Bartaman Patrika
বিকিকিনি
 

বসন্তের ডাকে জিম করবেটের জঙ্গলে

শীত থেকে গ্রীষ্মের মাঝামাঝি পর্যন্ত খোলা থাকে জঙ্গল। তার মধ্যে বসন্ত বা গ্রীষ্মে বন্য পশু থেকে জঙ্গুলে প্রকৃতি সবই এক ভিন্ন রূপ ধারণ করে। ঘুরে এসে বর্ণনায় 
কমলিনী চক্রবর্তী।

 
জিম করবেট নামটার সঙ্গে জঙ্গল আর বাঘ শিকারের গল্প বাঙালির মনে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। উত্তরাখণ্ডের জঙ্গলে তাঁর শিকারের রোমহর্ষক গল্প পড়ে রীতিমতো গায়ে কাঁটা দেয়। উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তখন জঙ্গলে ঢাকা। পায়ে হেঁটে জিম করবেট রওনা দিয়েছেন রুদ্রপ্রয়াগ থেকে। আর একেবারে চুপিসারে তাঁর পিছু নিয়েছে একটা চিতাবাঘ। সারারাত চিতাটি যে তাঁকে অনুসরণ করেছে ঘুণাক্ষরেও টের পাননি জিম করবেট। চলতে চলতে প্রায় রাত পেরিয়ে ভোর হল। করবেট সাহেবের তখন মনে হল এপথে তিনি একা নন। ঘুরে তাকিয়ে দেখেন চিতাবাঘের টাটকা পায়ের ছাপ। অর্থাৎ সারারাত তাঁর পিছু নেওয়ার পর চিতাটি সবেমাত্র জঙ্গলে গা ঢাকা দিয়েছে। সেযাত্রা চিতার মুখোমুখি হননি জিম করবেট। হলে আর এই গল্পটা লিখতে পারতেন কি না কে জানে! একবার উঁচু গাছের মগ ডালে মাচা করে বসে রয়েছেন জিম করবেট। গাছের নীচে একটা ছাগল বেঁধে রেখেছেন বাঘের টোপ হিসেবে। ছাগল ডাকলেই বাঘ আসবে তাকে খেতে। আর তখনই বাঘ শিকার করবেন করবেট। এমনই ভাবনা নিয়ে তিনি মাচায় চড়ে বসলেন। এদিকে সাহেব মাচায় ওঠার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ছাগল পড়ল ঘুমিয়ে। সারারাত একবারও ডাকেনি সে। তাই বাঘও আসেনি সে পথে। একটানা বাঘের প্রতীক্ষায় মাচায় বসে ক্লান্ত জিম করবেট শেষে মাচার উপরেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এমন নানা ঘটনা ছাড়াও আছে জঙ্গলের অপরূপ বর্ণনা। উত্তরাখণ্ডের এই জঙ্গলে প্রতিটি ঋতু বদলের অসাধারণ রূপরেখা এঁকেছেন তিনি। শীতের পাতা ঝরা মরশুমের পর বসন্তের সতেজতা থেকে গ্রীষ্মের রোদ ঝলমলে দুপুরে জঙ্গলের রূপ যেমন তাঁর কলমে ধরা পড়েছে, তেমনই বর্ষার জল পেয়ে অরণ্যের চনমনে চঞ্চল প্রাকৃতিক রূপের ছবিও দেখেছি আমরা। জিম করবেট অভয়ারণ্যই আমাদের এবারের গন্তব্য। 
এপ্রিলের গোড়ায়, একেবারে ভোররাতে গাড়ি চড়েই আমরা পাড়ি জমালাম উত্তরাখণ্ড। কলকাতা থেকে ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ পেরিয়ে উত্তরাখণ্ডের রামনগর পর্যন্ত নিজেদের গাড়িতেই চলেছি। পথে প্রকৃতির পটপরিবর্তন দেখে মুগ্ধ হচ্ছি বারবার। পশ্চিমবঙ্গ পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডে ঢুকতেই প্রাকৃতিক চিত্রপটে বদল চোখে পড়ল। ক্রমশই রুক্ষ রূপ ধারণ করতে শুরু করেছে প্রকৃতি। দূরে পাহাড়ের হালকা রেখা দেখা যাচ্ছে। এই পাহাড়গুলো সবুজ। বাতাসে আর্দ্রতা ক্রমশই কমে যাচ্ছে। শুষ্ক গরম বাতাস, রুক্ষ পটভূমির মাঝে সবুজে মোড়া পাহাড়ের রেখাগুলোই আমাদের চোখের সামনে ওয়েসিস তৈরি করছে। ক্রমশ ওই পাহাড়গুলোই হাতের নাগালে আসতে আসতে আবারও