রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
এদিন কৃষ্ণনগর শহরের বিভিন্ন জায়গায় রামলালার পুজো অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রামনবমী উৎসব কমিটির তরফে চলে গেরুয়া আবির আর পতাকা নিয়ে বাইক র্যালি। একই ছবি লক্ষ্য করা গিয়েছে রানাঘাটেও। রামায়ণ অনুবাদক কৃত্তিবাসের জন্মভূমি ফুলিয়ার বয়রাতেও শ্যামাপ্রসাদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের উদ্যোগে রামনবমীর পুজো ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নদীয়া দক্ষিণের সঙ্ঘ চালক উত্তম ঘোষ। পাশাপাশি ধানতলার দত্তপুলিয়া থেকে পানিখালি পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার মেগা বাইক র্যালির আয়োজন করে বিজেপির কিষান মোর্চা। দলীয় পতাকা না থাকলেও জেলাজুড়ে রামনবমী উদযাপনের ছবিটা আদতেই পরোক্ষভাবে যে বিজেপি বা সঙ্ঘ আয়োজিত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ এদিনের শোভাযাত্রায় অংশ নিতে দেখা গিয়েছে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকারকে। এমনকী তাঁর ও দলের নেতা-কর্মীদের হাতে অস্ত্রের প্রদর্শনও চোখে পড়েছে। এছাড়া নদীয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় সহ অন্যান্য দলীয় বিধায়করাও রামনবমীর মিছিলে অংশ নেন। বিজেপির জেলা সভাপতি বলেন, রামনবমী এখন দেশের উৎসব। রামলালার আবেগে ভাসছেন দেশবাসী।
কথামৃতে ঠাকুর বলেছিলেন, ‘আমি সীতামূর্তি দর্শন করেছিলাম। দেখলাম, সব মনটা রামেতেই রয়েছে। যেন জীবনটা রামময়’। রবীন্দ্রনাথের কথায়, ‘ভারত যা চায় রামায়ণে তা পাওয়া যায়’। ‘শিক্ষার হেরফের’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, ‘কৃত্তিবাসের রামায়ণ ও কাশীরাম দাসের মহাভারত পড়িতে বসিতাম। রামচন্দ্র ও পাণ্ডবদিগের বিপদে কত অশ্রুপাত ও সৌভাগ্যে কী নিরতিশয় আনন্দলাভ করিয়াছে তাহা আজও ভুলি নাই’। ‘যুগনায়ক বিবেকানন্দে’ও উল্লেখ রয়েছে যে, ঠাকুর নরেন্দ্রকে রামমন্ত্রে দীক্ষিত করেছিলেন। এসব থেকেই যেন প্রমাণিত হয় বাঙালি জীবনে রামচন্দ্রের ভূমিকা নেহাত কম ছিল না। কিন্তু রামনবমীর দিন হিন্দি বলয়ের সংস্কৃতি বাঙালির ঐতিহ্যে জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার যে চেষ্টা, তাকে কি আদৌ গ্রহণ করতে পেরেছে বাঙালি?
শান্তিপুরের বিধায়ক তথা অদ্বৈতপাটের অন্যতম প্রধান সেবায়েত ব্রজকিশোর গোস্বামী বলেন, আমি মনে করি রামনবমীকে ঘিরে থাকা অবাঙালি সংস্কৃতি ও হিন্দি বলয়ের প্রথা এই বাংলায় কখনও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আমরা দুর্গাপুজো ও ঈদকে একসূত্রে বাঁধা সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। আমাদের দুর্গাপুজো বিশ্বের দরবারে হেরিটেজ তকমা পেয়েছে।
নাগরিকদের একাংশ মনে করছে, রামনবমীকে রাজনীতিকরণের মোড়কে এনে বিজেপি যে ধর্মীয় তাস খেলার চেষ্টা করছে, সেটা সম্পূর্ণই বাঙালি সংস্কৃতির পরিপন্থী। শান্তিপুরের বড় গোস্বামী বাড়ির রাধারমনজিউ সেবা সমিতির সম্পাদক প্রদ্যুৎ গোস্বামী বলেন, রামনবমীর জৌলুসে কোথাও যেন বাসন্তীপুজোর অষ্টমী ঢাকা পড়ে গিয়েছে। রামনবমীর এই ছবিটা বৈষ্ণব শহর শান্তিপুরে আগে কখনও দেখা যায়নি। বৈষ্ণব, শাক্ত ও শৈবের উপাসনায় এই উগ্রতা নেই। শহরের প্রবীণদের কথায়, রামনবমীর নামে আমদানিকৃত অবাঙালি সংস্কৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাঙালি যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে। রানাঘাটের প্রবীণ বাসিন্দা দেবরঞ্জন সরকার, নির্মলেন্দু চক্রবর্তী, অশোক দেবশর্মারা বলেন, রাম নাম আমাদের ধর্ম ও সংস্কৃতি অঙ্গ। কিন্তু উত্তর ভারতের সামগ্রিক সংস্কৃতির সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির মিল নেই।