স্বরূপ কুলভী: মামার বাড়ি মানেই দেদার খেলাধুলো। মায়ের চোখরাঙানি থেকে একটু নিস্তার। তিতাস দু’দিন হল মামাবাড়ি এসেছে। পরীক্ষা শেষের পর। সকালে পাশের মাঠে একটু ফুটবল খেলে বাড়ি ঢুকতেই দিদা বলল, এই রোদে কেউ খেলে? আঁচল দিয়ে মুখটা মুছিয়ে বলল, দেখ তো, চাঁদপানা মুখটা রোদে কেমন ছোট হয়ে গিয়েছে। সোফায় বসে ম্যাগাজিন পড়ছিল মামা। মুখটা না তুলেই বলল, শুধু কি তিতাস! চাঁদটাই তো শুকিয়ে ছোট হয়ে যাচ্ছে। এতক্ষণ খেয়ালই করেনি যে, মামা ওখানে বসে রয়েছে। দিদার হাতটা সরিয়ে ঝুপ করে মামার পাশে বসে পড়ে তিতাস। তারপর জানতে চায়, মামা, সত্যিই চাঁদ ছোট হয়ে যাচ্ছে? একটু হেসে মামা জানায়, ছোট মানে? একেবারে দেড়শো ফুট কমে গিয়েছে। একটু অবাক সুরে তিতাস জিজ্ঞেস করে, তাহলে কী হবে? এবার মামা ম্যাগাজিনটা সরিয়ে রেখে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, কিস্যু হবে না। যেমন আছে, তেমনই থাকবে সব। তুই কী ভাবছিস-একদিনে ধাঁ করে চাঁদ ছোট হয়েছে। একেবারেই না। কয়েকশো কোটি বছর ধরে এই বদল এসেছে। আরও বদল হবে। শেষপর্যন্ত কী হয়, তা দেখার জন্য আরও কয়েকশো কোটি বছর অপেক্ষা করতে হবে। তিতাস মামাকে একটু ঠেলে বলে—ও..হো..। কিন্তু কী করে জানা গেল যে, চাঁদ ছোট হয়েছে?
মামা টেবিলে রাখা একটা আঙুর নিয়ে বলল, এটা কয়েকদিন রেখে দিলে কী হবে বল তো। ক্রমশ শুকিয়ে যাবে। তেমনই হয়েছে চাঁদের দশা। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহের অন্তঃস্থল মানে যাকে বলে কোর এরিয়া, তা কয়েক কোটি বছরে ক্রমশ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। চাঁদের বিভিন্ন ছবি বিচার বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা তা জানতে পেরেছেন। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা চাঁদের মাটিতে ভূমিকম্পের প্রভাব ও ফাটল খতিয়ে দেখে উপগ্রহটির ছোট হওয়ার কথা জানিয়েছে। 
তিতাস বলে, ওই ঠান্ডা হওয়ার পালা এখনও কি চলছে? মামা উত্তরে বলে, প্রায় সাড়ে চারশো কোটি বছর আগে পৃথিবীর সঙ্গে একটি মহাজাগতিক বস্তুর ধাক্কায় চাঁদ তৈরি হয়েছিল। ওই ধাক্কায় প্রচুর তাপ তৈরি হয়। তখন থেকেই চাঁদ ঠান্ডা হয়ে চলেছে। তবে বাইরের দিকটা একেবারেই ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু চাঁদের ভেতরটা এখনও ঠান্ডা হচ্ছে। এরফলেই সঙ্কোচন হচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়েছে পুরো চাঁদ জুড়েই। এই কারণেই চাঁদের পৃষ্ঠভূমি কমেছে এবং কঠিন উপরিভাগে ভাঁজ বা ফাটল তৈরি হয়েছে। 
মামা আরও জানায়, চাঁদের কোর এরিয়ার ব্যাস প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। তা অনেকটাই গলিত উপাদানে তৈরি। ওই ভিতরের অংশ এখনও ঠান্ডা হচ্ছে এবং পুনর্গঠিত হচ্ছে। এই কারণেই চাঁদের আয়তন কমেছে। তিতাস বলে, চাঁদ ছোট হলে আমাদের কোনও ক্ষতি হবে না তো? মামা বলে, যে হারে চাঁদ ছোট হচ্ছে, তাতে চিন্তার কোনও কারণ নেই। তাছাড়া চাঁদের ভর তো কমছে না। তাই পৃথিবী ও চাঁদের মাধ্যকর্ষণ বল একই থাকবে। কাজেই  কোনও চিন্তা নেই।