দূরে সরে যেতে লাগল। ঝাড়খণ্ড ছেড়ে আমরা ততক্ষণে বিহারের পথ ধরেছি। যতই এগচ্ছি হোর্ডিং থেকে মাইলফলক সর্বত্রই হিন্দি ভাষার প্রাধান্য। বাংলা হরফ তো কোথাও নেই, এমনকী ইংরেজিও ম্লান। গাড়ির গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গঞ্জগুলোও পেরিয়ে যাচ্ছে একে একে। কোনওটার নাম পড়া যাচ্ছে কোনও নাম আবার গাড়ির দ্রুত গতির আড়ালে ঢাকা পড়ে অজানাই থেকে যাচ্ছে। বিহারের সীমান্ত জনপদ, মোহানিয়ায় যখন পৌঁছলাম তখন সন্ধে নামবে প্রায়। গোধূলির মিষ্টি আলোয় উত্তরপ্রদেশের প্রায় গায়ে লাগানো বিহারি এই গঞ্জটির সঙ্গে পরিচয় ঘটল। বিহার পর্যটনের হোটেল ‘মোহানিয়া বিহার’ একেবারে ব্যস্ত বাজারি এলাকায়। রাস্তা থেকে বেশ কিছুটা সিঁড়ি বেয়ে নেমে গিয়ে দোকানপাটগুলোর বিস্তার। মুদিখানার পাশেই গয়নার দোকান, আবার তার গায়ে লেগে রয়েছে দাওয়াখানা। রাস্তার ধার ঘেঁষে ফেরিওয়ালারা উনুন জ্বালিয়ে চাটু গরম করে ভাজি-পুরি বা তাওয়া মশলা সব্জি বেচতে ব্যস্ত। এই জনপদটি একেবারেই হাইওয়ে লাগোয়া। সেখান থেকে মিনিট তিনেক ভিতরে ঢুকতে হয়, তারপরেই হোটেল। তাই মাঝেমধ্যেই গ্রাম্য সুরের তাল কাটছে ট্রাকের তেজি হর্নের আওয়াজে।  
পরের দিন আবারও ভোর থাকতেই রওনা হয়েছি। উত্তরপ্রদেশে যতদূর যাওয়া যায়, রাত কাটবে সেখানেই। তবে আজকের গাড়ি সফরের হাইলাইট পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে। বক্সার থেকে শুরু হয়ে লখনউ পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের বিস্তার। আমরা গাজিপুর থেকে এই পথ ধরব। পথের বিভিন্ন জায়গায় একজিট রয়েছে। প্রতিটি একজিটের আগেই টোল গেট। দূরত্ব অনুযায়ী নির্দিষ্ট টোল দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে ছেড়ে বেরনো যায়। পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে-তে ওঠার মুখেই চোখে পড়ল ‘ওয়েলকাম টু পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে’ লেখা বোর্ড। ছ’লেনের চওড়া মসৃণ রাস্তার ধারে প্রতি একশো কিলোমিটার অন্তর পেট্রল পাম্প। পথে ওয়াশরুম আর খাবার দোকান। এই রাস্তার মাঝে এরোপ্লেন নামার ব্যবস্থাও মজুত! বেশ একটা বিদেশ বিদেশ ভাব। একটানা ৩৪০ কিমি বাধাহীনভাবে গাড়ি চলবে। চালাতে গিয়ে চালকের যদি চোখে ধাঁধা লাগে তাহলে পথের ধারেই গাড়ি থামানোর জন্য ছক কেটে জায়গা করা রয়েছে। 
লখনউ পৌঁছে গেলাম মাঝ দুপুরেই। শহরে না ঢুকে হাইওয়ের ধারে লাঞ্চ সেরে আরও বেশ খানিকটা এগিয়ে চললাম। বিকেল পাঁচটা নাগাদ বেরিলি পৌঁছে ম্যাপের সাহায্যেই কাছাকাছি হোটেলের সন্ধান করে সেখানেই দ্বিতীয় রাতের বিশ্রাম। পরদিন সকালে বহু প্রতীক্ষিত করবেটের পথে যাত্রা শুরু হবে। জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কের প্রবেশদ্বার রামনগর। রামগঙ্গা নদীর ধারে জমজমাট জনপদ। সেখানেই শান-এ-পাঞ্জাব ধাবা আমাদের ল্যান্ডমার্ক। ধাবার সামনে সাফারি জিপ আসবে, সেই জিপেই আমাদের আগামী কয়েকদিনের যাত্রা। এই কয়েকদিন আমাদের গাড়ি ধাবা সংলগ্ন পার্কিংয়ে রাখার বন্দোবস্তও করিয়ে দেবেন জিপ চালক। 
