শারীরিক কারণে কর্মে বাধা দেখা দেবে। সন্তানরা আপনার কথা মেনে না চলায় মন ভারাক্রান্ত হবে। ... বিশদ
ভ্রান্ত ধারণা ১
শুরুতেই ডাক্তার দেখাতে হবে না, কিছু বছর চেষ্টা করে দেখুন না।
এটা একেবারেই ঠিক নয়। সাধারণত ফার্টিলিটির জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা করতে হয় না। যদি সঠিক ফার্টাইল পিরিয়ড বুঝে দম্পতি মিলিত হন তাহলে এক বছরেই সন্তান ধারণ করার সুবর্ণ সুযোগ থাকে। পরিসংখ্যান অনুসারে ৬০ শতাংশ দম্পতিই কনসিভ করতে চাইলে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে প্রথম বারেই সফল হন। দ্বিতীয় বছরে এই সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু আজকাল সামাজিক ও পেশাগত কারণে অনেকেই একটু বেশি বয়সে মা হতে চেষ্টা করেন। তখন এক বছর ধরে সাফল্য না এলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
ভ্রান্ত ধারনা ২
একজন ডাক্তার দেখালেই হল!
সন্তান ধারণে অসফল হয়ে অনেকেই যখন কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন, তা নিয়ে দ্বন্দ্বে ভোগেন। কেউ আবার যে কোনও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে যান। কিন্তু এখানেই বিচক্ষণতার প্রয়োজন। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হয়তো আপনার সমস্যার কথা বুঝতে পারবেন। কিন্তু সঠিক সমাধান পেতে অবশ্যই বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞের বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ যাঁর বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসারও অভিজ্ঞতা আছে, তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে, সরসরি সুপ্রজনন বিশেষজ্ঞই সঠিক পথ দেখাতে পারবেন।
ভ্রান্ত ধারণা ৩
বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা করাতে হলে পরীক্ষা নিরীক্ষাতেই বহু খরচ হয়!
না, এভাবে সরলীকরণ করা ঠিক হবে না। সামান্য কয়েক হাজার টাকা খরচ করলেই ইনফার্টিলিটির প্রাথমিক কারণ সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞ ধারণা করতে পারেন। মহিলাদের জন্য পেলভিক আল্ট্রাসাউন্ড, ওভারিয়ান রিজার্ভ দেখে নেওয়া ফ্যালোপিয়ন টিউবের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা যেমন বাধ্যতামূলক, তেমনি পুরুষদের থ্যালাসেমিয়া, রুবেলা ও কিছু হরমোন সংক্রান্ত পরীক্ষা করাও জরুরি। আর এই কয়েকটি পরীক্ষা করালেই বিশেষজ্ঞ ইনফার্টিলিটির মূল কারণটি অনুধাবন করতে পারেন।
ভ্রান্ত ধারণা ৪
বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা মানেই দেদার খরচ!
পুরোপুরি ঠিক নয়, এমন ভাবনা। তিনটি উপায়ে পরিস্থিতি অনুসারে চিকিৎসা করা হয়। যাঁদের ওভুলেশনের সমস্যা তাঁদের ওষুধ দিয়ে ওভুলেশন করানো হয়। এতে ডিম্বাশয়ে বেশি করে ডিম্বাণু তৈরি হয়। এর জন্য নিয়মিত ওভারি পরীক্ষা করতে আল্ট্রা সোনোগ্রাফি করাতে হয়। এই পদ্ধতি খুব বেশি খরচ সাপেক্ষ নয়।
এছাড়া পুরুষের শুক্রাণু উৎপাদন নিয়ে সমস্যা থাকলে ইন্ট্রা ইউটেরাইন ইনসেমিনেশন করা হয়। যা টেস্টিস থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করে নারীর ইউটেরাসে প্রবেশ করাতে হয়। এই পদ্ধতি প্রয়োগে খুব বেশি হলে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। কিন্তু যাঁদের পরিস্থিতি আরও একটু জটিল তাদের জন্য ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়। যার পরিচিত নাম টেস্ট টিউব বেবি হিসেবে। এটি একটু জটিল প্রক্রিয়া। এর জন্য উন্নত প্রযুক্তি, ভালো ল্যাবরেটরি ইত্যাদি প্রয়োজন। ফলে খরচ অন্য প্রক্রিয়া গুলির চাইতে বেশি। আনুমানিক এক লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা খরচ হতে পারে এর জন্য। তাই বন্ধ্যাত্বের সব চিকিৎসাই কিন্তু খুব খরচের তেমন নয়।
ভ্রান্ত ধারণা ৫
টেস্ট টিউব বেবি মানেই জন্মগত ত্রুটি অথবা কম বুদ্ধি সম্পন্ন হবে!
বেশ হাস্যকর ভাবনা! এত দিন ধরে গোটা বিশ্বে কয়েক কোটি শিশু এই পদ্ধতিতে জন্ম নিয়েছে। কোথাও এমন অভিযোগ নেই। আর ক্রোমোজমের ত্রুটি স্বাভাবিক উপায়ে কনসিভ করলে যেমন থাকে এ ক্ষেত্রেও একই রকম থাকে।
ভ্রান্ত ধারণা ৬
কনসিভ করলেই সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান কনসিভ করলে তাকে বিছানায় শুয়ে থাকার নির্দেশ দেয় না। উল্টে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করার পরামর্শই দেয়।
ভ্রান্ত ধারণা ৭
আইভিএফ-এর দ্বারা কনসিভ করলে সিজারিয়ান ডেলিভারি ছাড়া হয় না। আর দ্বিতীয়বার স্বাভাবিক গর্ভধারণ করাও সম্ভব হয় না।
এমন ধারণাও একেবারেই ঠিক নয়। বহু মহিলারই ইনফার্টিলিটির চিকিৎসা করিয়ে বা আইভিএফ-এর দ্বারা কনসিভ করে নর্মাল ডেলিভারি হয়েছে। আর প্রথম বার আইভিএফ করার পর দ্বিতীয় বার স্বাভাবিক উপায়ে কনসিভ করার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
ভ্রান্ত ধারণা ৮
মেনোপজের পর আর আইভিএফ করিয়ে কী লাভ!
ঠিক না। ডোনার এগ নিয়েও মেনোপজের পর সন্তানধারণ করা সম্ভব। অবশ্য তার জন্য ইউটেরাসকে সঠিক ভাবে প্রস্তুত করে নিতে হয়।
ভ্রান্ত ধারণা ৯
এক বার অসফল হলে আর
আশা নেই!
বন্ধ্যাত্বের অভিঘাত কঠোর। কিন্তু এমন ভুল মন্তব্য বহু মানুষের আশার প্রদীপ নির্বাপিত করতে পারে। অসংখ্য মহিলার ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে দ্বিতীয় বার আইভিএফে নিশ্চিত সাফল্য পেয়েছেন। তাই ভ্রান্ত ধারণা ছাড়ুন। সঠিক তথ্য আর ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে পরিস্থিতি বিচার করুন। সাফল্য আসবেই।