মানসিক উত্তেজনার বশে ঘরে বাইরে বিবাদে জড়িয়ে অপদস্থ হতে পারেন। হস্তশিল্পীদের পক্ষে দিনটি শুভ। মনে ... বিশদ
বাঙালির দী-পু-দা! সেই ‘পু’-তে পা দিলেই জোড়া উন্মাদনা। সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি জগন্নাথধাম। এই টানেই সারা বছর বাঙালির উইকএন্ড ছুটি কাটানোর অন্যতম সেরা ঠিকানা পুরী। পুরীতে এবার অভিজাত বাঙালির আস্তানা হতে পারে আইটিসি গ্রুপের নতুন হোটেল ‘ফরচুন বিচফ্রন্ট’। আরামদায়ক থাকার সঙ্গে এলাহি খাওয়া, সবই এক ছাদের তলায়। সঙ্গে হোটেল থেকেই পুরীর জগন্নাথ মন্দির সহ আশপাশের যাবতীয় সাইট-সিইংও করতে পারবেন ভ্রমণপিপাসুরা।
রাতের ট্রেনে খাওয়াদাওয়া সেরে একঘুম। সকালে উঠতেই পুরী স্টেশন। স্টেশন থেকে বাইপাস হাইওয়ে ধরে দ্রুত পৌঁছে যাওয়া যায় পুরীর মেরিন ড্রাইভে। মূল শহরের ব্যস্ততাকে বাঁদিকে রেখে সোজা এগিয়ে গেলে অন্তত আধঘণ্টা সময় বাঁচবে আপনার। মেরিন ড্রাইভ অঞ্চলটা তুলনামূলক ফাঁকা। পর্যটকদের ভিড় বা কোলহল খুব একটা নেই। আপাত শান্ত জনশূন্য বিচ। সামনেই নীল জলরাশির বিপুল গর্জন। ঢেউ ভাঙার আওয়াজ। জলে পা দেওয়ার আগে সেই শব্দ শুনেই মন ভরে যায়। চারিদিকে এক অদ্ভুত শান্তি। ক্লান্তিহীন সেই মনোরম দৃশ্যের মায়া কাটিয়ে এবার হোটেলে চেক-ইন করার পালা।
বাইপাস ধরে মেরিন ড্রাইভে ঢোকার ঠিক ১০০ মিটারের মধ্যেই গত ডিসেম্বরে আত্মপ্রকাশ করেছে পুরীতে আইটিসি গ্রুপের প্রথম হোটেলটি। হোটেলে প্রবেশ করা মাত্রই অতিথি আপ্যায়ন আর খাতির-যত্ন যথেষ্ট। ৩৬টি রুমে সজ্জিত এই হোটেলে রয়েছে সমস্ত রকম আধুনিক ব্যবস্থা। রয়েছে সুবিশাল সুইমিং পুল, জিম, স্পা সবই। তবে জায়গাটা পুরী। ফলে হোটেলের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ সৈকতমুখী জানালা ও বারান্দা। পরদা সরালেই সমুদ্রের হাতছানি। বারান্দায় বসেই হয়তো কেটে যাবে ঘণ্টাখানেক।
পুরী শহরে ঢুকতেই ব্লু-ফ্ল্যাগ বিচ। ওড়িশা সরকারের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছে এই বিচ। এন্ট্রি ফি ৫০ টাকা। অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতেই সূর্য অস্ত যাবে পশ্চিমে। সেখান থেকে চলুন গোল্ডেন বিচ। এখানে আবার পর্যটকদের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা নেই। বিচের উপরেই ঠিক যেন জমে উঠেছে মেলা। ছোটদের রাইড থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর সামগ্রী কী নেই সেখানে। হরেক রকমের জিনিসপত্রের মধ্যেই নাকে আসবে মুখরোচক খাবারের সুঘ্রাণও। আরও আছে পুরীর বিখ্যাত খাজার দোকান।
পরের দিন সকালেই জগন্নাথ ধামের উদ্দেশে রওনা। হোটেল কর্তৃপক্ষই যাবতীয় ব্যবস্থা করে দেবে আপনার দর্শনের। সকাল ছ’টায় মন্দিরের উদ্দেশ্যে যাত্রা। অতিথিশালা থেকে ২ কিলোমিটারের মধ্যেই মন্দির। গাড়ির ব্যবস্থা তো হোটেল করে দেবেই, প্রয়োজনে মন্দির প্রদর্শন ও পুজোর জন্য পুরোহিতেরও বন্দোবস্ত করে দেবে তারা। তবে সেই সুবিধা নেবেন কি না তা পর্যটকের নিজস্ব পছন্দ। পুজো শেষে হোটেলে ফিরতেই হরেকরকমের জলখাবারের প্ল্যাটার সাজিয়ে প্রস্তুত হোটেলের রেস্তরাঁ জোডিয়াক। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের এলাহি বন্দোবস্ত।