জঙ্গলের প্রতি এক অমোঘ টান আমার মনে বরাবর। গাছের পাতায় রোদের ঝিলিক, মরশুমভেদে প্রকৃতির রং বদল উদাস করে আমায়। বেরিলি থেকে রামনগর মোটামুটি ঘণ্টা চারেকের পথ। উত্তেজনায় টানটান আমরা একটু আগেই পৌঁছে গেলাম ধাবায়। ড্রাইভার আর জিপের জন্য অপেক্ষার সময়টা কাজে লাগিয়ে লাঞ্চ সেরে নিলাম। ঠিক পঁয়তাল্লিশ মিনিট বাদে ফোন এল ড্রাইভারের, জিপ নিয়ে ধাবার সামনে হাজির সে।
জিপ ড্রাইভার রবি কুমার সিং আমাদের দু’রাত তিনদিনের সঙ্গী। এর মধ্যে আবার আস্তানা বদলের ঝামেলাও রয়েছে। একটি বনবাংলোয় দু’রাতের বুকিং আমরা পাইনি। ঢিকালা জোনে সাফারি করব। তারই মধ্যে প্রথম রাত কাটবে সরফদুলির বাংলোয় আর দ্বিতীয় রাত সুলতান বাংলোয়। প্রায় শুরুতেই সুলতানের বাংলো। মূল সাফারি অঞ্চল থেকে যাতায়াতে প্রায় ঘণ্টাখানেক লেগে যায়। দ্বিতীয় দিনের সাফারির মাঝে অত সময় পাওয়া যাবে না, তাই করবেটের জঙ্গলের মূল গেট পার করে সাফারি অঞ্চলে ঢোকার পথে প্রথমেই সুলতানের বাংলোয় আমাদের অগ্রিম চেক ইন করিয়ে দিলেন রবি। 
চারটে সাফারির বুকিং রয়েছে আমাদের। এর মাঝে বাঘ দেখার আশায় বুক বেঁধেছি সকলেই। আমার আবার বাঘে বিধি বাম। দেশের বিভিন্ন জঙ্গল ঘুরে বহু সাফারি নিয়েও ব্যাঘ্রদর্শন যে খুব একটা হয়েছে তা নয়। তবে গরমে জঙ্গল দর্শন এই প্রথম। তাই মনে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রবিকে প্রশ্ন করলাম, এর মধ্যে সে বাঘ দেখেছে কি না। রবি বলল, সেদিন সকালের সাফারিতেই বাঘের দেখা পেয়েছে। রবির কপালের উপর ভরসা করে শুরু হল আমাদের প্রথম সাফারি।  
ঘড়িতে মাঝদুপুর। তবু জঙ্গলের ভেতর যেন পড়ন্ত বেলা। ঘন গাছের ছায়ায় রোদের রেখা উঁকি দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে বারবার। আবার খানিক দূর যাওয়ার পর, কোনও এক বাঁক ঘুরতেই গনগনে রোদ এসে মুখের উপর আগুন জ্বালাচ্ছে। বসন্তের শেষ আর গ্রীষ্মের শুরুতে জঙ্গলের রূপ যে এমন মায়াময় হয়ে ওঠে তা জানতাম না। লম্বা ঘন শালের জঙ্গলে তখন দারুণ সব রঙের ছটা। এক সবুজেরই কত রকম। একই গাছের পাতায় পাতায় বিচিত্র নকশা কেটেছে রঙের নানা রূপ। কোথাও সবুজ ঘন হয়ে কালচে হয়েছে, কোথাও বা সবুজের কাঁচা রঙে রোদ পড়ে উজ্জ্বল ঝলমলে রূপ নিয়েছে। আবার কোনও গাছে বসন্তের বার্তা বুঝি বা পুরোপুরি পৌঁছয়নি। তাই কাঁচা সবুজের মাঝেই লালচে খয়েরি রঙের পাতা বিছিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারা। গাছের পাতায় এত রং যে দেখব তা আশাই করিনি। বসন্তের শেষবেলায় করবেটের জঙ্গলে পৌঁছে প্রকৃতির অপার মহিমা দেখে আমরা মুগ্ধ হলাম। বাঘ বা অন্য বন্য প্রাণীর চেয়েও জঙ্গলের রূপের অমোঘ টান উপভোগ করলাম দু’চোখ ভরে। 
