ধনাগম যোগটি অনুকূল। দুপুর থেকে কর্মের বাধা মুক্তি ও উন্নতি। শরীর-স্বাস্থ্য সমস্যার যোগ। ... বিশদ
হলদিয়ার মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিক সুমনকুমার সাহু বলেন, বর্ষায় ভাইরাস, ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে মাছের ক্ষত রোগ দেখা দিতে পারে। প্রথমে আক্রান্ত মাছের দেহে লাল ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। মাছ ঝিমিয়ে পড়ে। তখন মাছের গতি কমে যায়। ক্রমে ওই দাগ মাছের শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এই দাগগুলিই পরে ক্ষতের আকার ধারণ করে। ধীরে ধীরে সেই জায়গা পচতে আরম্ভ করে। মাছের পিঠের দিকের মাংস খসে যেতে থাকে। শিড়দাঁড়া আলগা হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত মাছের মৃত্যু হয়। এর প্রধান কারণ, বর্ষার সময় বাইরের জল প্রবেশ করে পুকুরের জলকে দূষিত করে তোলে।
সুমনবাবু আরও জানান, এই সময় মাছের শরীরে দাগ ছাড়াও ফুলকার রোগ দেখা যায়। প্রথমে ফুলকায় কালো দাগ দেখতে পাওয়া যায়। তারপর ধীরে ধীরে পুরো ফুলকা পচে যায়। এই রোগ তখন পুকুরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফুলকা পচা রোগে বেশিরভাগ মাছই মারা যায়।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মাছকে সুস্থ রাখতে হলে এই সময় চাষিদের কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। প্রতিদিন জলাশয় পরিদর্শন করে সতর্ক থাকতে হবে। প্রথমত এই সময়ে পুকুরে সার ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। মেঘলা বা বৃষ্টির দিন সার প্রয়োগ করা যাবে না। পুকুরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। মাছ ছাড়ার আগে পুকুরের জলজ আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে। পুকুর জীবাণুমুক্ত করে সঠিক সংখ্যায় সুস্থ ও সবল চারাপোনা ছাড়তে হবে। যেসব পুকুরে মাছ আছে, সেখানে জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার।
মাছের ক্ষত রোগ দেখা দিলে প্রতি শতক পুকুরে এক কেজি চুন ও এক কেজি নুন প্রয়োগ করতে হবে। ফুলকা পচা রোগ থেকে মাছকে বাঁচাতে পর্যাপ্ত চুন প্রয়োগ করতে হবে। বাইরের নোংরা জল এসে পড়লে পুকুরের জল ঘোলা হয়ে যায়। এই ঘোলা দূর করতে হবে। পিএইচ ৭-এর নীচে নেমে গেলে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুকুরে মাছ মরতে শুরু করলে বেশিরভাগ মাছ চাষি কিছু ব্যবস্থা না নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। তাতে মাছ মরার সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। চাষিদের ধৈর্য্য ধরে মাছের মৃত্যুর উপসর্গ দেখতে হবে। প্রতিদিন কত সংখ্যায় মাছ মরছে সেটা বড় বিষয়। পুকুরে মাছ ভেসে উঠলে কিংবা খাবি খেতে থাকলে অথবা মৃত মাছের মুখ খোলা থাকলে বা ফুলকা দেখতে ফ্যাকাশে, বিবর্ণ হলে বুঝতে হবে জলে অক্সিজেনের অভাব হয়েছে। তখন দ্রুত অক্সিজেনের জোগান দিতে হবে। এছাড়া বর্ষার সময়ে মৃত অথবা জীবিত মাছের শরীরে ও ফুলকায় অত্যাধিক মিউকাস দেখা গেলে বুঝতে হবে, পুকুরের জলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অথবা পিএইচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য পুকুরে সঠিক পরিমাণে জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে। সদ্য মৃত বা খাবি খাওয়া মাছের ফুলকার রং গাঢ় লাল হলে বুঝতে হবে জলে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। এজন্য পুকুরে নুন ও চুন দিতে হবে। যদি পুকুরের তলদেশে বসবাসকারী মাছ মারা যায় অথবা পুকুরের কাদার গন্ধ পচা ডিমের মতো হয়, তাহলে চুনের পরিমাণ বাড়িয়ে প্রতি ডেসিমেলে ৫০০ গ্রাম দিয়ে পুকুরের তলার মাটি ঘেঁটে দিতে হবে।