সংবাদদাতা, বালুরঘাট: আয়োজন সম্পূর্ণ থাকলেও শনিবার বালুরঘাটে তৃণমূলের প্রকাশ্য জনসভায় এলেন না ফিরহাদ হাকিম। মঞ্চে তাঁর না আসার কথা ঘোষণা হতেই সভাস্থল ফাঁকা হতে শুরু করে। তবে ফিরহাদ হাকিমের পরিবর্তে এদিনের জনসভায় চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, তাপস রায়, গোলাম রাব্বানি, বাঁচ্চু হাঁসদা, এলাকার সংসদ সদস্য অর্পিতা ঘোষ, দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র সহ অন্যান্য নেতানেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। সকল বক্তাই সভা থেকে বিজেপিকে কেন্দ্র থেকে উৎখাতের ডাক দেন। সেই অর্থে এই সভা দিয়েই জেলায় লোকসভা নির্বাচনের দামামা তৃণমূল বাজিয়ে দিল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এদিকে এদিন সভা চলাকালীন মঞ্চে ওঠা নিয়ে শহরের মহিলা তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে বচসা বাধে। তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। মঞ্চে ওঠার সিঁড়িতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এতে রাজ্য ও জেলা নেতাদের অনেকে মঞ্চে উঠতে গিয়ে বিশৃঙ্খলার মধ্যে আটকা পড়ে যান। যদিও জেলা নেতৃত্ব এই বিশৃঙ্খলার কথা মানতে চায়নি।
দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, ফিরহাদ হাকিম আসার কথা ছিল। তবে দলের অন্য কাজের কারণে তিনি কলকাতা থেকে বেরতে পারেননি। ফিরহাদ হাকিম না আসতে পারায় দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, তাপস রায়দের পাঠিয়েছেন। সভায় কোনও বিশৃঙ্খলা চোখে পড়েনি।
দীর্ঘ এক মাস ধরে জেলাজুড়ে ফিরহাদ হাকিমের সভাকে কেন্দ্র জোর প্রস্তুতি নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। এনিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উন্মাদনা তৈরি হয়। এদিনের সভাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা ভিড় জমায়। থানা মোড় চত্বরে তৃণমূল সমর্থকদের ভিড় উপচে পড়ে। কিন্তু সভার শুরুতেই ফিরহাদ হাকিমের না আসার খবর ঘোষণা হওয়ায় কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে সভাস্থল ছাড়তে শুরু করেন। ফাঁকা হতে শুরু করে সভাস্থল। তবে সভা চলতে থাকে।
এদিন মঞ্চে শুরুতেই বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রমন্ত্রী বাঁচ্চু হাসদা। বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বিজেপি ও বামদের কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে জেলার তৃণমূল কর্মীদের একজোট হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। ২০১৯ বিজেপি ফিনিশ। সংসদ সদস্য অর্পিতা ঘোষ বলেন, সংসদে বিজেপি মিথ্যে প্রতিশ্রুতি কীভাবে দিয়ে থাকে তা আমি দেখি। বিজেপি দেশবাসীকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্পের সুবিধা জেলার কেউ আজ পর্যন্ত পায়নি। মোদি সরকার শুধু মানুষকে লুট করতে শিখেছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, মুখ্যমন্ত্রী একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। আজ সেই উন্নয়নের জেরে জেলায় অন্য দল থেকে নেতা-কর্মীরা আমাদের দলে যোগদান করছেন। গত লোকসভা নির্বাচনে এই জেলা থেকে এক লক্ষের বেশি ভোটে অর্পিতা ঘোষকে আমরা জিতিয়েছি। এবার কয়েক লক্ষ ভোটে আমাদের দলের প্রার্থী জয়লাভ করবেন। সভায় চন্দ্রিমাদেবী বলেন, মোদি সরকার কৃষকদের সঙ্গে বঞ্চনা করেছে। মোদি’র দল যে সমস্ত রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে সেখানে মানুষদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। আমাদের তৃণমূল সরকার গরিব মানুষের পাশে থেকে একের পর এক উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছে। বিজেপি শুধু মানুষের মধ্যে দাঙ্গা লাগানো ছাড়া আর কিছু জানে না। তাই আগামী লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ দিনাজপু্র জেলায় তৃণমূলকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করতে হবে।