কিছুক্ষণের মধ্যেই দৃশ্যপট সম্পূর্ণ বদলে গেল। ঘন জঙ্গুলে পথ সংকীর্ণ থেকে সংকীর্ণতর হচ্ছিল এতক্ষণ। সেই পথে আলোর রেখা শরণ করে জিপ চলছিল এঁকেবেঁকে। ওমা! হঠাৎই পথ উন্মুক্ত হল নদীর বুকে এসে। চারদিকের আলো আঁধারির খেলা নিমেষে মুছে গিয়ে খোলা আকাশের নীচে এসে দাঁড়াল আমাদের জিপ। তার আগেই যে জলের আভাস একদম পাইনি তা নয়। জঙ্গলের পাহাড়ি পথ বেয়ে নেমে আসা ছোটখাট ঝরনা, কাঁচা মাটির পথের গায়ে নদীর রেখা দেখা দিয়েছিল খানিক আগেই। কিন্তু গাছের পাতার রং বদল দেখে এতই মুগ্ধ ছিলাম যে মন দিইনি জলে। এবার বুঝলাম খানিক আগে থেকেই নদীর চরে বিছানো নুড়ি জঙ্গুলে পথের গায়ে ভিন্ন এক নকশা আঁকা শুরু করেছিল। এবার তারই প্রাচুর্য ধরা পড়ল আমাদের চোখে। গ্রীষ্মের শুরুতেই সতেজ চেহারায় নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছে নদী। শীতের সূক্ষ্ম জলের রেখা একটু একটু করে চওড়া হতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। বর্ষার জলের প্রতীক্ষায় তিরতির করে বয়ে চলেছে করবেটের জঙ্গলের লাইফলাইন রামগঙ্গা নদী। 
এই জায়গাটা বেশ চওড়া। জঙ্গলের পথে এমন চওড়া চাতালের দেখা পাব আশা করিনি। অভ্যাসবশে নদীতে নেমে পড়ার তোড়জোড় শুরু করেছিলাম। ড্রাইভারসাহেব বাধা দিয়ে বললেন, ‘নামবেন না ম্যাডাম, জঙ্গলে নামা নিষেধ। এই নদীর চরে বাঘ আসে জল খেতে।’ বাঘের নামে আবারও শরীর মনটা চাঙ্গা হয়ে উঠল। জিপের সিটে উঠে দাঁড়িয়ে দূর থেকে দূরের পথে বিছিয়ে দিলাম চাউনি। কিন্তু নাহ্, দর্শন হল না। বরং নদীর জলের সূর্যের শেষ রশ্মির রূপেই মোহিত হলাম। খানিক ধূসর একটু নীলাভ রঙের জলে সূর্যের শেষ কিরণ পড়ে সোনারঙা হিল্লোল তুলছে। আর সেই রঙে স্নাত হচ্ছে নদীর চরে বিছানো সাদা নুড়ি পাথরগুলো। দু’চোখ ভরে দেখতে দেখতেই ক্যামেরার শাটার পড়ছে টুপটাপ। হঠাৎই রবির গলায় চাপা উত্তেজনা। ‘ওই দেখুন দূরে নদীর পাড়ে জল খাচ্ছে একদল ভোঁদড়। বাঘের চেয়ে কিছু কম বিরল নয় এই প্রাণী। সত্যি বলতে কী, করবেটের জঙ্গলে বাঘের দেখা যাও বা মেলে ভোঁদড় কিন্তু একেবারেই যায় না।’ রবির আঙুলের সোজাসুজি তাকিয়ে দেখি বেশ কিছু ভোঁদড় পড়ন্ত বিকেলে নদীর জলে হাপুস হুপুস স্নান করছে। নদীর বুকে ভোঁদড়গুলোর স্নানের ছিটে পড়ছে আর সেই ছিটের উপর সূর্যের রং লাগছে। রঙিন ফোয়ারা ছুটছে তখন রামগঙ্গার জলে। পড়ন্ত বিকেলের আলোর কতই না রং। জলের উপর রবির কিরণ পিছলে ছড়িয়ে যাচ্ছে বেশ খানিকটা। দারুণ লাগছিল দেখতে। হলুদ রং চলকে পড়ল জলে, ক্রমশ তা কমলা হল তারপর রক্তিম হয়ে মিলিয়ে গেল। খানিকক্ষণ নদীর জলে রঙের সেই উচ্ছ্বাস রইল। আকাশে তখন মেঘও রঙিন। প্রকৃতির হোলি খেলা এমনই চলল কিছুক্ষণ। তারপর পাট চুকিয়ে সূর্যদেব অস্ত গেলেন। গগনে শেষ আলোর রেখা ছড়িয়ে পড়ল। আর সেই সঙ্গে আমাদের প্রথম দিনের সাফারিও সাঙ্গ হল। 
