স্বরূপ কুলভী: এখন বিভিন্ন দেশ চন্দ্রাভিযানে নেমেছে। কিছুদিন আগে ভারতের চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রেখেছিল। চাঁদের বুকে ঘোরাফেরা করে গবেষণা চালিয়েছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর চন্দ্রযান ৩-এর রোভার প্রজ্ঞান। এখন অবশ্য চিরঘুমে ঢলে পড়েছে সে। শুধু মহাকাশযানই নয়, প্রায় পঞ্চাশ বছর আগেই মানুষ পৌঁছে গিয়েছিল চাঁদে। ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদের মাটিতে পা রাখেন মার্কিন নভশ্চর নীল আর্মস্ট্রং। কিন্তু আমাদের উপগ্রহের পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে বিস্ময়। আর তা সন্ধানে অভিযানও চালাচ্ছে একের পর এক দেশ। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা তো আরও একবার চাঁদে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। ভবিষ্যতে হয়তো চাঁদে খানিক বেড়িয়ে আসার স্বপ্নও সফল হতে পারে। পূর্ণিমার রাতে চাঁদের মায়াবী রূপ দেখে হয়তো মনে হতে পারে, সেখানকার প্রকৃতিও বুঝি এমনই স্নিগ্ধ। কিন্তু বাস্তবে কিন্তু মোটেই তা নয়। তাহলে চাঁদের তাপমাত্রা কেমন? সেখানে কখনও বৃষ্টি হয় না। শন শন করে ঝড়ও বয়ে যায় না। স্লেটের মতো নিকষ কালো চাঁদের আকাশে মেঘও জমে না। আসলে পৃথিবীতে যেমন আবহাওয়া থাকে, চাঁদে কিন্তু মোটেই এমন নয়। সেখানে দিনের সঙ্গে রাতের তাপমাত্রার বিস্তর ফারাক। রাতে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা, দিনে গনগনে গরম। তার তাপমাত্রার এই পরিবর্তন রয়ে সয়ে হয় না। তা হয় অত্যন্ত দ্রুত ও নাটকীয়ভাবে। সূর্য অস্ত গেলেই চাঁদের তাপমাত্রা হুহু করে নামতে থাকে। চাঁদের নিরক্ষরেখা এলাকায় তাপমাত্রা কমে প্রায় মাইনাস ১৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। আর দিনের আলো ফুটতে শুরু করলেই চড়চড় করে বেড়ে পারদ পৌঁছে যায় ১২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। নাসা এই তথ্য জানিয়েছে। আমাদের এখানে গরমে পারদ ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পারদ পৌঁছলেই কেমন গলদঘর্ম হয়ে পড়ি আমরা। আর শীতে ১০-১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই কেমন কাঁপুনি লেগে যায়। তাহলেই বুঝতে পারছ, চাঁদে মানুষ গেলে কোনও সাধারণ পোশাকে কাজ হবে না। এজন্য পরতে হবে বিশেষ স্পেসস্যুট।
যাই হোক। এখন প্রশ্ন হল চাঁদে দিনে-রাতের তাপমাত্রার এত ফারাক কেন? আসলে পৃথিবীর মতো চাঁদের কোনও বায়ুমণ্ডল নেই। বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর ছাদের মতো কাজ করে। তা তাপ ধরে
রাখে। সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছয়। কিন্তু বাযুমণ্ডলের জন্য এর সবটা বেরিয়ে যেতে পারে না। এর জন্য তাপমাত্রায় একটা ভারসাম্য থাকে। সূর্য অস্ত গেলেও পৃথিবীর তাপমাত্রা চাঁদের মতো ঝপ করে পড়ে যায় না।
আরও একটা কারণ রয়েছে। পৃথিবীর নিজের অক্ষের চারদিকে ঘুরতে ২৪ ঘণ্টা সময় নেয়। তাই একটি দিন মানে ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু চাঁদ নিজের অক্ষে ঘুরতে সময় নেয় পৃথিবীর ২৭ দিনের সামান্য বেশি। সেজন্য সেখানে একটানা প্রায় ১৩ দিন সূর্যের আলো থাকে। আর অন্যদিকে ১৩ দিন থাকে অন্ধকার। আর আলো থাকার সময় তাপমাত্রা প্রচুর বেড়ে যায়। আর অন্ধকার হলেই তা একেবারেই কমে যায়। কারণ, বায়ুমণ্ডল না থাকার কারণে চন্দ্রপৃষ্ঠ তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারে না। তাই যতক্ষণ আলো থাকে, ততক্ষণ তাপ। রাত হলেই হিম শীতলতা। চাঁদের মেরুর সব জায়গায় আলো পৌঁছয় না। সেই চির ছায়াচ্ছন্ন অংশের তাপমাত্রা আরও কম। নাসার তথ্য অনুযায়ী, ওই অঞ্চলে তাপমাত্রা মাইনাস ২৪৬ ডিগ্রিরও কম।