ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা ট্রাইয়ের একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, মোবাইলে একপ্রকার নির্ঝঞ্ঝাটে কথা বলা এখন স্বপ্নের অতীত। যে ক’টি পরিষেবা সংস্থা এখানে আছে, তাদের বেশিরভাগেরই পরিষেবা বেশ খারাপ। শুধু তাই নয়, সমীক্ষায় এও দেখা গিয়েছে যে, এই পরিষেবা-যন্ত্রণার ‘সেরার’ মুকুট পেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিএসএনএল। ফোন কাটা বা অন্যান্য পরিষেবা সংক্রান্ত যে মাপকাঠি আছে ট্রাইয়ের, সেখানে বহু পিছিয়ে রয়েছে বিএসএনএল। বাকিদের অবস্থা অতটা খারাপ নয়। তবে এটাই এরাজ্যে ট্রাইয়ের প্রথম সমীক্ষা নয়। এর আগে তারা যে সমীক্ষা চালিয়েছিল, সেখানে অবশ্য এতটা খারাপ পরিস্থিতি তাদের নজরে আসেনি। বরং বিএসএনএল ছাড়া বাকিদের একপ্রকার পিঠ চাপড়ে দিয়েছিল ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা।
ট্রেনে চড়ে বা সড়কপথে ভ্রমণের সময় মোবাইলে কথা বলা যায় কি না, তার পরীক্ষা করতে সম্প্রতি একটি টেস্ট ড্রাইভ করে ট্রাই। বেছে নেওয়া হয় তিনটি রুট। প্রথমটি দুর্গাপুর থেকে পাটনা। দ্বিতীয় রুটটি শিলিগুড়ি থেকে ফরাক্কা। তৃতীয় ফালাকাটা থেকে গুয়াহাটি। সেই রিপোর্টটিই সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ট্রাই। তারা বলছে, মোবাইল ফোনে কথা বলতে গেলে মাঝপথে কথা কেটে যাওয়া এড়ানো যায় না। সেই কারণেই এর সীমারেখা দু’শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ, যদি কোনও ব্যক্তি কোনও একটি নেটওয়ার্ক থেকে ১০০টি ফোন কল করেন, তাহলে তাঁর সর্বাধিক দু’টি কল কেটে যেতে পারে বা কল ড্রপ হতে পারে। তার পরেও যদি কল কেটে যায়, তাহলে তা ‘অস্বাভাবিক’। সেক্ষেত্রে পরিষেবায় খামতি হিসেবেই দেখবে ট্রাই।
টু জি পরিষেবায় একটিমাত্র বেসরকারি সংস্থা এই পরীক্ষায় পাশ করতে পেরেছে। বাকি কোনও সংস্থা উতরাতে পারেনি। এদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিএসএনএলের। ১০০টির মধ্যে আটটির বেশি কল কেটে যায় ওই সংস্থার ফোনে কথা বলতে গেলে। থ্রি জি পরিষেবায় অবশ্য একটি সংস্থাও পরীক্ষায় পাশ করেনি। তবে দ্রুত ডায়ালের ক্ষেত্রে বিএসএনএলের টু জি এবং থ্রি জি দু’টিই পরীক্ষায় ডাহা ফেল করেছে।
এভাবে আরও কয়েকটি নির্ণায়ক বিচারে সরকারি এই সংস্থা বেসরকারিগুলির চেয়ে বেশ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এর নেপথ্যে কী আছে? কেন এভাবে কেন্দ্রীয় সরকারি এই সংস্থা প্রতিযোগিতার বাজারে অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়ছে? কেন ধীরে ধীরে মানুষ বিএসএনএলের ল্যান্ডলাইন প্রায় পরিত্যাজ্য করছেন! এর দায় কী শুধুই সরকারের? এমন হাজারো প্রশ্ন উঠে আসছে একই সঙ্গে। কারণ অন্তত এ রাজ্যে সিপিএমের আমল থেকে বিএসএনএলকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার চক্রান্ত তৈরি হয়। আন্দোলন, কর্মবিরতি, ধর্মঘটে
জেরবার করে কর্মসংস্কৃতির নামগন্ধ মুছে দেওয়া হয় টেলিফোন অফিসগুলি থেকে। তার উপর দামি দামি সরঞ্জাম চুরি, টাকাপয়সার নয়ছয় থেকে
সমস্ত রকম দুর্নীতির আখড়া গড়ে তোলার অভিযোগ ওঠে সিপিএমের লেজুড় কর্মী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে। আর যে কারণে আজ আর্থিক সঙ্কটে ধুঁকছে এই সংস্থা। সঙ্কটটা এতটাই গভীরে প্রোথিত যে, কর্মীদের বেতন নিয়েও টানাটানি চলছে অন্দরে। সিপিএমের পুঁতে যাওয়া কর্মবিমুখতার বীজ আজ শিকড় গেড়ে বসেছে। যে কারণে হাঁটুর বয়সি বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছে পিছনে পড়ে যাচ্ছে একদা বৃহৎ এই সংস্থা, এটাই খুব দুঃখের।
সুতরাং, এই মুহূর্তে বিএসএনএলকে ‘পুনরুজ্জীবিত’ করতে এক সামগ্রিক প্রয়াস গড়ে তোলা প্রয়োজন। ভারত সঞ্চার নিগম যে সংস্থার নাম,
ঘরের ভিতর থেকে নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হোক সেই সংস্থার। এটাই কাম্য।