মুগ্ধ চোখে রঙের ছটার পাশাপাশি আমার সপ্তদশী কন্যাকেও দেখলাম ক্রমশ জঙ্গলের প্রেমে পড়তে। মোবাইলে জঙ্গলের আওয়াজ রেকর্ড করা থেকে শুরু করে গাছের পাতায় রঙের বৈচিত্র্যের ছবি তোলা, সবই করছে সে আপন মনে। বাঘ বা অন্য পশু দেখাই যে জঙ্গল ভ্রমণের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়, শুধুই জঙ্গলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগও যে সাফারির অনবদ্য অঙ্গ, সেটাও তারিয়ে তারিয়ে উপলব্ধি করছিল সে রীতিমতো। ফিরতি পথ ধরতে নদী পেরিয়ে আমরা আবারও ঢুকে পড়েছি গহন বনে। পথের ধারে ধারে উইয়ের ঢিবিগুলো দাঁড়িয়ে আছে গাছের গুঁড়ির সঙ্গে কামোফ্লেজ করে। দিনের শেষ আলোটুকু শুষে নিচ্ছে তারা প্রাণপণে। ঢিবি দেখে রত্নাকর থেকে বাল্মীকি হয়ে ওঠার গল্প বলতে বলতে চলেছি আমরা। একটু বা আনমনা হয়েছিলাম বুঝি, চালকের হাতছানিতে সামনে তাকিয়ে দেখি একখানা শেয়াল চলেছে পথের ধার ঘেঁষে আপনমনে। যেন শেষবেলায় ঘরে ফেরার আগে জঙ্গল পরিক্রমায় বেরিয়েছে সে। তারই পিছু নিয়েছে একটি বনমোরগ। তার পালকের ঝটাপটিতে জঙ্গলময় হাসির হিল্লোল ছড়িয়ে পড়ছে। উড়ন্ত মোরগের পালকের হলুদ আর লাল রঙের বৈচিত্র্য। জঙ্গুলে সবুজ আর গৈরিকের সঙ্গে মিলেমিশে এক ভিন্ন রূপ ধারণ করছে তা।  
সরফদুলির বাংলোয় পৌঁছলাম সন্ধে সাড়ে ছ’টায়। বেশ জমজমাট এই বনবাংলো। ক্যান্টিনে গরম চা-পকোড়ার আয়োজন করা হয়েছে, পাশেই পর্যটকরা নিজেদের সাফারির গল্প বলছেন একে অপরকে। ক্যান্টিনের পিছনে কাঁটাতারের ফেন্সিং, রাতে কারেন্ট চালিয়ে দেওয়া হয় সেখানে। শেয়াল হরিণ বা হনুমানের উপদ্রব হয় নাহলে। বেড়ার ওপারে কুলকুল শব্দে বয়ে যাচ্ছে রামগঙ্গা নদী। সন্ধের অন্ধকারে নদীর জলে কালচে আভা। গাজিয়াবাদের একটি পরিবারের সঙ্গে আলাপ হল। বললেন, ‘কারেন্ট চালানোর সময়টাও শেয়ালরা বুঝে গিয়েছে। তার আগেই বেড়া ডিঙিয়ে বাংলোর চৌহদ্দিতে ঢুকে পড়ে। এই তো গতকাল সারারাত আমাদের বাংলো বারান্দায় একটা শেয়াল শুয়ে ছিল। আজ সকালে দরজা খুলেই মোলাকাত হল তার সঙ্গে।’ সন্ধে নামার সঙ্গেই, একটু শিরশিরে ভাব লেগেছে জঙ্গলের আবহাওয়ায়। ধূমায়িত কফির কাপে দু’হাত সেঁকতে সেঁকতে শেয়ালের গল্প শুনছিলাম। 
সরফদুলির বনবাংলোগুলোর দু’টি অংশ। পুরনো আর নতুন। পুরনো বাংলোগুলো একতলা কটেজ আর নতুন একটিই বাংলো রয়েছে দোতলা। তারই দ্বিতীয় তলটি আমাদের প্রথম রাতের ঠিকানা। পুরনো বাংলোগুলোর তুলনায় একটু দূরে নতুন বাংলোর অবস্থান। হাতমুখ ধোয়ার জন্য নিজেদের বাংলোর পথে পা বাড়ালাম। একেবারে বাড়ির কাছে এসে দেখি চৌহদ্দির ভেতর অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে বেশ কয়েক জোড়া চোখ। প্রথম দর্শনে ছাগল ঢুকেছে ভেবে তাড়াতে গিয়ে দেখি, ওমা! ছাগল কোথায়? একদল হরিণ আপন মনে বসে রয়েছে বাংলোর দাওয়ায়। আমাদের পায়ের আওয়াজে সচেতন হয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল বেড়া ডিঙিয়ে। এত কাছ থেকে হরিণ প্রথম দেখেছিলাম বেতলার জঙ্গলে। আমার তখন মাত্র ছ’বছর। এরপর হরিণ প্রচুর দেখেছি বটে, কিন্তু সবই সাফারির জিপে চড়ে, জঙ্গলের আনাচে কানাচে। 
