গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
ব্রিটিশ আমলেই ভারতে প্রাদেশিক সরকার গঠিত হয়। ১৯৩৫ সালের একটি আইন মোতাবেক সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। আর ওই আইনেই বীজ ভারতে রাজতন্ত্র অবসানের বীজ নিহিত ছিল বলেই মনে করেন অনেক ঐতিহাসিক। পরে ১৯৫০ সালে ভারতে সংবিধান তৈরির হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে। ভারত হয়ে ওঠে প্রজাতন্ত্র বা সাধারণতন্দ্র সার্বভৌমৈ রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে ২৬ তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে রাজা কিংবা জমিদারদের যাবতীয় ক্ষমতা ও বৈভব খর্ব করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সেই থেকে ‘রাজতন্ত্র’ পুরোপুরি অস্তমিত হয়ে যায়।
কিন্তু, কৃষ্ণনগরে প্রার্থীপদে চমক দিতে গিয়ে অমৃতাদেবীকে ‘রাজমাতা’ বলে উল্লেখ করে বিজেপি ভারতের সাধারণতন্ত্র গণতন্ত্রের-এর মর্যাদাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বলে অভিমত বুদ্ধিজীবীদের একাংশের। শহরের মোড়ে, চায়ের দোকানে, অফিস পাড়ার আড্ডায় কেউ কেউ বলছেন রাজামাতা ভোটে জিতলে কি ফের রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে? সেই সঙ্গে অমৃতাদেবী প্রার্থী হওয়ায় কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের ‘নিন্দিত ইতিহাস’ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। ফোনে প্রধানমন্ত্রীকে এসব কিছুই অনুযোগ আকারে শুনিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। অমৃতাদেবী নিজেও বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে খুব ভালো লাগছে। উনি আমার আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছেন। তৃণমূলকে তো সবাই চোর বলছে। তাহলে নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। তাই ওদের নিয়ে ওইসব কথা বলা হচ্ছে। আর আমাকে নিয়ে যাঁরা ভাবছেন, তাঁরা এই ধরণের কথা বাইরে বলে বেড়াচ্ছেন।’
অমৃতাদেবীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর ফোনের বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাঁর ‘পিন পয়েন্ট টার্গেট’ ভোটের ময়দানে বিজেপিকে পর্যদস্তু করা। এদিন তিনি বলেছেন, ‘ওঁর দলের নেতা ওঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। বলতেই পারেন। আমার দলের নেত্রীও আমার সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেন। এ নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। ওরা (বিজেপি) প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছিল না বলে এখন এসব করছে।’ কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে রাজপরিবারের ইতিহাসের ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দেশভাগের সময় কৃষ্ণনগর রাজপরিবার যদি না থাকত, তা হলে নদীয়া বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেত বলে দাবি বিজেপির। আর এর ভিত্তিতেই ধর্মীয় ভাবাবেগকে রাজনীতির ময়দানে ব্যবহার করতে তৎপর হয়েছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু তাতে কতটা কাজে হবে, তা নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রশ্নের মুখে পড়েছে গেরুয়া শিবির। কৃষ্ণনগর শহরের আদি বাসিন্দা তথা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ অরুনাভ সান্যাল বলেন, ‘মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিনের একটা সূক্ষ্ম ভাবাবেগ থাকে। সেটাকেই এরা রাজনীতির ময়দানে ব্যবহার করছে। এটা একটা সামন্ততান্ত্রিক বীজ। যেটাতে জল দিয়ে বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। কৃষ্ণনগরের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। তাই বাস্তবে রাজমাতা কিংবা রানিমা বলে কাউকে সম্বোধন করা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। কারণ রাজতন্ত্র বা রাজার রাজত্ব বলে এখন কিছু নেই।’ বিজেপি নেতা সন্দীপ মজুমদার বলেন, রাজ পরিবার না থাকলে নদীয়া জেলার অস্তিত্ব থাকত না। তাই জেলা বাসী হিসেবে আমরা রাজ পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ।’
ভোটপ্রচারে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়।