মুম্বইয়ের ‘ফার্স্ট এডিশন আর্টস’ নিবেদিত ‘পাস্ট/প্রেজেন্ট’ শীর্ষক তিনদিনব্যাপী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলন সম্প্রতি শোভাবাজার রাজবাড়ির নাটমন্দিরে অনুষ্ঠিত হল। প্রথম দিনের অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয় জয়পুর ঘরানার শিল্পী রঞ্জনী রামচন্দ্রনের কণ্ঠসঙ্গীতের মাধ্যমে। শিল্পী প্রথমে শ্রী রাগে ঝুমরা তালে একটি বন্দিশ গেয়ে শোনান। পরে শঙ্করা রাগে একতালে ও তিনতালে নিবদ্ধ দুটি বন্দিশ ও শেষে তিনতালে রাগ বসন্ত-বাহার গেয়ে শোনান। শিল্পীকে তবলায় সঞ্জয় অধিকারী এবং হারমোনিয়ামে চিন্ময় কোলাতকর যোগ্য সহযোগিতা করেন। লখনউ ঘরানার প্রবাদপ্রতিম তবলিয়া পণ্ডিত স্বপন চৌধুরী তিনতালে তবলা লহরা বাজিয়ে শ্রোতাদের মোহিত করে দেন। পেশকার, কায়দা-রেলা, কিছু নির্বাচিত টুকরা, পাখোয়াজ বোল-বাট, তিস্র জাতির বিস্তার, আবিদ হোসেন খান সাহেব, খালিফা ওয়াজিদ হোসেন খান সাহেব প্রমুখ উস্তাদের বেশ কিছু অমূল্য খাস চিজ, ত্রিপল্লি এবং সন্তানসম শিষ্যর স্মরণে একটি চৌগুণ চক্রধর বাজিয়ে এদিনের অনুষ্ঠান শেষ করেন। সারেঙ্গীতে দিলশাদ খানের সঙ্গত উপরি পাওনা। সম্মেলনের দ্বিতীয়দিনের অনুষ্ঠান শুরুতে নবীন সরোদিয়া অভিষেক বোরকার ইমন রাগে আওচার এরপর তিনতালে বিখ্যাত ও বহুশ্রুত তিনটি বন্দিশ পরিবেশন করেন। শিল্পীর সুমিষ্ট হাতের টিপ্, মীড় তানকারী শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যায়। স্বল্প পরিসরে রাগ হেমন্ত বাজিয়ে অভিষেক তাঁর অনুষ্ঠান শেষ করেন। শিল্পীকে তবলায় যোগ্য সহযোগিতা করেন দেবজিৎ পতিতুন্দী। দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানের শেষ শিল্পী ছিলেন পণ্ডিত ভেঙ্কটেশ কুমার। যথারীতি শিল্পী তাঁর বলিষ্ঠ কণ্ঠ, পুকার ও আকার তানের মায়াজালে শ্রোতাদের মাতিয়ে দেন। প্রথমে রাগ শুদ্ধ কল্যাণ, পরে দুর্গা এবং বসন্ত বাহার গেয়ে শোনান। ভৈরবী রাগাশ্রিত ভজন ‘শ্যাম সুন্দর মদন মোহন’ গেয়ে শিল্পী তাঁর অনুষ্ঠান শেষ করেন। তবলায় সমর সাহা এবং হারমোনিয়ামে জ্যোতি গোহ সুনিপুণ সঙ্গত করেন। তবে একটা কথা বলা প্রয়োজন যে রাগ চয়ন ও পরিবেশনের মধ্যে কোথাও যেন একঘেয়েমী মনে হওয়াটা কাম্য নয়। সঙ্গীতমহলে রুদ্রবীণা বাদক কার্স্টেন উইকি এখন এক পরিচিত নাম। সম্মেলনের তৃতীয় দিনের শুরুতে উনি মারওয়া রাগে আলাপ, জোড় ও ঝালার পর ধামারে একটি বন্দিশ বাজিয়ে শোনান। পরবর্তী নিবেদন ছিল সুরফাক তালে রাগ সোহিনী। সঙ্গতে মোহনশ্যাম শর্মার পাখোয়াজ আগাগোড়া বিশ্বস্ত ছিল। ভূপ (ভূপালী) রাগে জ্ঞান সরস্বতী কিশোরী আমানকরজির একটি বিলম্বিত তিনতাল ও পরে দ্রুত বন্দিশ গেয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন কণ্ঠসঙ্গীতশিল্পী প্রতিমা তিলক। অত্যন্ত সুরেলা ও বলিষ্ঠ কণ্ঠে জয়পুর অত্রউলি ঘরানার এই শিল্পী পরবর্তী নিবেদনে রাগ বিহারী গেয়ে শোনান। শেষে শিল্পী নট কামোদ পরিবেশন করেন। নট অঙ্গ ‘রেগ’ ‘মপ’ ভারী সুন্দর প্রয়োগ করেন শিল্পী। মুম্বইয়ের প্রবীণ তবলিয়া পণ্ডিত ওমকার গুলবাদী এবং হারমোনিয়ামে চিন্ময় কোলাতকর সুন্দর সঙ্গত করেন। তৃতীয় দিনের তথা সম্মেলনের শেষ শিল্পী ছিলেন পণ্ডিত বুধাদিত্য মুখোপাধ্যায়। ইমন কল্যাণ রাগে আওচারের পর শিল্পী প্রথমে মধ্যলয় তিনতাল ও পরে নন্দ রাগে একটি দ্রুত তিনতালে বন্দিশ বাজিয়ে শোনান। গায়কী অঙ্গের এই বাজনায় শিল্পী অনবদ্য কিছু মীড়, ঘাসিট, একহারা তান ও ছুটতান উপহার দেন। উদীয়মান তবলিয়া সৌমেন নন্দীর সংযত ও প্রাণবন্ত সঙ্গত প্রশংসার দাবি রাখে।

অমিত চক্রবর্তী
ছবি: প্রতিবেদক