ টাকা। ঘর ভাড়ার সঙ্গে ব্রেকফাস্টের খরচ ধরা আছে। ঠাকুরবাড়ি বলে নিরামিষ খাবারের ওপর জোর বেশি, আমিষ বলতে শুধু মাছ। লাঞ্চ বা ডিনারের খরচ মাথা পিছু নিরামিষ ৩০০ টাকা ও মাছ সমেত ৪৫০ টাকা। পিকনিকের খরচ সম্বন্ধে জানতে সরাসরি যোগাযোগ করুন। পিকনিকের খাবারের বন্দোবস্ত বুকিং এজেন্সি করে দেবে। পিকনিক যেতে চাইলে বা রাতে থাকতে চাইলে অবশ্যই আগাম বুকিং করতে হবে। যোগাযোগ করতে হবে— ফোন 9051525307, 9836040344; https://twinstour.in/)।
মনে রাখবেন এমনিতে ছবি তোলা নিষেধ। তবে মোবাইল ফোনে ছবি তোলা যেতে পারে। আর ক্যামেরা ফোটোগ্রাফি বা বিশেষ কোনও ফোটোগ্রাফির জন্যে বুকিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
রাসবাড়ির সঙ্গে বেলুড় মঠ ঘুরে নিতে পারেন। আবার বেলুড় মঠের ফেরি ঘাট থেকে সরাসরি দক্ষিণেশ্বর পৌঁছে সেখান থেকেও ঘরে ফেরার পথ ধরতে পারেন।
ছবি:লেখক