শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহবৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে মানসিক ... বিশদ
মৌমাছি পালনের মাধ্যমে মিষ্টি বিপ্লবের ডাক দেওয়া হয়েছে দেশে। অথচ মৌমাছির সংখ্যা দিন দিন কমতে থাকায় বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন পরিবেশবিদরা। এ ব্যাপারে সরকারি পদক্ষেপ ও নজরদারির দাবি তুলেছেন তাঁরা। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. শান্তনু ঝাঁ বলেছেন, মৌমাছিকে অহেতুক অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া নিয়ে গোটা দেশেই শোরগোল পড়েছে। মৌমাছির শরীরে যদি কড়া মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়, তা হলে সেই মৌমাছি যে মধু উৎপাদন করবে, তাতে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সেক্ষেত্রে এমনও হতে পারে ওই মধু টানা খেলে মানবদেহে রোগ নিরাময়ে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ঠিকমতো কাজ করবে না। এটা ভয়ঙ্কর বিষয়। মৌমাছিকে অ্যান্টিবায়োটিক না দিয়েই উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে যথেষ্ট পরিমাণে মধু পাওয়া সম্ভব বলে দাবি শান্তনুবাবুর।
বাণিজ্যিক চাষের লক্ষ্যে ইউরোপ ও ইতালির মৌমাছি পালন শুরু হয়েছে রাজ্যে। এপিস মেলিফেরা নামে ওই মৌমাছির বাক্স থেকে বছরে অন্তত ৪০ কেজি মধু পাওয়া যাচ্ছে। তুলনায় দেশীয় মৌমাছি এপিস সেরেনা ইন্ডিকা অনেক কম পরিমাণে মধু উৎপাদন করে। তারা বছরে বাক্স প্রতি গড়ে ৫ কেজি মধু উৎপাদন করতে পারে। ফলে দেশীয় মৌমাছি পালন কমছে। বাংলার মৌপালকদের পাশে দাঁড়াতে এবং খাঁটি মধু উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। চলতি বছর তারা সাড়ে ১০ টন মধু উৎপাদন করেছে।
বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, ফসলের উৎপাদন বাড়াতে জল, সার, কীটনাশক নিয়ে নানা কথা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু মৌমাছি নিয়ে সেভাবে আলোচনা হয় না। হানি মিশন তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেভাবে তার কার্যকরী পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না বলে অনেকের অভিযোগ। মধু উৎপাদনে গোটা দেশে অগ্রণী রাজ্য বাংলা। কিন্তু বাস্তবে সেই স্বীকৃতি নেই। কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি। মৌপালন নিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে আসছে ঝাড়খণ্ড থেকে। বাজারে মধুর যা দাম সেই তুলনায় মৌপালকরা খুবই কম পেয়ে থাকেন। ফড়েরা মধুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যাঙ্কঋণ পেতে মৌপালকদের সমস্যা হয়। শুধু মৌমাছির বাক্স দিলেই হবে না। মৌপালকদের বিজ্ঞানভিত্তিক মধু উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মনিটরিংয়ে ঘাটতি রয়েছে। তা পূরণ করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু মধু উৎপাদনের জন্য নয়, মৌমাছি পালনের মাধ্যমে ফসলে পরাগ সংযোগ বাড়ানো যায়। মৌমাছির সংখ্যা কমে যাওয়ায় কাঙ্খিত পরাগ সংযোগের অভাবে ফলন কমছে। দেশে ফি বছর ৬৫ হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হয়। তার মধ্যে অনেকটাই এ রাজ্যে উৎপাদিত হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলায় যা প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য রয়েছে, তার অন্তত ২৫ শতাংশকেও কাজে লাগিয়ে মধু উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে আক্ষেপ অনেকের। তাঁদের বক্তব্য, উন্নত মৌপালনে সরকারি তরফে প্রশিক্ষণ ও নজরদারি বাড়ানো হোক।