এবার আশপাশে ভ্রমণের পালা। কোনারক মন্দিরের মতো দর্শনীয় স্থান যেমন রয়েছে, তেমনই স্থানীয় মানুষদের হাতে তৈরি জিনিসপত্র কেনাকাটা করার জন্য রয়েছে রঘুরাজপুর ও পিপলি। পিপলির অ্যাপলিকের কাজ খুবই বিখ্যাত। দোকান জুড়ে যেন রঙের মেলা। যেদিকেই তাকান লাল, হলুদ, সবুজ রঙের ব্যাগ, ল্যাম্পশেড, ওয়াল হ্যাংগিং, ছাতা সহ আরও কত কিছুই না চোখে পড়বে। দরদাম করে নিজের পছন্দ অনুযায়ী কিনতে পারেন সেইসব জিনিস। দেশ থেকে তো বটেই বিদেশি পর্যটকরাও এখন এই কাজের কদর করে। দোকানের ভিতরে ওয়ার্কশপও রয়েছে। শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে তাঁদের কাজের ধরন জানাও সম্ভব সেখান থেকে।
আর রঘুরাজপুর তো সম্পূর্ণই একটি আর্ট গ্যালারি। প্রতিটি বাড়ির দেওয়ালে পুরাণ, ইতিহাসের চিত্রকলা প্রদর্শিত। ব্যবসায়ীক বন্দোবস্তও রয়েছে। পটে আঁকা ছবি নানা মাপে বিক্রি হয় এখানে। তাতে পুরাণের ছবি, মহাকাব্যের নানা দৃশ্য সবই রচিত হয়। রঘুরাজপুর গ্রামের প্রতিটি ঘরেই চিত্রকরদের বাস। তাঁরা বাড়ির দেওয়ালে নানারকম ছবি আঁকেন। সময়ে সময়ে সেগুলো বদলে ফেলেন। আবার নতুন রূপ পায় বাড়িঘর। কোভিডের সময় এই চিত্রকলাই তাঁদের মূল আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একে অপরের পাশে রং তুলি নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। পর্যটকনির্ভর গ্রামে যখন রুজিরোজগারের অভাব, তখনও ছবি আঁকাকে পাথেয় করেই দিন কাটিয়েছেন তাঁরা। পুরী ভ্রমণে আরও যুক্ত করতে পারেন মাসির বাড়ি, পিসির বাড়ি, সোনার গৌরাঙ্গ, নরেন্দ্র পুষ্করিণী এমনকী লোকনাথ মন্দিরও। স্থানীয়দের বিশ্বাস এই মন্দিরে শিব বিরাজ করছেন। শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে এখানে জাঁকজমকপূর্ণ পুজো ও মেলার আয়োজন হয়।
পুরীর আশপাশে ভ্রমণ, ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দির দর্শন, চিল্কা হ্রদে গিয়ে ডলফিনের খেলা দেখা বা নন্দনকাননে সারাদিন ব্যপী ভ্রমণ— সবই সম্ভব হোটেলের গাড়িতেই। জায়গা অনুযায়ী গাড়িভাড়া দিলেই ঠিক সময়ে গেটে হাজির হয়ে যাবেন বিশ্বাসযোগ্য সারথি। তিনিই ঘোরাবেন পুরীর বিভিন্ন স্থান। নিজেই পর্যটকদের গাইডও করে দিতে পারেন তিনি।
কোনারক মন্দিরের বাইরে চোখ টানবে একের পর এক সাজানো-গোছানো স্টল। মহিলাদের হ্যান্ডমেড ব্যাগ থেকে শুরু করে পেনস্ট্যান্ড। কোনারক মন্দিরের আদলে তৈরি রথের চাকাও সংগ্রহ করে নিতে পারবেন পর্যটকরা। মনে করে কোনারক মিউজিয়ামও দেখে আসতে পারেন। সন্ধ্যা নামলে হোটেলে ফেরার পালা। তারপর আবার নিজের শহর কলকাতা। ফেরার সময় স্টেশন কিংবা ৭০ কিলোমিটার দূরে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ড্রপ করার জন্য গাড়ির বন্দোবস্ত করে দেবে হোটেল কর্তৃপক্ষই। সপ্তাহ শেষে জগন্নাথধামে দু’দিন ছুটি কাটানো যেন স্বপ্নের মতোই!