ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
অনেকের প্রত্যাশা ছিল যে সরকারের এইসমস্ত কড়া দাওয়াই পেয়ে অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটবে শিল্পোৎপাদনে, কৃষি উৎপাদনে, জিডিপিতে এবং রাজস্ব সংগ্রহে। বাড়বে দেশি ও বিদেশি লগ্নি, শিল্পঋণ (ক্রেডিট গ্রোথ)। মোদিজির প্রতিশ্রুতি মতো চাকরির বাজারে জোয়ার আসবে। কমবে বাণিজ্য ঘাটতি এবং ফিসকাল ঘাটতি। কিন্তু, মোদি সরকারের প্রথম টার্মের মেয়াদ শেষের ছবিটি মোটেই আশাব্যঞ্জক ছিল না। বরং, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থতার ছবি প্রকট হয়ে উঠেছিল। তা সত্ত্বেও, ২০১৯-এ দেশবাসী আস্থা রেখেছে মোদিজিরই নেতৃত্বে। তারা ধরে নিয়েছে, প্রথমবার গৃহীত পদক্ষেপগুলির সুফল পেতে কিছু সময় দরকার। অতএব, মোদিজির আর-একটি সুযোগ প্রাপ্য। অর্থাৎ উপর্যুপরি দু’বার কেন্দ্রে মজবুত স্থিতিশীল সরকার তৈরির পক্ষে রায় দিয়েছে দেশবাসী। কাশ্মীর এবং তিন তালাকের মতো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে, তার শক্তি কতখানি। শক্তির প্রশ্নে এই সরকার বাজপেয়ি তো বটেই নেহরু, ইন্দিরা, রাজীব প্রভৃতির থেকে কোনও অংশে কম নয়। প্রশ্নটা এখানেই, তাহলে অর্থনীতির স্টিয়ারিং হাতে এমন একটি মজবুত সরকারের সামাল সামাল অবস্থা কেন? কেন এই সরকার ৪৫ বছরের ভিতরে সবচেয়ে বেশি বেকারত্ব দেখাল? কেন এই সরকার দেশকে সাত দশকের ভিতরে সবচেয়ে দুর্বল অর্থনীতির ভিতের উপর দাঁড় করাল। কেন এই সরকার ব্যাঙ্ক-ব্যবস্থাকে সবচেয়ে দুর্বল করে ফেলল? কেন এই সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রটিকে দুর্বলতর করে ফেলল? কেন এই সরকার টাকার দামের রেকর্ড পতনের সাক্ষী করল দেশকে? কেন এই সরকার সঙ্কট মোকাবিলায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের খয়রাতির দ্বারস্থ হওয়ার মতো একটি কৃষ্ণকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করল? এই পরিস্থিতির জন্য মোদি সরকার আর যাই হোক বিরোধীদের, এমনকী এনডিএ জোটসঙ্গীদেরও দুষতে পারবে না। কারণ, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি গ্রহণে এই সরকার বিরোধীদের তো বটেই, সরকারের বন্ধু দলগুলিকেও পরোয়া করে না।
কিন্তু এই কুছ পরোয়া মনোভাবে দেশের তো কোনও ভালো হচ্ছে না। মানুষের আয় কমছে। বহু শিল্প ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হচ্ছে। চাষ মার খাচ্ছে। নতুন চাকরি হচ্ছে না। পুরনো চাকরি চলে যাচ্ছে। মানুষের হাসিমুখ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। শুধু পাকিস্তান নামক দৈত্যশাসনের সুখানুভূতি দিয়ে এত মালিন্য ঢাকা অসম্ভব। এরপরও কি বলা যাবে না যে সরকারের গৃহীত নীতির পুনর্বিবেচনার সময় হয়েছে? মনমোহন জমানার অর্থনৈতিক পণ্ডিতদের মতামত গ্রহণের পাশাপাশি রাজ্য সরকারগুলির মতামতকেও গুরুত্ব দেওয়ার অভ্যাস করুক মোদি সরকার। এই প্রসঙ্গে ক্রমবধর্মান জিএসটি জালিয়াতির কথাটি উল্লেখযোগ্য। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের আশঙ্কা জিএসটি জালিয়াতির অঙ্কটি ৪৫ হাজার কোটি টাকায় আর সীমিত নেই—১ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে! কর দুর্নীতি ঠেকাতে জিএসটি চালু করা হল। কিন্তু, এই ভয়ঙ্কর ছবি বলে দিচ্ছে, সরকার দক্ষ জিএসটি পরিকাঠামো গড়তে ব্যর্থ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গসহ সমস্ত রাজ্যের মতামত নিয়ে এই দুর্নীতি ঠেকাতে না-পারলে অর্থনীতিতে যে ধস শুরু হয়েছে তা চরম বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ১৩০ কোটি মানুষের মুখ চেয়ে মোদি সরকারের উচিত, ইগো সরিয়ে রেখে যথার্থ পদক্ষেপ করা। এটি মানুষের জীবন-মৃত্যুর মামলা।