যে কোনও ব্যবসায় অগ্রগতি আশা করা যায়। মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের কর্মের প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে সমস্যা হতে ... বিশদ
বৃহস্পতিবার, সকাল সাড়ে ন’টা। জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম শিমুলিয়া ও মহেশপুর সবে ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। আর তখনই বাতাস ভারী করে খবরটা এল—পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন চার যুবক। দীঘায় একদিন কাটিয়ে তাপস কর্মকার (৩২), শুভঙ্কর ঘোষ (২৫), শুভম সাহা (২৮), সুমন ঘোষ (২৬)-এর বাড়ি ফেরার কথা ছিল শুক্রবার। ফিরলেন নিথর হয়ে।
পুলিস জানিয়েছে, মৃতদের মধ্যে তাপস কর্মকারের বাড়ি মহেশপুর পঞ্চায়েতের নারায়নপুর গ্রামে। বাকি তিনজনের বাড়ি শিমুলিয়া গ্রামে। তাপসের ফার্মেসি রয়েছে। আর্থিকভাবেও স্বাবলম্বী। পরিবার বলতে তাঁর বাবা ও এক দাদা। মা মারা গিয়েছেন ছ’ বছর আগে। দাদা সেনাবাহিনীতে কর্মরত। ক’দিন আগেই নতুন চারচাকা গাড়ি কিনেছিলেন তাপস। সেই গাড়িতে করে বুধবার সকালে বন্ধুদের নিয়ে দীঘায় ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এক কথায় রাজি হয়ে যান শুভঙ্কর ও শুভম। বন্ধু হিসেবে সুমনের সঙ্গে তিন জনের ঘনিষ্ঠতা খুব বেশি ছিল না। সুমন পেশায় বাস চালক। তাই তাঁকে গাড়ি চালানোর জন্যই নিয়েছিলেন তাপস। তাঁকে দু’হাজার টাকাও দেবে বলে জানিয়েছিলেন তিন বন্ধু।
পেশাগত কারণে সুমন এর আগেও বহুবার রাতে গাড়ি চালিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন। তিনি অভিজ্ঞ। স্বভাবতই রাতে সুমন বাড়ি থকে বেরোতে চাইলে পরিবারের কেউ বাধা দেননি। কিন্তু বাকি তিনজনের পরিবার থেকে অল্পবিস্তর বাধা দেওয়া হয়েছিল। সেই বাধা মানলে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পড়তে হতো না বলে অক্ষেপ তিনটি পরিবারের। সুমনের পরিবারের তরফে দাবি, তাঁদের ছেলে রাতে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ। নির্ঘাৎ মাঝ পথে অন্য কেউ গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এদিন তাপসের বাড়িতে কেউ ছিলেন না। খবর পেয়েই বাবা দীঘাতে চলে গিয়েছেন। ঘর তালা বন্ধ। উঠোনে বসে বিলাপ করছেন তাঁর দুই পিসি।। তাপসের বাড়ি থেকে কিছুটা গেলেই শিমুলিয়া। সেখানেই বাড়ি শুভঙ্কর, শুভম আর সুমনের। গোটা গ্রামই থমথমে, শোকাচ্ছন্ন। তিনটি বাড়িতেই পড়শি ও আত্মীয়স্বজনদের ভিড়। সকলেই কাঁদছেন। সবার মুখে একটাই কথা, ওরা যদি গুরুজনদের কথা শুনতো, তা হলে এই দিন দেখতে হতো না।
কাঁদতে কাঁদতে শুভঙ্করের মা বন্দনাদেবী বলছিলেন, ‘আমি মেয়ের বাড়িতে ছিলাম। বউমার মুখে শুনলাম শুভ দীঘায় যাচ্ছে। আমি ওকে ফোন করি। আমি শাসনের সুরে বলি, আমি বাড়িতে নেই। তুই বউমাকে একা রেখে ঘুরতে যাচ্ছিস কেন? ও কোনও কথা না বলে ফোন কেটে দেয়। সকালে বউমা আমাকে ফোন করে। জানতে পারি ছেলে আর নেই।’ স্ত্রী রমাদেবীর কথায়, ‘বুধবার দুপুর দুটোর সময় ও আমাকে বলে রাতে দীঘায় যাবো। সন্ধ্যায় বাজার করে দেয়। আমার ওষুধও এনে দেয়। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর বেরিয়ে যায়। আমি মানা করেছিলাম। শুনল না আমার কথা।’ শুভমের বাবা সুনিলবাবুরও আক্ষেপ, ‘আমি মানা করেছিলাম। ও বলছিল কলকাতা যাবে। পরে জানতে পারি ও দীঘা যাচ্ছে।’ শোকার্ত পরিবার। নিজস্ব চিত্র