সংবাদদাতা, হলদিয়া: লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ভরসাতেই মহিষাদল বিধানসভায় বড়সড় লিড পাওয়ার অঙ্ক কষছে তৃণমূল কংগ্রেস। আবার আগামী বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল মহিষাদলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী সভা ভরাতে মূল চাবিকাঠি সেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারই। দুপুর ১২টার সময়ে প্রবল তাপপ্রবাহের পূর্বাভাসের মধ্যেও মুখ্যমন্ত্রীর সভায় জনপ্লাবন ঘটাতে চ্যালেঞ্জ নিয়েছে তৃণমূল। কারণ ১৮ বছর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাধীনতার ইতিহাস বিজড়িত এবং ঐতিহ্যমণ্ডিত মহিষাদলে আসছেন। এই প্রথম তিনি মহিষাদল রাজ ময়দানে সভা করবেন। সেজন্য মফস্সল শহর মহিষাদলজুড়ে সাজসাজ রব। তাপপ্রবাহের কষ্ট থেকে স্বস্তি দিতে বিশাল হ্যাঙ্গারের পাশাপাশি ১৫ হাজার হাতপাখা, ৪০ হাজার টুপি ও ৫০ হাজার জলের পাউচের ব্যবস্থা রাখছে তৃণমূল। তৈরি থাকবে ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল ক্যাম্প ও শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মী। তাপপ্রবাহ ঠেকিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সভাকে সফল করতে যাবতীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কল্যাণে এবার সভায় ‘লক্ষ্মী’-দের ভিড় বেশি হবে, আশা তৃণমূল কংগ্রেসের। 
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, শুধু সভা নয়, লক্ষ্মীদের হাত ধরেই লোকসভা ভোটের বৈতরণী পার হতে চাইছে তৃণমূল। মহিষাদল বিধানসভায় মাত্র ২৩৮৬ ভোটের ব্যবধানে জিতে তিন বছর আগে বিধায়ক হয়েছিলেন তৃণমূলের তিলক চক্রবর্তী। ফলে ওই বিধানসভায় তেমন স্বস্তিতে নেই তৃণমূল। ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের সময় প্রবল বিজেপি হাওয়া বইতে থাকে বিধানসভাজুড়ে। মহিষাদল ব্লকে ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫টির দখল নেয় বিজেপি। এরমধ্যে লক্ষ্যা ও অমৃতবেড়িয়ায় অবশ্য বিজেপি টসে জিতে বোর্ড দখল করেছে। অন্যদিকে, হলদিয়া ব্লকে ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে দু›টি বড় গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল নিয়েছে বিজেপি। তবে তৃণমূলের কাছে স্বস্তির জায়গা হল পঞ্চায়েত ভোটে সারা বিধানসভা এলাকা মিলিয়ে তাদের ৯ হাজার লিড রয়েছে। অর্থাৎ বিধানসভার পর ৭ হাজার ভোট বেড়েছে। তৃণমূলের ব্যাখ্যা, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফসল উঠেছে পঞ্চায়েত ভোটে, ফলে লিড বেড়েছে। এবার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা দ্বিগুণ হওয়ার প্রভাব পড়বে লোকসভা ভোটে। তৃণমূলের দাবি, পঞ্চায়েতের ৯ হাজার ভোটের লিড লোকসভায় ১৫ হাজার পেরতে পারে। রাজনৈতিক মহলের মতে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের প্রভাব থাকলেও এবার একতরফা ভোট পাবে না তৃণমূল।
মহিষাদলে মুখ্যমন্ত্রীর সভা সফল করার দায়িত্ব বিধায়ক তিলক চক্রবর্তীর উপর। তিনি বলেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের প্রভাব পড়বে ভোটে। মুখ্যমন্ত্রীর সভাই তা প্রমাণ করবে আশা করছি। সভায় মহিলা জমায়েতের উপর বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাপপ্রবাহ চলছে, তাই মহিষাদল, হলদিয়া বিধানসভা ছাড়া পাশের নন্দকুমার, তমলুক থেকেই বেশি কর্মী সমর্থকদের আসতে বলা হয়েছে। দূরের কোলাঘাট, ময়না বা নন্দীগ্রাম থেকে কম কর্মী সমর্থক আসবেন। ৫০ হাজার জমায়েতের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। হ্যাঙ্গারে ২৫-৩০ হাজার মানুষ বসতে পারবেন। এছাড়া চট টাঙিয়ে দেওয়া হবে ছায়ার জন্য। বিধায়ক বলেন, মহিষাদল বিধানসভায় দুই ব্লক মিলিয়ে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পান প্রায় ৮০ হাজার মহিলা। বিধানসভার আড়াই লক্ষ ভোটারের মধ্যে এরাই নির্ণায়ক শক্তি। সেজন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ওইদিন ২৫ জন মহিলা লক্ষ্মী সেজে মহিষাদলের সভায় আহ্বান জানাবেন। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওইদিন মুখ্যমন্ত্রীকে মহিষাদলের বিখ্যাত পিতলের মূর্তি উপহার দেওয়া হতে পারে। এছাড়া তাঁকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা মহিষাদলের বিখ্যাত নকশা বড়ি উপহার দেবেন বলে জানা গিয়েছে।