সোহম কর: একটা পাতলা সুতোর উপর তিনটি জীবন দাঁড়িয়ে রয়েছে। পুরনো হয়ে গিয়েছে এই সুতো, বারবার মনে হচ্ছে এই বুঝি ছিঁড়ে গেল। তিন মহিলার জীবনের রোজনামচা নিয়ে পরিচালক অর্জুন দত্ত ‘গুলদস্তা’ ছবিটি তৈরি করেছেন। ঘণ্টা দু’য়েকের এই ছবির যেন একটিই মাত্র উদ্দেশ্য। সেটি হল ডলি বাগরির (স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়) জীবন কাহিনী। প্রথম দিকে গোটা ছবির গল্প অত্যন্ত সাদামাটা, অনেকটা চিরাচরিত বাংলা টেলিভিশনের ধারাবাহিকের মতো। শ্রীরূপা (অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়) মানসিক এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ। তার স্বামী অফিসে অন্য একটি মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। রেণুর (দেবযানী চট্টোপাধ্যায়) ছেলে নেশাগ্রস্থ, বাড়িতে অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে তার সংসার। অসুস্থ শাশুড়ির কণ্ঠে কিছু ইঙ্গিতপূর্ণ সংলাপ বসিয়েছেন পরিচালক যেমন, ‘এই রাস্তা দিয়ে যাস না। ওই রাস্তা দিয়ে যা’। সত্যিই কি এই সংলাপ কোনও ইঙ্গিত বহন করছে? নাকি শুধুই রহস্য ছড়ানোর উদ্যোগ? এইসবের স্বপক্ষে কোনও যুক্তি দেননি পরিচালক। এরপর ডলি বাগরির প্রবেশ। সে অবাঙালি সেলসগার্ল। চরিত্রের ম্যানারিজমগুলো বেশ ভালো ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেত্রী। ছবিতে খানিক প্রাণের সঞ্চার হয়। ঝিমিয়ে পড়তে থাকা দর্শক খানিক নড়েচড়ে বসেন। এমন অবস্থায় দর্শককে আটকে রাখার একমাত্র অস্ত্র হল আবেগ। অশ্রু মিশ্রিত সেই আবেগ দিয়ে দর্শকদের বেঁধে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন পরিচালক।
প্রথম ছবি ‘অব্যক্ত’তে আশা জাগিয়েছিলেন অর্জুন। ‘গুলদস্তা’ সেই আশা ভঙ্গ করেছে, এমনটা নয়। তবে অপেক্ষা আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছে, এ কথা বলতেই হচ্ছে। অভিনয়ের প্রসঙ্গে বলতে গেলে, স্বস্তিকা কিন্তু ওম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট। অর্পিতা অসামান্য না হলেও মন্দ নন, আবেগের দৃশ্যে আরও একটু দরদ থাকলে ভালো লাগত। দেবযানী মানানসই অভিনয় করেছেন। মোটেই ভালো লাগল না, অর্পিতার স্বামীর চরিত্রে ঈশান মজুমদার এবং অফিসের প্রেমিকার চরিত্রে অনুরাধা মুখোপাধ্যায়কে। দেবযানীর ছেলের চরিত্রে অনুভব কাঞ্জিলালের খুব একটা কিছু করার ছিল না।
মূলত আবেগপ্রবণ গল্পের কাঁধে চেপেই এগিয়ে যেতে চেয়েছেন পরিচালক। গল্প ভালো হলেও, বড্ড লম্বা। ছবিতে তেমন কোনও দৃশ্য নেই, যা মনে লেগে থাকে। শুধুমাত্র শেষ দৃশ্যে স্বস্তিকার অভিনয় ছাড়া। নিটোল গল্প যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁদের কাছে এই ছবি মন্দ লাগবে না। তবে, বেশ খানিকটা সময় খরচ করতে হবে। আর অবশ্যই স্বস্তিকার অনুরাগীদের জন্য এই ছবি উৎসবের উপহার।