ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
কেন্দ্রীয় সরকার যে নতুন মোটর ভেহিকলস আইন এনেছে, তা কার্যকর হওয়ার কথা আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে। এমনিতেই ট্রাফিক পুলিসের ‘অতি সক্রিয়তা’ নিয়ে বহু মানুষই অভিযোগ তোলেন। তার উপর এই আইন কিন্তু গোদের উপর বিষফোঁড়া। কারণ, বিভিন্ন অপরাধে এই আইন মোতাবেক গাঁট কাটা যাবে বর্তমানের তুলনায় পাঁচ থেকে দশগুণ। মানুষের সমস্যার কথা ভেবে রাজ্য সরকার এই আইন কার্যকর না করারই যে সিদ্ধান্ত আপাতত নিয়েছে, তা প্রাথমিকভাবে সাধুবাদযোগ্য। কারণ, পথে নেমে সামান্য অপরাধে বিশাল অঙ্কের টাকা গুনাগার দিতে হলে স্বাভাবিকভাবেই জেরবার হতে হবে অসহায় মানুষকে। ফলে জরিমানার অঙ্ক নিয়ে রাজ্য সরকারের আপত্তি এক কথায় যুক্তিসঙ্গতই। কিন্তু বেলাগাম এবং আইনভঙ্গকারী গাড়ি চালকদের বাগে আনতে জরিমানার সংস্থান উঠে যাবে, এটা তো কোনও সচেতন এবং সুস্থমস্তিষ্কের মানুষ চাইবেন না। অথচ এত কড়াকড়ি এবং এত জরিমানা আরোপ করার পরও আমরা চারপাশে দেখতে পাচ্ছি, আইন ভাঙার ঘটনা সমানেই ঘটে চলেছে। সম্প্রতি কুঁদঘাটে ভয়াবহ এক বাস দুর্ঘটনায় এক যাত্রীর হাতের অর্ধেক অংশই কাটা পড়েছিল। দুটি বাসের রেষারেষিতে একই ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল গড়িয়াহাটে। সেখানে বাসের ভিতর বসে থাকা এক যাত্রী ছিটকে এমনভাবে উল্টোদিকে গিয়ে পড়েছিলেন যে তাঁর কান ছিঁড়ে যায়। এমন সব ঘটনা অহরহই ঘটে চলেছে। হেলমেট নিয়ে কড়াকড়িও তো কম হয়নি। কিন্তু নিত্যদিনই সংবাদপত্রের পাতায় চোখ রাখলে দেখা যায়, শিশুদের নিয়ে পর্যন্ত বিনা হেলমেটে বাইক নিয়ে অবলীলায় শহরের পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেকে। যাঁরা এসব ধরবেন, সেই পুলিসকর্মীরাও প্রায়শই হেলমেট ছাড়াই বাইকে সওয়ার হন। অর্থাৎ, শুধু আইন দিয়ে, ভয় দেখিয়ে, এমনকী জরিমানার অঙ্ক এক লাফে কয়েকগুণ বাড়িয়েও যে মানুষকে আইন রক্ষার রাস্তায় ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না, এই ধরনের একাধিক ঘটনা তারই প্রমাণ।
তাই এমন একটা সময়ে সবচেয়ে জরুরি হল মানুষকে সচেতন করায় সর্বাধিক জোর দেওয়া এবং একইসঙ্গে চালক ও কর্মীদের প্রশিক্ষণে নজর দেওয়া। পুলিসের একাংশ জোর করে টাকা তোলে বলে যে অভিযোগ ওঠে, সে ব্যাপারে মঙ্গলবারের বৈঠকে খোদ পুলিস কমিশনার ট্রাফিক বিভাগের কর্তাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি যথার্থই বলেছেন, ট্রাফিক আইন অমান্যের ঘটনা যাতে কমানো যায়, সেদিকেই সর্বাগ্রে নজর দেওয়া দরকার। অর্থাৎ, জরিমানা আদায়ই যে মূল লক্ষ্য হতে পারে না, সেকথাই তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি পুলিস কচিকাঁচাদের কথা ভেবে স্কুলে স্কুলে প্রচার শুরু করেছে। যাঁদের নামে প্রচুর ট্রাফিক আইন ভাঙার কেস রয়েছে, খুঁজে খুঁজে সেই তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য, তাঁদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা। টিনএজারদের হুঁশ ফেরাতে তাদের পরিজনদেরও ডেকে পাঠিয়ে কথা বলার কাজও শুরু হয়েছে। তাই একটা বিষয় পরিষ্কার। বলপূর্বক জরিমানা আরোপ, জরিমানার অঙ্ক আকাশছোঁয়া করে সরকারের তহবিল ভরানোর রাস্তা ছেড়ে মানুষের চেতনা বৃদ্ধির যে প্রয়াস শুরু হয়েছে, তাতেই হয়তো আকাঙ্ক্ষিত ফল মিলতে পারে। তাই সেদিকেই জোর দেওয়া এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।