শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহবৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে মানসিক ... বিশদ
কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে কব্জায় আনার কৌশল নিয়েছে মোদি সরকার। প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী এই অভিযোগে সরব হয়েছিলেন। কেন্দ্রের এই কৌশল নিয়ে দেশের বিভিন্ন বিরোধী শক্তিও মমতার পথে হেঁটেছে। বিরোধীদের চাপে রাখতে মোদি সরকার কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে কাজে লাগাচ্ছে, এমন অভিযোগ বিভিন্ন রাজ্যের অবিজেপি দলগুলির তরফেও করা হয়েছে। এ রাজ্যে রাজনৈতিক লড়াইয়ে পর্যুদস্ত হয়ে আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তের নামে নানাভাবে তৃণমূল নেতৃত্বকে হেনস্তা করে চলেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সারা দেশেই অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন মমতা। তবে ধমকে চমকে কোনও লাভ হবে না, ইতিমধ্যে সেকথাও বারে বারে জানিয়ে দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
এরই মধ্যে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় বসেই বাংলায় জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণ (এনআরসি) চালু করতে তৎপর হয়েছে বিজেপি। অসমে ইতিমধ্যে এনআরসির তালিকায় নাম না থাকায় ভারতে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ মানুষ রাষ্ট্রহীন হতে চলেছে। অসমে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর ১৭ লক্ষর বেশি সে রাজ্যের বাসিন্দার নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। গত লোকসভা ভোটে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি, বর্তমানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলায় এনআরসি চালু করার পক্ষে জোরদার সওয়াল করেছিলেন। সম্প্রতি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ রাজ্যে অনুপ্রবেশকারী প্রায় দুই কোটি বলে দাবি করেন। তাদের চিহ্নিত করতেই এনআরসি করার দাবি তোলেন তিনি। এই বিতর্কের প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী এনআরসি বিরোধী পদযাত্রা করেন। সেখান থেকেই কেন্দ্র তথা বিজেপিকে এনআরসি প্রসঙ্গে বস্তুত চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার মতে, দেশের সংবিধান আক্রান্ত। ধর্মের পরিচয়ের ভিত্তিতে দেশকে ভাগ করতে চাইছে বিজেপি। তাঁর হুঁশিয়ারি, তিনি বেঁচে থাকতে কোনও ভাবেই আর বঙ্গভঙ্গ হতে দেবেন না। তাঁর মতে, এনআরসির মাধ্যমে সংবিধানের মূল ভাবনা ধর্মনিরপেক্ষতাই উপেক্ষিত হচ্ছে। বিগত লোকসভা ভোটে রাজ্যে ভালো ফল করার পর বিজেপিও এনআরসির প্রশ্নে আরও আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে চলেছে। এককথায় এনআরসিকে ঘিরে বাংলায় বিজেপি-তৃণমূল সংঘাতের পারদ ক্রমে চড়তে শুরু করেছে।
জরুরি অবস্থায় যেভাবে দেশের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারগুলি কেড়ে নেওয়া হয়, মোদি সরকার সেভাবেই চলছে। এই অভিযোগ তুলেই মমতা ইমার্জেন্সির সঙ্গে তুলনা টেনেছেন বলে রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা। মমতা একাধিকবার বলেছেন, দেশের সংবিধানে যে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে, তা বিপন্ন। ধর্মের নামে গণপিটুনি থেকে শুরু করে এনআরসি— সবই সংবিধানকে উপেক্ষার শামিল। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই সিবিআই, ইডি, ইনকাম ট্যাক্স দিয়ে তাঁদের হেনস্তা করা হচ্ছে বলে দাবি মমতার। দেশের অনেক বিরোধী শক্তিকে এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখিয়ে চাপে রেখেছে বলে মনে করেন তিনি। তবে কোনও চাপের কাছে তিনি মাথা নোয়াবেন না বলেও ঘোষণা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের প্রেক্ষাপটে তাঁর কেন্দ্র বিরোধী জেহাদের সুর আরও চড়িয়েছেন মমতা।
এনআরসি ইস্যুতে কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর সংঘাতের জেরেই এদিন ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’কে কাজে লাগিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থার’ কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় জনতার উদ্দেশে তাঁর বার্তা, আসুন, আমরা দেশের সাংবিধানিক পরিকাঠামোকে অক্ষুণ্ণ রাখার অঙ্গীকার নিই। এই সুপার ইমার্জেন্সির জমানায় মানুষের সাংবিধানিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষায় যা যা করতে হয়, তা করতে তিনি প্রস্তুত বলে ঘোষণা করে বস্তুত কেন্দ্রকে সতর্ক করে দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।