কর্মক্ষেত্রে অশান্তির সম্ভাবনা। মাতৃস্থানীয় কার শরীর-স্বাস্থ্যের অবনতি। প্রেমে সফলতা। বাহন ক্রয়-বিক্রয়ের যোগ। সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় উন্নতি।প্রতিকার: ... বিশদ
বাবামোহাত্রা গ্রামের মাঝে রয়েছে এক বিরাট দিঘি। সেই জলেই বাস করত ‘গঙ্গারাম’। লোকমুখে কথিত, তার বয়স ১৩০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কোনও কুমির এতদিন বাঁচে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু নতুন প্রজন্মের গ্রামবাসীদের বক্তব্য, তারা ঠাকুর্দা-ঠাকুমার মুখে শুনে এসেছে, তারাও যখন ছোট ছিলেন, তখনও নাকি এই দিঘিতেই ঘুরে বেড়াত ‘গঙ্গারাম’। বসত এলাকার দিঘিতে কুমির থাকলে, সেই গ্রামে মানুষ বাস করে কী করে? গ্রামবাসীদের বক্তব্য, আতঙ্ক দূরে থাক, গঙ্গারাম ছিল তাদের একেবারে ‘ঘরের লোক’। যেভাবে বাড়িতে কুকুর-বিড়াল পোষ মানে, সেভাবেই বাবামোহাত্রা গ্রামে সর্বজনীন পোষ্য হয়ে উঠেছিল গঙ্গারাম। এহেন আদরের গঙ্গারামের দেহ গত সপ্তাহে দিঘির জলে ভেসে ওঠে। তার মৃতদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা গ্রাম।
কেন এত আদরের ছিল গঙ্গারাম? এলাকাবাসীর বক্তব্য, কোনও অনিষ্ট করা তো দূরের কথা, যুগের পর যুগ ধরে সে মানুষের সহচর্য পেতেই অভ্যস্ত ছিল। দিঘিতে কেউ স্নান করতে নামলে বড় ‘লজ্জা’ পেত কুমিরটি। পাছে ওই ব্যক্তির অসুবিধা হয়, তাই সে জল ছেড়ে ডাঙায় উঠে আসত। কুমিরের ডাক সচরাচর কেউ শুনেছে বলে জানা যায় না। এখানে অবশ্য গঙ্গারামের ‘ডাক’ শুনতে পেত অনেকে। খিদে পেলে সে নাকি জলের মধ্যে গোঙাতো। বুদবুদ উঠত জলে। বুঝতে পেরে খাবার নিয়ে যেতেন গ্রামবাসীরাই। গঙ্গারাম বলে দিঘির পাড় থেকে কেউ হাঁক দিলে, ভেসে উঠে উপস্থিতি জানান দিত সে। পাড়ে থাকলে, জলে লেজের ঝাপ্টা দিয়ে বুঝিয়ে দিত, সে সেখানে হাজির।
বছর ২০ আগের কথা, একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথমে একটু আঁতকেই উঠেছিলেন গ্রামবাসীরা। আচমকাই এক গ্রামবাসী খেয়াল করেছিলেন গ্রামেরই এক ছোট্ট শিশু কুমিরের পিঠে চড়ে দিঘি এপার¬-ওপার করছে। তবে গ্রামবাসীদের বিশ্বাসের মর্যাদা রেখে গঙ্গারাম ওই শিশুর কোনও ক্ষতি করেনি। এরপর গ্রামবাসীরা খেয়াল করেন, গ্রামের বহু শিশু মাঝেমধ্যেই গঙ্গারামের পিঠে চড়ে দিঘিতে খেলা করছে। তবে অনেকটা সেই ‘ইউএফও’ দেখার মতো, এই ঘটনা যাঁরা দেখেছেন, তাঁরাই বিশ্বাস করেন।
গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান মোহন সাহু জানিয়েছেন, মৃত্যুর পর গঙ্গারামকে দিঘির পাড়েই কবর দেওয়া হয়েছে। গ্রামে সভা ডেকে ঠিক হয়েছে, গঙ্গারামের একটি মূর্তি স্থাপন করে সেখানে একটি মন্দির তৈরি করা হবে। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, রাধা-কৃষ্ণের মতো গঙ্গারামও তাদের সুখে-দুঃখে সবসময় সহযোগিতা করবে। তাই দীর্ঘদিন ধরেই গঙ্গারামকে পুজো করে আসা গ্রামবাসীরা তার মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েন। হাজারেরও বেশি গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে রীতিমতো পুজো করে তাকে কবর দেওয়া হয়। ওই এলাকার বনদপ্তরের যুগ্ম ডিভিশনাল অফিসার আর কে সিনহা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই কুমিরটি ওই গ্রামের জলাশয়ে থাকত বলে শোনা যায়। তবে সেটি সেখানে কোথা থেকে এসেছিল, তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। এলাকার ডেপুটি রেঞ্জার গৌতম জানিয়েছেন, কুমিরটির ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। জনশ্রুতিতে সেটির বয়স ১৩০ বছরের বেশি বলে প্রচার হলেও, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরই তার প্রকৃত বয়স সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।