পারিপার্শ্বিক কোনও ঘটনা চিন্তা বাড়াতে পারে। সাংস্কৃতিক কর্মে যোগদান ও মানসিক তৃপ্তিলাভ। শরীরের খেয়াল রাখুন। ... বিশদ
হাসি থামিয়ে ‘কাট’ বলে উঠলেন পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়। খাঁচাবাড়ির ছাদ জুড়ে সেদিন চলছিল তাঁর নতুন ছবি ‘রাস’-এর শ্যুটিং। বিভ্রান্তি দূর করে বললেন, ‘উনি সুকান্ত। চক্রবর্তী পরিবারের বড় ছেলে। একটা দুর্ঘটনায় মাথাটা সত্তরের দশকে থমকে গিয়েছে। খবর পেয়েছেন চাঁদে মানুষ নামবে। তাই টেলিস্কোপে চোখ রেখে মুন ল্যান্ডিং দেখতে গিয়ে শনির বলয় আবিষ্কার করে ফেলেছেন। সেই আনন্দেই নাচছেন।’ এই চরিত্রে অভিনয় করছেন শঙ্কর দেবনাথ। পরিচালকের দিকে তাকিয়ে তাঁর প্রশ্ন, ‘ঠিক আছে ব্রাদার?’ তথাগত উত্তর দেওয়ার আগেই ছবির হিরো বিক্রম চট্টোপাধ্যায় বলে উঠলেন, ‘ফাটাফাটি স্যার।’
পরের শটের শিল্পীরা হলেন অনসূয়া মজুমদার, দেবলীনা কুমার ও বিক্রম। আলো তৈরির ফাঁকে তথাগত জানালেন, ‘রাস আসলে রাসপূর্ণিমা। আশি-নব্বইয়ের দশক থেকে সাম্প্রতিক সময়ের প্রেক্ষাপটে বাঁধা গল্পের পটভূমি মানিকপুর ও কলকাতা শহর। ভালোবাসা, পারিবারিক প্রাণোচ্ছলতা ছবির উপজীব্য হলেও মূল দর্শন, বেঁচে থাকা মানে একা বেঁচে থাকা নয়, পরিবেশ, প্রকৃতি, পশু, মানুষ সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বাঁচা। যে যাপনের সঙ্গে ছাদ এক বিশেষ চরিত্র হয়ে উঠত একসময়। ‘রাস’ স্মৃতিমেদুরতার ছবিও।’
ছাদে উঠে নস্টালজিক বিক্রমও। নায়কের স্মৃতিতে ছাদ মানে চিলেকোঠা। বিক্রমের চরিত্র সোমনাথ মাতৃহীনা। বাইরে বাবার সঙ্গে বড় হয়েছে। বহুদিন পর ফিরে এসেছে মানিকপুরের জন্মভিটেতে। শৈশবের ছাদে। সেখানে ঠাকুমা অনসূয়া মজুমদার নাতির সঙ্গে সংলাপ বিনিময়ে তৈরি। তার আগে চরিত্র নিয়ে বিক্রমের বিশ্লেষণ, ‘আসলে আমি কে সেটা জানার, সেটা বোঝার ছবিই ‘রাস’। আঠারো বছর পর সোমনাথ ফিরে এসেছে তার গ্রামের বাড়িতে। নিজেকে চেনার থেকেও নিজের মানুষদের চেনার চেষ্টাটা আরও জরুরি।’
বিপজ্জনকভাবে ছাদের পাঁচিল ধরে ঝুঁকে নীচতলাটা দেখার চেষ্টা করছিলেন দেবলীনা। অনুসূয়ার মৃদু ধমকে পাঁচিলের ধাপ থেকে নেমে পড়লেন তিনি। অধ্যাপিকা, অভিনেত্রীর কাছে ছাদ মানেই ঠাকুমার ঠাকুরঘর থেকে নকুলদানা চুরি করে খাওয়ার অ্যাডভেঞ্চার। তাঁর চরিত্রের নাম রাই। শান্তিনিকেতনী ঘরানায় প্রকৃতির মাঝে গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়াতে ভালোবাসে স্থানীয় স্কুলের দিদিমণি। ‘আজকের দিনে এমন চরিত্র বিরল। স্বার্থত্যাগী একটা চরিত্র।’
বত্রিশজন সদস্য নিয়ে তৈরি ‘রাস’- এর চক্রবর্তী পরিবার। অভিনয় করছেন অনির্বাণ চক্রবর্তী, সুদীপ মুখোপাধ্যায়, অর্ণ মুখোপাধ্যায়, দেবাশিস রায়, দেবপ্রসাদ হালদার প্রমুখ। ‘এক ছাদে এক ফ্রেমে এতজনকে ধরাটাই তো চ্যালেঞ্জ’, মনিটরে চোখ রেখে বললেন তথাগত।
ছবি: দীপেশ মুখোপাধ্যায়