সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা, আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
আইনি লড়াইটা শুরু হয়েছিল ১৩৪ বছর আগে। আর দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে টানাপড়েনটা চলছিল তারও অনেক আগে থেকেই। পাঁচ শতাব্দী ধরে চলতে থাকা এই টানাপড়েনে ইতি পড়ুক এবার—চাইছিল সব পক্ষই। সম্প্রতি দেশের প্রধান বিচারপতিও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন—আর চলতে দেওয়া যায় না এই দড়ি টানাটানি। অবশেষে ইতি পড়ল সেই দড়ি টানাটানিতে। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ তৈরি হওয়ার ৪৯১ বছর পরে ভারতের সর্বোচ্চ বিচারপতিরা জানালেন—হিন্দুদের বিশ্বাসের ‘রামজন্মভূমি’তে মন্দিরই হবে। শনিবার সুপ্রিম কোর্টে অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণা দিয়েই সেই দীর্ঘ বিতর্কের অবসান ঘটে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে অযোধ্যা মামলার রায় দেন সর্বোচ্চ আদালতের পাঁচ বিচারপতি। অযোধ্যা মামলার রায় দিয়ে বিচারপতিরা জানিয়েছেন, বিতর্কিত জমির মালিকানা পাচ্ছে রাম জন্মভূমি ন্যাস। সেখানেই ট্রাস্টের অধীনে রামমন্দির তৈরির কাজ শুরু হবে। তিনমাসের মধ্যে ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে মন্দির তৈরির বন্দোবস্ত করারও নির্দেশ দিয়েছে। মসজিদের জন্য বিকল্প ৫ একর জমি দেওয়া হবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে। অতএব, ‘মন্দির ওহি বানায়েঙ্গে’—করসেবকদের স্লোগানই সত্যি হল। অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতেই তৈরি হতে চলেছে রামমন্দির। যে ২.৭৭ একর জমিতে ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বরের আগে পর্যন্ত মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল সাড়ে চারশো বছরের বেশি পুরনো বাবরি মসজিদ। নেপথ্যে? লালকৃষ্ণ আদবানি। যে বীজ তিনি পুঁতেছিলেন অযোধ্যার মাটিতে। দিনের পর দিন জল-আলো-বাতাস পেয়ে তা আজ বিরাটাকার ধারণ করেছে। তবে গেরুয়া শিবিরের একাংশের আক্ষেপ, এই ঐতিহাসিক দিনের সাক্ষী থাকতে পারলেন না অটলবিহারী বাজপেয়ি, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, হিন্দুরা লাগাতার মসজিদের বাইরের জমিতে পুজো করেছে, তার প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু, ১৮৫৭-র আগে সেখানে মুসলিমদের নমাজের প্রমাণ মেলেনি। তাই সম্ভাবনার ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে বলা যায়, মুসলিমদের তুলনায় হিন্দুদের প্রমাণ অনেক মজবুত। অথচ, যে নির্মোহী আখড়া মসজিদের বাইরের জমিতে রাম চবুতরা গড়ে লাগাতার পুজো চালিয়ে গিয়েছিল, সেবায়েত হিসেবে তাদের দাবিই খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
রায় ঘোষণার সময় করতারপুর করিডর উদ্বোধনে ব্যস্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পরে ট্যুইট করেছেন, ‘‘রায় কারও জয় বা পরাজয় নয়। রামভক্তি হোক বা রহিম-ভক্তি, রাষ্ট্রভক্তিকেই শক্ত করতে হবে।’’ দিল্লিতে ফিরে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় মোদি বলেছেন, ‘‘৯ নভেম্বরই বার্লিনের দেওয়াল ভেঙে দুই বিপরীত বিচার ধারা একজোট হওয়ার পণ করেছিল। আজ ৯ নভেম্বর যে করতারপুর করিডর খুলে গেল, তাতে ভারত-পাকিস্তান দু’দেশেরই সহযোগ রয়েছে। অযোধ্যার রায়ও আমাদের একসঙ্গে এগনোর শিক্ষা দিচ্ছে। আজকের ভারত যুক্ত করার, মিলেমিশে বাঁচার। দুনিয়া আজ জেনে গেল, ভারতের গণতন্ত্র কত শক্তিশালী। বিবিধতায় ঐক্যের ছবি দেখল বিশ্ব। গর্বের বিষয়। কারও মনে কোথাও কোনও কটু ভাব থাকলে আজ তিলাঞ্জলি দেওয়ার দিন। নতুন ভারতে ভয়, কটুতা, নেতিবাচক কিছুর স্থান নেই। নতুন প্রজন্মকে ‘নতুন ভারত’ নির্মাণে শামিল হতে হবে। ‘সবকা বিশ্বাস’ অর্জনের নীতিতে অটল থেকে খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের সঙ্গে চলতে গিয়ে কেউ পিছিয়ে পড়ে নেই তো?’’ একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ইদের শুভেচ্ছাও জানান। এই ইশারাতেই স্পষ্ট, দেশের সংখ্যালঘুর মন জয় করে নতুন জমির সন্ধানে নামছে বিজেপি। অযোধ্যা রায়কে সামনে রেখে সেই অঙ্কই কষা হচ্ছে। এতে সম্প্রীতিও থাকবে, বিজেপির ভোট পরিসরও বাড়বে। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’, ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর মতো অধিকাংশ আন্তর্জাতিক দৈনিকের এক সুর, এই রায় মোদির জয় এবং তাঁর হাত আরও শক্ত করবে।