পরদিন সকালের সাফারিটি শুরু হল ছ’টায়। বাংলো থেকে সবেমাত্র বেরিয়েছি, দেখি পথ জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রকাণ্ড এক হাতি। জঙ্গলের পথে হাতিকে সবাই কমবেশি এড়িয়ে চলে। আপাত নিরীহ এই প্রাণীটির মতিগতির সহজে ঠাহর করা যায় না। তাই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে জিপ থামিয়ে দিল রবি। আমাদের সঙ্গে চোখাচোখি হল বিশাল দাঁতাল হাতির। করবেটের জঙ্গলে দাঁতালের সংখ্যা ভালোই। আমাদের জিপের দিকে স্থির দৃষ্টে তাকিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে দাঁতাল। আমরা খানিক ভীত, খানিক রোমাঞ্চিত। রবির মুখ গম্ভীর। বেশ কাছাকাছি আসার পর শুঁড় তুলে, মুখ উঁচিয়ে জব্বর একখানা হুঙ্কার ছাড়ল সে। জঙ্গল আন্দোলিত হল সেই গর্জনে। তারপর একটু দাঁড়িয়ে আবার ধীর পায়ে জঙ্গলের ভেতর ঢুকে গেল। দীর্ঘশ্বাস পড়তে বুঝলাম এতক্ষণ শ্বাসরুদ্ধ হয়েছিল আমাদের। রবির মুখেও হাসি ফুটল অবশেষে। বলল, ‘গুড মর্নিং বলতে এসেছিল আপনাদের।’ আবারও চলেছি আমরা জঙ্গলের পথে। ভোরের দিকে বাতাসে শীতল অনুভূতি তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছি সকলেই। পথ চলতে গাছের ডালে নানারকম পাখি চেনাচ্ছে রবি। এক কাঠঠোকরারই কত রকম। তাড়াছাড়াও হাঁড়িচাচা, ফিঙে, মাছরাঙাদের ডাকে ঘুম ভাঙছে করবেটের জঙ্গলের। তার পাশেই মরা গাছের মগডালে অন্ধকারের চাদরে নিজেকে আড়াল করে ঘাপটি মেরে বসে রয়েছে একলা বাজপাখি। শিকার সন্ধানে চারদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে সে। 
এরই মধ্যে কুয়াশার চাদর সরিয়ে আলগোছে আড়মোড়া ভেঙে আত্মপ্রকাশ করছেন সূর্যদেব। শরীরে আলস্য ঝেড়ে ভোরের মিঠে আলোয় স্নাত হচ্ছে বনপ্রান্তর। সকালের প্রথম আলোকরশ্মির ছটা ছড়িয়ে পড়ছে গাছের প্রতি পরতে। লম্বা লম্বা শালগাছগুলো মাথা বাড়িয়ে রোদ মাখছে গায়ে। সেই রোদই গাছের পাতা গড়িয়ে জঙ্গলের মাটিতে এসে লাগছে। ছোট বড় গাছ-গুল্মরাও রোদের তাপ নিচ্ছে আয়েশ করে। পাতায় ফলে সূর্যের কিরণ ঝিকমিক করে উঠছে। সেই কিরণে কোথাও লাল আরও রক্তিম হচ্ছে, কোথাও বা কাঁচা সবুজ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে। সকালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জঙ্গলের সুরও বদলে যাচ্ছে। পাখির ডাকের ফাঁকে ফাঁকে কোথাও শেয়ালের ডাক কোথাও বা হনুমানের হুপহাপ শুনতে পাচ্ছি। হাঠাৎ গিয়ে পড়লাম জিপের জটলায়। ড্রাইভারদের হাতের ইশারায় চুপচাপ সবাই। বাঘ বেরল বলে! প্রথম জিপের আরোহী জানালেন, পাশের ঝোপে ‘মুভমেন্ট’ (নড়াচড়া) দেখা গিয়েছে। বাঘিনি পেড়ওয়ালি (নাম), বাচ্চা নিয়ে রয়েছে কাছাকাছি। একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা, ব্যস বাচ্চাসমেত বাঘিনি দর্শন অনিবার্য। উফ! সে কী উত্তেজনা মনে মনে। দমবন্ধ হয়ে আসছে প্রায়, এমনই ব্যাগ্র আমরা ব্যাঘ্র দর্শনের আশায়। সেকেন্ড থেকে অজস্র মিনিট পেরিয়ে গেল। চুপচাপ বসে আছি আমরা। কিন্তু কই? বাঘের মাথা লেজ কিছুই দেখতে পেলাম না। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে রবিই বলল, ঝোপের বাঘের পথ ফলো করে আর একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি। ভাগ্যে থাকলে আমরাই প্রথম জিপ হয়ে বাঘের মুখোমুখি পড়তে পারি। রাজি হলাম এককথায়। একটু ভিন্ন পথে চলল আমাদের জিপ, কিন্তু নাহ্, বাঘিনি ভারি লাজুক। ঝোপের আড়াল ছেড়ে মুখও বের করল না। নিরাশ মনোরথ আমরা আবারও অন্য পশু দেখায় মন দিলাম।
