হস্তশিল্পীদের কর্মে সাফল্য ও সুনাম। সন্তানের সঙ্গে মতবিরোধ হতে পারে। ধর্মকর্মে মনোযোগ বাড়বে। ... বিশদ
বঙ্কিম লিখেছিলেন, ‘বাঙ্গালার ইতিহাস নেই।’ বাঙালির ইতিহাস মনস্কতার অভাব নিয়ে তিনি কলম ধরেছিলেন। সেই তিনি আরামবাগ তথা জাহানাবাদের এসডিও ছিলেন কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আজও বিদ্যমান। পূর্বতন এসডিওর কার্যালয় তথা বর্তমানে এসডিওর বাসভবনের দেওয়ালের ফলকে জ্বলজ্বল করছে, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৯২ সালে জাহানাবাদের এসডিও ছিলেন। তথ্য সূত্র হিসেবে হুগলি জেলার গেজেটের উল্লেখ আছে। যদিও আপডেট হওয়া গেজেটে সেই তথ্যের উল্লেখ না থাকায় বর্তমান প্রশাসনিক ভবনে এসডিওদের নামের তালিকায় বঙ্কিমচন্দ্রের নাম উল্লেখ করে হয়নি। ইতিহাস বলছে, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৯১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আলিপুর থেকে পেনশন নিয়ে অবসর গ্ৰহণ করেন। তাহলে ১৮৯২ সালে জাহানাবাদ তথা আরামবাগের এসডিও কীভাবে থাকতে পারেন। গোঘাট থানার গড় মান্দারণের প্রেক্ষাপটে ১৮৬৫ সালে দূর্গেশনন্দিনী উপন্যাস লিখেছিলেন। এই উপন্যাস লেখা শুরু হয়েছিল খুলনা জেলায়। বারুইপুরে সেই লেখা শেষ হয়। বঙ্কিম তাঁর শেষ উপন্যাস ‘সীতারাম’ ১৮৮৭ সালে শেষ করেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কাজের সূত্রে আরামবাগে ছিলেন এমন কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই। বরং ‘পালামৌ’ গ্ৰন্থের লেখক বঙ্কিমচন্দ্রের দাদা সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আরামবাগে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে কাজ করে গিয়েছেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোট ভাই পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখে গিয়েছেন, তাঁর মেজো ঠাকুরদা কর্মসূত্রে বিষ্ণুপুর এলাকায় যাতায়াত করতেন। পাঠানদের দ্বারা গড় মান্দারণ দুর্গ আক্রমণের কাহিনি তাঁদের শুনিয়েছিলেন। উনিশ বছরের বঙ্কিম যা শুনে প্রভাবিত হন। চব্বিশ বছর বয়সে তিনি এই উপন্যাস লেখা শুরু করেন। বঙ্কিমচন্দ্র কর্মজীবনে কখনও আরামবাগে এসেছিলেন কিনা তাঁর প্রামাণ্য কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রশাসন তার পরেও ফলকটি লাগিয়ে রেখেছে কেন তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আরামবাগ মহকুমার প্রাক্তন গ্ৰন্থাগারিক বিভাংশু দত্ত বলেন, একটি প্রবন্ধে আমি প্রথম উল্লেখ করি, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কখনও জাহানাবাদের এসডিও ছিলেন না। পূর্বতন এসডিওর কার্যালয়ে ফলকে এখনও উল্লেখ রয়েছে, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৯২ সালে জাহানাবাদের এসডিও ছিলেন। বঙ্কিম জীবনীকার অমিত্রসূদন ভট্টাচার্যকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, বিষয়টি নিয়ে আরও খোঁজখবর করা দরকার। তিনি তাঁর লেখায় কোথাও উল্লেখ করেননি, বঙ্কিমচন্দ্র জাহানাবাদের এসডিও ছিলেন। আরামবাগের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই ভুল তথ্য বহন করে চলেছেন। যার অবসান হওয়া উচিত। শিক্ষাবিদ প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বিষয়টি নিয়ে আরটিও করা হয়েছিল। প্রামাণ্য কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। বর্তমান মহকুমা শাসকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। আরামবাগের ইতিহাস নিয়ে লেখা এক গ্ৰন্থে প্রামাণ্য তথ্য দিয়ে উল্লেখ করেছি, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জাহানাবাদের এসডিও ছিলেন না। মিথ্যা ইতিহাসের অবসান হওয়া দরকার বলেই মনে করছি। আরামবাগের এসডিও সুভাষিনী ই বলেন, ফলকে গেজেটের যে তথ্যসূত্র দেওয়া হয়েছিল সেটা নতুন করে আপডেট করা হয়েছে। সেখানে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জাহানাবাদের এসডিও থাকার কোনও উল্লেখ নেই। মহকুমা প্রশাসনিক ভবনে এসডিওদের যে তালিকা আছে সেখানে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ নেই। তারপরেও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর চালানো হচ্ছে। বঙ্কিমকে নিয়ে চলে আসা দীর্ঘ এক লোকশ্রুতি প্রশাসনিক মহলেও কীভাবে মান্যতা পেলে তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে। যার অবসান হওয়া কাম্য বলেই শিক্ষিত মহল মনে করছেন।