প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। তবে তা বাস্তবায়িত হওয়াতে সমস্যা আছে। লোহা ও ... বিশদ
তিনি কলকাতার মেয়র, রাজ্যের পুরমন্ত্রীও। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর কাছে এটা ‘অগ্নিপরীক্ষা’। সকাল থেকেই শহরের আপৎকালীন পরিষেবা সচল রাখতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে হচ্ছে। যেতে হচ্ছে পুরসভাতেও। সেখান থেকেই কখনও ফোনে, কখনও বা নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে সামলাচ্ছেন সবটাই। এই লকডাউন নতুন অভিজ্ঞতা হলেও ছোটবেলার স্মৃতি উস্কে দিয়েছে তাঁর। একাত্তরের যুদ্ধের সময়ের অন্ধকার কলকাতা কিংবা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময়কার কার্ফু। ফিরহাদ হাকিমের কথায়, সেই পরিস্থিতি অন্যরকম ছিল। আর এখন একজন আপনজনকে বিশ্বাস করতে পারছে না। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। কেউ কারও সংস্পর্শে আসতে চাইছে না। এমন এক সামাজিক সঙ্কটের মধ্যেও মানুষের সঙ্গে অহরহ যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে। বললেন, আমাকে বাইরে বেরতে হবেই। পরিবার আছে, তাই বাড়তি সতর্ক থাকছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোদ্ধা হিসেবে শহর থেকে করোনা নির্মূলের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়েছি।
এমন ‘তিক্ত অভিজ্ঞতা’ কারও জীবনে যেন না আসে, সেই প্রার্থনাই করছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সকাল থেকে বাড়ির বাইরে ভিড়, নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে মানুষের আগমন—সবটাই ‘মিস’ করছেন তৃণমূলের মহাসচিব। সময় কাটছে না। আলস্য, বার্ধক্য চেপে বসছে। নিজের কিছু লেখার কাজ এই ফাঁকে সেরে ফেলছেন পার্থবাবু। নিজের বিধানসভা এলাকার সঙ্গে অনবরত ফোনে যোগাযোগ রাখছেন। বাড়িতে বসেই ফোনে শিলিগুড়িতে কর্মরত বেহালার এক শিক্ষিকাকে উদ্ধারের ব্যবস্থাও করেছেন তিনি। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য নিখাদ ছুটি কাটাচ্ছেন। বলছিলেন, শেষ কবে দুপুরে একটু ঘুমিয়েছি, তা খেয়াল নেই। এখন সারাদিনই বাড়িতে, দুপুরে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। সারাদিন টিভি দেখে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। ফোনে যাঁকে যেটুকু সাহায্য করার করছি। এই ছুটির ফাঁকে আবার করোনা নিয়ে ছ’টি কবিতা লিখে ফেলেছেন অন্যতম বর্ষীয়ান মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। করছেন নিয়মিত শরীর-চর্চাও। এরই মাঝে কয়েকটি জেলা থেকে বিক্ষিপ্তভাবে কালবৈশাখীর খবর এসেছে। ফলে সেখানে বিঘ্নিত হয়েছে বিদ্যুৎ পরিষেবা। বাড়িতে থেকে ফোনেই সেব্যাপারে তদারকি করছেন মন্ত্রী।
অন্যদিকে, মাঝেমধ্যেই শেওড়াফুলি লোকালে করে আড্ডা মারতে মারতে কলকাতায় আসা বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ‘গৃহবন্দি’ থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছেন। এলাকায় থাকলে পার্টি অফিসে বসেন। এখন সেটাও বন্ধ। তাই অগত্যা বাড়িতে যে আসছেন, তাঁকে সময় দিচ্ছেন। তাঁর হাঁটুর সমস্যা দীর্ঘদিনের। এই ‘ছুটিতে’ তাই বিশ্রামেই থাকছে পা-দুটো। তবে বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে অহরহ ফোন আসছে বৈদ্যবাটি, মুর্শিদাবাদ, মালদহ থেকে। শুনছেন সেসব কথা। বলছেন, এখন রাজনীতি নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের পাশে এসে আমাদের সবাইকে দাঁড়াতে হবে। যখনই যা সমস্যা জানতে পারছি, সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা সমাধানের চেষ্টা করছি, বললেন আব্দুল মান্নান।
প্রায় একই পরিস্থিতি বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর। ভেবেছিলাম এই সুযোগে বেশকিছু বই পড়ে নেব। কিন্তু সেখানেও পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে পারছি না। দিনরাত বিভিন্ন জায়গা থেকে এত ফোন আসছে, সেগুলি সামলাতেই সময় কেটে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সবটা করা হয়তো সম্ভব হচ্ছে না।
প্রতিদিনই বিকেলের দিকে প্রায় বিধান ভবনে বসেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। চলমান পরিস্থিতিতে এখন তা বন্ধ। ডায়াবেটিসের রোগী। কয়েক মাস আগে হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন। তাই এমনিতেই বিশ্রামে ছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতি বাড়িতেই একটু-আধটু পরিচিতদের সময় দিচ্ছেন, বাকিটা সামলাচ্ছেন ফোনে।
বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ তাঁর নিয়মিত ‘মর্নিং-ওয়ার্ক’-এর সময় কমিয়ে দিয়েছেন। বাড়িতে বসেই সামগ্রিক পরিস্থিতির খোঁজ রাখছেন। নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছেন বিভিন্ন শারদীয়া উপন্যাসে কিংবা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে তৈরি একাধিক সিনেমাতে।