সকালের সাফারি শেষ ব্রেকফাস্ট ঢিকালার বনবাংলোর ক্যা঩ন্টিনে। তারপর সেখানেই খানিক বিশ্রাম নিয়ে শুরু হবে বিকেলের সাফারি। ঢিকালার বন বাংলো আসলে একটা বড়সড় কমপ্লেক্স। জঙ্গলের নৈঃশব্দ্য উপভোগ করা অসম্ভব সেখানে। ক্রমাগত লোকের কথায় বনের আওয়াজ মুছে যাচ্ছে। তবে দৃশ্যপট এখানে বড়ই মনোরম। সামনে দিয়ে বয়ে গিয়েছে চওড়া রামগঙ্গা নদী। কাঠের পাটাতন পেতে একটা বারান্দা মতো করা রয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়েই দিনের অর্ধেকভাগ কেটে যেতে পারে। নদীর ঠিক গায়ে লেগে রয়েছে একটা, দুটো, তিনটে পাতাঝরা গাছ। মাথার উপর নীল আকাশ, সমুখে জলের স্রোতে সাদা ফেনার হিল্লোল তুলে বয়ে চলেছে রামগঙ্গা। আর তার পাশেই ডালের জ্যামিতিক নকশা বিছিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাছের সারি। মনে হবে যেন কোনও দক্ষ শিল্পীর হাতে আঁকা ছবি। দেখতে দেখতে দুপুরের সাফারির সময় ঘনিয়ে এল। জিপের কাছে যেতেই রবি বলল, ‘প্রচুর ‘কল’  হচ্ছে। বাঘ আজ দেখা যাবেই যাবে।’ আশপাশে বাঘ থাকলে বার্কিং ডিয়ার ডেকে অন্যান্য পশুকে সচেতন করে। সেই ডাকই হল ‘কল’। অতএব কল মানেই বাঘ দেখার সম্ভাবনা। প্রসঙ্গত বলি, প্রথম সাফারি ইস্তক কল-এর ছড়াছড়ি। তবু বাঘের দেখা মেলেনি। ফলে কল-এর উপর বিশেষ ভরসা করে আশায় এযাত্রা আর বুক বাঁধা সম্ভব হল না। 
জঙ্গলের যতই ভেতরে ঢুকছি ততই নৈঃশব্দ্য যেন ঘিরে ধরছিল আমাদের। জঙ্গলের আওয়াজেও আজ বিকেলে কেমন যেন ভাটা পড়েছে। বার্কিং ডিয়ারের ‘কল’ ছাড়া শব্দ কিছুই নেই। হঠাৎই ব্রেক কষে জিপ থামাল রবি। ডান হাতে জঙ্গলটা পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠে গিয়েছে সামান্য। আর সেই ঢালেই গাছপালার আড়ালে হলুদ কালো ডোরাগুলো একবার চোখে প঩ড়েই মিলিয়ে গেল। চরম উত্তেজনায় আশপাশের জিপগুলো চোখেই পড়েনি আমার। জঙ্গলের ঝোপের আড়ালে ‘মুভমেন্ট’ দেখতেই ব্যস্ত। দুটো সদ্য কৈশোরপ্রাপ্ত ব্যাঘ্রশাবকের উদ্দীপ্ত পদচারণায় গাছের পাতায় ঢেউ উঠছে বারবার। ‘বাঘ আশপাশেই আছে’, চাপা গলায় জানাল রবি। ইতিমধ্যে অন্যান্য জিপ থেকে সমবেত ‘ওই তো ... ওই তো ...’ রব উঠেছে। শব্দের অনুসরণে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে প্রবল আশায় বুক বাঁধলাম। কিন্তু নাহ্, বাঘ নয়, উত্তেজনার কারণ কয়েকটা হরিণশিশু। নিরাশ হতে হতেই চোখের সামনে বেশ স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠল হলুদ কালো ডোরাগুলো। বাঘ নয়, বাঘের বাচ্চা। আরে তাও তো বাঘই! মা তাদের ফেলে পথের অপর প্রান্তে ঝোপের আড়ালে পাড়ি জমিয়েছে। এদিকে মায়ের অভাবে কিংকর্তব্যবিমূঢ় দু’টি ছানা। সামনে একরাশ জিপ পথ জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের