বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
১৯৩৮ সালে মহারাষ্ট্রের মাথেরানে জন্ম গিরিশ কারনাডের। বাবা ডাক্তার রঘুনাথ কারনাড, মা কৃষ্ণাবাঈ নি মানকিকার। পরে তাঁদের পরিবার কর্নাটকের সিরসিতে থিতু হলে সেখানেই নাটকের প্রতি আকর্ষণ জন্মায় তাঁর মধ্যে। অক্সফোর্ডের ম্যাগডেলান বিশ্ববিদ্যালয়ের রোডস স্কলার গিরিশ কারনাড ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের চাকরি ছেড়ে নাটককেই সর্বক্ষণের পেশা হিসেবে বেছে নেন। পরে অবশ্য কিছুদিন ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান এবং পুনে ইনস্টিটিউট অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনের ডিরেক্টর পদেও কর্মরত ছিলেন।
তাঁর লেখা প্রথম নাটক ‘যযাতি’। দ্বিতীয় নাটক ছিল ‘তুঘলক’। এই নাটকটিই তাঁকে দেশব্যাপী খ্যাতি এনে দেয়। ১৯৬৪ সালে লেখা রূপকধর্মী এই নাটকটির মাধ্যমে তিনি নেহরুর জমানার রাজনীতিকে সমালোচনা করেন। তখন গিরিশের বয়স মাত্র ২৬ বছর। এনএসডি সহ বিভিন্ন সংস্থা এই নাটকটি প্রযোজনা করে। লন্ডনেও মঞ্চস্থ হয় নাটকটি।
আজীবন শাসকের স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধিতা করে গিয়েছেন তিনি। গৌরী লঙ্কেশের মৃত্যুর বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানেও অসুস্থ শরীরে তিনি মঞ্চ থেকে শহুরে নকশাল বলে চিহ্নিত করে বুদ্ধিজীবীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করেন। সে জন্য অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই প্রতিবাদী শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভোলেননি। শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও। রাষ্ট্রপতি এক ট্যুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘নাট্যকার, অভিনেতা ও ভারতীয় থিয়েটারের পুরোধা গিরিশ কারনাডের মৃত্যুর খবর শুনে আমি শোকাহত। আমাদের সংস্কৃতি জগৎ আজ নিঃস্ব হল।’ এক ট্যুইট বার্তায় মোদি লিখেছেন, ‘গিরিশ কারনাডকে মানুষ মনে রাখবে একাধিক মাধ্যমে তাঁর সাবলীল অভিনয়ের জন্য। তিনি তাঁর মনের কথাও বলতেন অত্যন্ত আবেগের সঙ্গে। আগামীদিনেও তাঁর কাজ জনপ্রিয়তা অর্জন করবে। তাঁর প্রয়াণে আমি দুঃখিত। তাঁর আত্মা চিরশান্তি লাভ করুক।’
তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব ও চলচ্চিত্র অভিনেতা গিরিশ কারনাডের মৃত্যুতে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। কন্নড় ও হিন্দি নাটক ও চলচ্চিত্র জগতে তিনি দীর্ঘসময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জ্ঞানপীঠ, পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ ও কালিদাস পুরস্কারে সম্মানিত গিরিশ কারনাডের মৃত্যু কন্নড় তথা সমগ্র ভারতের চলচ্চিত্র ও নাট্য জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমি ওঁর পরিবার-পরিজন ও অসংখ্য অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’
নাটক লেখার পাশপাশি গিরিশ কারনাড সিনেমা ও টেলিভিশনে অভিনয়ও করেছেন। দূরদর্শনে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘মালগুড়ি ডেজ’-এ তিনি স্বামীর বাবার চরিত্রে অভিনয় করতেন। প্রায় শ’খানেক সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন তিনি। তার মধ্যে ‘নিশান্ত’, ‘মন্থন’, ‘স্বামী’-এর মতো প্যারালাল ফিল্ম যেমন আছে, তেমনই আছে ‘এক থা টাইগার’, ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’-এর মতো জনপ্রিয় ছবিও। ডকুমেন্টরি ও পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি মিলিয়ে মোট ১৩টি ছবির নির্দেশনাও দিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে ‘উৎসব’-এর মতো মূল ধারার ছবিও। বাদল সরকারের বিখ্যাত নাটক ‘এবং ইন্দ্রজিৎ’-এর ইংরেজি রূপান্তর করেছিলেন তিনি। কন্নড় ভাষায় মোট ১৪টি নাটক লিখেছেন। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, অভিনেতা কমল হাসান, নাসিরুদ্দিন শাহ, শাবানা আজমি, অনিল কাপুর, নন্দিতা দাস, প্রভু দেবা, গায়িকা লতা মঙ্গেশকর, পরিচালক দীপা মেহতা প্রমুখ। সাহিত্য অ্যাকাডেমির সভাপতি চন্দ্রশেখর কাম্বারও শোক প্রকাশ করেছেন।
স্বস্তিনাথ শাস্ত্রী
ছবি : পি টি আই