কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায় উন্নতি ও লাভ বৃদ্ধির যোগ। সাহিত্যচর্চা/ বন্ধু সঙ্গে আনন্দ। আর্থিক উন্নতি হবে। ... বিশদ
বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? সমাজের অবক্ষয় নতুন নয়। কিন্তু তার সমাধন খুঁজতে সত্যিই কি রাজি কেউ? বাস্তবিক নানা সমস্যায় জর্জরিত সাধারণ মানুষেরও মুখে কুলুপ। সবাই যেন বোবা। রাজার কাছে প্রতিবাদ জানানোর মতো মানুষ সত্যি নেই? সে কারণেই সমাজের এই দুর্দিনে আসতে হল গুপী এবং বাঘাকে।
সম্প্রতি তপন থিয়েটারে ঐহিকের প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হল ‘সত্যবচন’। নাটকের প্রধান দুই চরিত্র গুপী ও বাঘা। সমাজের সাম্প্রতিক হাল হকিকত দেখতে ও বুঝতে এসেছে তারা। সমাজের তিন স্তম্ভ কৃষক, শ্রমিক ও শিক্ষককে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির সরেজমিনে তদন্ত করতে তারা বেছে নিয়েছে। পরিচালকের ভাবনায় স্বপ্নের মতো বাস্তব সমাজেরই এক অন্য দিক উন্মোচিত হয়েছে। যে কোনও সমস্যায় যদি গুপী-বাঘার মতো কাউকে পাওয়া যেত, তাহলে হয়তো মানুষ এত কষ্টে থাকত না।
‘হীরক রাজার দেশে’ কৃষকরা ফসল ফলালেও, তারাই মুখে এক মুঠো অন্ন তুলতে হিমশিম খেত। শ্রমিকেরও প্রায় একই অবস্থা। আর শিক্ষকের আক্ষেপ ছিল শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। কিন্তু তার সীমিত ক্ষমতার বাইরে সে কী বা করতে পারে? সেই গল্পের থেকে বর্তমান সমাজ আদৌ কতটা পরিবর্তন হয়েছে, তা দেখাবে এই নাটক। সমস্যা সমাধানে এখনও ভূতের রাজার শরণাপন্ন হতে হয় গুপী-বাঘাকে।
তবে এই সমস্যা কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষকের নয়, এই সমস্যা যে সকলের, তা দেখা যায় এক শহুরে বৈঠকে। নীলিমার (পারমিতা মুখোপাধ্যায়) বিশ্বভ্রামণিক মামা (প্রবীর আদিত্য) ও সুব্রতর (বিভাস ঘোষ) আইনজীবী বন্ধু অলক সেনগুপ্তর (প্রেমাঞ্জন দাশগুপ্ত) মধ্যে আলোচনা চলতে থাকে। পরিচালক এই চরিত্রগুলি দিয়ে বর্তমানকে তুলে ধরেছেন। প্রত্যেকের অভিনয় ছিল স্বপ্রতিভ।
অভিনেতা, পরিচালক ও নাট্যকার অরিন্দম রায় আসলে বিশ্ববরেণ্য পরিচালক সত্যজিৎ রায়কে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে তাঁর সিনেমার কয়েকটি চরিত্রকে মঞ্চে তুলে ধরেছেন। গুপী-বাঘার পাশাপাশি ‘আগন্তুক’-এর চরিত্ররাও হাজির হয়েছে। এটা বেশ ভালো প্রয়াস। গুপী (অরিন্দম রায়) ও বাঘা (ঋদ্ধিবেশ ভট্টাচার্য) নাটকের সূত্রধর। দু’জনের অভিনয় ও গান নাটককে এক সুরে বেঁধে রাখে।
নাটকে অন্যান্য যে চরিত্রগুলি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের মধ্যে চাষীর বউ (পামেলা দে), শ্রমিক (দেবাশিস ঘোষ), মাস্টারমশাই (অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়), সরকার (স্বাতী রায়), সেক্রেটারি (রাজশ্রী বিশ্বাস) অন্যতম। প্রত্যেকের অভিনয়ে আত্মবিশ্বাস ছিল ভরপুর। নীলাব্জ নিয়োগীর আবহ ও বাবলু সরকারের আলো নাটককে সম্পূর্ণ করে তুলতে সাহায্য করেছে। পামেলা দে ও বিপ্লব মুখোপাধ্যায়ের মুখোশ নির্মাণ বেশ ভালো। ‘ভূতের রাজা’কে আলোর কারসাজিতে হাজির করেছেন সমীর প্রধান। দৃশ্যকল্প, মঞ্চ ভাবনা ও সহকারী পরিচালনা করেছেন স্বাতী রায়।
বাস্তব পরিস্থিতি নির্ভর এই নাটক কতটা সমাজ বদলে ফেলতে পারবে, তা বলা মুশকিল। তবে দর্শককে অবশ্যই ভাবনার রসদ দেবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতা নির্বাচন করার দায়িত্ব জনতার। সেই গুরুদায়িত্ব পালনের আগে সবদিক বিবেচনা করতে শেখায় এই ধরনের বাস্তবধর্মী নাটক। সেদিক থেকে এই প্রযোজনা সফল। অনুশীলনের স্পষ্ট আভাসও যথাযথ ছিল।