রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
১৯৪৫ সালের ১ ডিসেম্বর। গান্ধীজি পৌঁছেছেন সোদপুর খাদি প্রতিষ্ঠান আশ্রমে। জওহরলাল নেহরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল থেকে শুরু করে আসছেন দেশের তাবড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। রোজ বিকেলে শুরু হতো প্রার্থনা সভা। হাজার হাজার মানুষ তাতে যোগ দিতেন। জনতার সে এক বিরাট উৎসব। এই ভিড় সামাল দিতে ১৯৪৬ সালের ৭ জানুয়ারি শিয়ালদহ থেকে সোদপুর স্পেশাল ও সোদপুর-নৈহাটি স্পেশাল লোকাল ট্রেন চালু করেছিল ইংরেজরা। প্রায় একমাস অতিক্রান্ত। গান্ধীজিকে মাদ্রাজ যেতে হবে। ১৯ জানুয়ারি মাদ্রাজ যাওয়ার দিন স্থির হল। সবাই ভাবলেন, কলকাতা শহর থেকে গঙ্গা পেরিয়ে হাওড়া পৌঁছে দেওয়া হবে তাঁকে। সেখান থেকেই মাদ্রাজ যাওয়ার ট্রেন ধরবেন বাপুজি। কিন্তু অন্যরকম ভেবেছিলেন জাতির জনক। তিনি বললেন, আশ্রমের বাইরেই তো সোদপুর রেল স্টেশন। সেখান থেকেই ট্রেন ধরলে আর গাড়ি পাল্টানোর ঝঞ্ঝাট পোহাতে হয় না। সোদপুর হচ্ছে গঙ্গার পূর্ব তীরে বেঙ্গল-অসম রেলপথের উপর শহরতলির একটি ছোট্ট স্টেশন। সেক্ষেত্রে গঙ্গার পশ্চিম তীরের রেল পথের বিন্যাস একেবারেই আলাদা। সরাসরি সোদপুর থেকে মাদ্রাজ ট্রেনে যাওয়ার কোনও লাইনও নেই।
সেই সময়ে গান্ধীজির দূত হিসাবে সোদপুরের খাদি আশ্রমে ছিলেন সুধীর ঘোষ। গান্ধীজির ইচ্ছের কথা জেনেই দৌড়লেন রেলের বড় কর্তাদের কাছে। ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার এন সি ঘোষের অফিসে গিয়ে জানালেন গান্ধীজির পরিকল্পনা। বললেন, গান্ধীজির ছোট্ট তৃতীয় শ্রেণির স্পেশাল ট্রেনটি যদি সোদপুরের স্টেশন থেকে বালি ব্রিজ হয়ে গঙ্গার ওপারের ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ের মধ্যে গিয়ে ঢোকে? তাহলে সেখান থেকে কোনও একটা জায়গাতে তাঁরা কি ট্রেনটিকে বেঙ্গল-নাগপুর রেলওয়ের মধ্যে যোগ করে দিয়ে সরাসরি তাঁর মাদ্রাজ যাবার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন না?
বেঙ্গল-নাগপুর রেলওয়ে আসছে দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারত থেকে। ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে আসছে উত্তর ভারত থেকে। তারা হাওড়া স্টেশনে মিলেছে। কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে থেকে একটি ট্রেনকে বেঙ্গল-নাগপুর রেলওয়েতে ঢোকানোর মতো কোনও যোগসূত্র আছে কি না কোনও আধিকারিক কিছু বলতে পারছেন না। এন সি ঘোষ তখন বেঙ্গল-অসম, ইস্ট ইন্ডিয়ান ও বেঙ্গল-নাগপুর রেলওয়ের তিন চিফ ইঞ্জিনিয়ারদের জরুরি বৈঠকে ডেকে পাঠালেন। রেলপথের যাবতীয় নকশা ও ড্রইং তলব করা হল। দীর্ঘ পর্যালোচনায় দেখা গেল, শালিমার ইয়ার্ড টার্মিনালের কাছে তেমন একটা যোগসূত্র আছে। তবে ইতিপূর্বে আর কখনও সেটা যাত্রীবাহী ট্রেন নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার হয়নি। এমনকী, ওই লাইনে মালগাড়ি চলাচলও বহুদিন বন্ধ। দু’টি লাইনের মাঝে দূরত্ব প্রায় ১৫-২০ মাইল। সেই লাইনকে আবার জীবিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হল।
১৯৪৬ সালের ১৯ জানুয়ারি, দুপুর আড়াইটে। গান্ধীজির তৃতীয় শ্রেণির স্পেশাল ট্রেনটি সোদপুর স্টেশন থেকে রওনা হল মাদ্রাজের উদ্দেশ্যে। গঙ্গা পার হয়ে, ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ের মধ্যে ঢুকে, শালিমার ইয়ার্ডের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করল বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ের মধ্যে। তৈরি হল এক নতুন ইতিহাস।