নয়াদিল্লি, ২২ আগস্ট (পিটিআই): ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল। সিজিও কমপ্লেক্সের ঘিঞ্জি চেম্বার থেকে ঝাঁ-চকচকে নতুন আস্তানা পেয়েছিল সিবিআই। নতুন ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। মাঝে কেটে গিয়েছে আট বছর। গ্রেপ্তার হওয়ার পর বুধবার সারা রাত সিবিআইয়ের এই সদর দপ্তরেই কাটাতে হল চিদম্বরমকে। ভাগ্যের কী অদ্ভুত পরিহাস!
২০১১ সালে এই নয়া ভবনের উদ্বোধনের মাত্র কয়েকদিন আগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা সুরেশ কালমাদি। কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে। কিন্তু উদ্বোধন অনুষ্ঠানের কথা মাথায় রেখে কালমাদিকে সেই সময় ওই ভবনে রাখা হয়নি। উদ্বোধনের দিন মনমোহন সিং ও চিদম্বরমের সঙ্গেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি ও মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী কপিল সিবাল। ওই দিন চিদম্বরম সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের গোটা ভবন ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন তৎকালীন সিবিআই ডিরেক্টর এ পি সিং। তাঁদের দেখানো হয়েছিল ভবনের গেস্ট হাউসটিও। গ্রেপ্তার হওয়ার পর বুধবার রাতে এই গেস্ট হাউসেই কাটাতে হল চিদম্বরমকে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, রাত ১০টা নাগাদ সিবিআই সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয় প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। তাঁকে রাখা হয় ওই গেস্ট হাউসের পাঁচ নম্বর রুমে। ঘরটির পরিচ্ছন্নতা নিয়ে চিদম্বরমকে আশ্বস্ত করা হয় সিবিআইয়ের তরফে। গ্রেপ্তারির প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর সিবিআইয়ের তরফে চিদম্বরমকে আশ্বাস দেওয়া হয়, তাঁর মেডিক্যাল পরীক্ষা হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া হবে। পাশাপাশি বৃহস্পতিবার আদালতে তোলার আগে অন্তত ছ’ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিবিআইয়ের এক অফিসার একথা জানান। সিবিআইয়ের অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে, মামলার নথিপত্র গোছগাছ করার মধ্যেই সংক্ষিপ্ত জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হয় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। তবে বিস্তারিত কোনও উত্তর তিনি দেননি। কংগ্রেসের এই প্রবীণ নেতাকে রাতে সিবিআই ক্যান্টিন থেকে খাবার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই খাবার তিনি খেতে চাননি। চিদম্বরমের আইনজীবীকে সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়, আদালতের অনুমতি পাওয়ার পরই একমাত্র তাঁকে বাড়ির খাবার খেতে দেওয়া হবে।
ঘটনাচক্রে এই নয়া ভবনের উদ্বোধনের পর থেকেই সিবিআইয়ের একের পর এক ডিরেক্টর বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়েছেন। এ পি সিং ও তাঁর উত্তরসূরি রঞ্জিত সিনহার নামে মামলা দায়ের হয়েছিল সিবিআইয়ের তরফেই। বিজয় মালিয়া দেশ ছেড়ে পালানোয় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল অনিল সিনহাকে। ডেপুটির সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে রাতরাতি অপসারিত হতে হয়েছিল অলোক ভার্মাকে। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে থাকা চিদম্বরমকে এবার গ্রেপ্তার হয়ে রাত কাটাতে হল এই ভবনেই। সব দেখেশুনে সিবিআইয়েরই কিছু অফিসার মজার ছলে বলছেন, ভবনটির ‘বাস্তু’ ঠিক নয়। কারণ ভবনটি তৈরি হয়েছে কবরস্থানের জমিতে।