ডিঙিয়ে মায়ের কাছে যাবে কী করে তারা? পথ ঠাহর করতেই কখনও জঙ্গলের ঢাল বেয়ে খানিক উঠে যাচ্ছে হরিণের সঙ্গে, কখনও বা সে পথ ছেড়ে অন্য পথে জঙ্গল পার হওয়া দিশা খুঁজছে। মিনিটখানেক এই আতান্তর চলল দু’টি শিশুর মনে। তারপর একট প্রকাণ্ড শাল গাছের মোটা গুঁড়ির আড়াল থেকে বেরিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে লাফিয়ে রাস্তা পার হয়ে বনের অন্যদিকে পালিয়ে গেল তারা। সেখানেই শিশুদের অপেক্ষায় প্রহর গুনছিল বাঘিনি পারো জুনিয়র (নাম)। বাঘ না হোক, বাঘের ছানা দেখেই দিলখুশ। আমরা সুলতান বাংলোর পথ ধরলাম।
সুলতানের বাংলো যেন একটা ভিন্ন রাজ্য। মুগ্ধ হলাম বললেও কম বলা হয়, মোহগ্রস্ত হলাম প্রথম দর্শনে। চারদিকে ঘন শালের বন। সরু পথের বাঁকে পুরনো আমলের বন বাংলো। করবেট সাহেব থেকেছেন এখানে। বিশাল বাংলোয় তিনটে ঘর আর চওড়া বারান্দা। কাছেপিঠে কেউ কোথাও নেই। বনের আওয়াজ ছাড়া আর কোনও শব্দই হয় না সেখানে। বাইরের ঘরে বড় একটা ডাইনিং টেবিল আর তিনটে সোফা পাতা। শোওয়ার ঘরে প্রকাণ্ড খাট ছাড়িয়ে অনেকটা খালি জায়গা পড়ে রয়েছে। পাশেই ফায়ারপ্লেস। আর তৃতীয় ঘরটিতে কাজ চালানোর মতো একটা রান্নার বন্দোবস্ত করা রয়েছে। এখানে চালু ক্যান্টিন নেই। রামনগর থেকে বাজার বয়ে এনেছিলাম আমরা, কেয়ারটেকার রান্না করে দিয়ে গেল। 
বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামল, সন্ধে থেকে রাত হল। চারদিকের প্রকৃতি ক্রমশ বুজে এল। বাংলোর বারান্দার সামনে দিয়ে পাহাড়ে ঢাল বেয়ে বেশ কিছুটা উপরে উঠে গিয়েছে জঙ্গল। ঘন হয়েছে তার রূপ। প্রশস্ত চৌহদ্দির একটেরে বারান্দায় বসে রাতের নৈঃশব্দ্য উপভোগ করছিলাম। খানিক আগে কেয়ারটেকার বাংলোর বেড়ায় ইলেক্ট্রিক লাইন চালু করে দিয়েছে। আমার স্বামী ও কন্যা আশপাশেই কোথাও অ্যাস্ট্রো ফোটোগ্রাফিতে মগ্ন। আকাশ ভরে রয়েছে তারার মেলায়। আমার মন মজেছে নিকষ কালো বন্য শোভায়। হঠাৎ কোনও ঝিঁঝিঁ পোকা ডেকে চলে যাচ্ছে, আবার যে কে সেই নীরবতা। কেয়ারটেকারের ‘ম্যাডাম’ ডাকে চমকে উঠলাম রীতিমতো। রাতের মতো বিদায় নিচ্ছে তারা। বাংলোয় মাত্র আমরা তিনজন। রাতজাগা পাখির কর্কশ স্বরে জঙ্গলের নীরবতায় ছেদ পড়ল ক্ষণিকের তরে। দূরে কোথাও হাতির বৃংহন শুনতে পেলাম যেন। অদ্যই শেষ রজনী। করবেটের জঙ্গলের সঙ্গে শেষবারের মতো একাত্ম হচ্ছি আমরা তিনজন। 
পরের দিন ভোর হতে না হতেই আবারও সাফারির জন্য রেডি। জিপের অপেক্ষা করতে করতেই বাংলোর গেট পেরিয়ে একটু বুঝি জঙ্গলের রাস্তায় উঠেছিলাম। কেয়ারটেকার পিছু ডাকলেন, ‘যাবেন না, জঙ্গলে পায়ে হেঁটে ঘোরা বারণ। বিপদ এখানে আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকে। কখন কোথা থেকে সমুখে এসে পড়বে বলা মুশকিল।’ শেষ সকালের সাফারি মোটের উপর রোমাঞ্চহীন কেটে গেল। ফেরার পথে হাঁটুতে হাত রেখে বড় এক হনুমান বসেছিল পথ জুড়ে। আমাদের দেখেও নির্বিকার। হালকা হর্নের আওয়াজে তাকে সতর্ক করার চেষ্টা করল রবি। আমাদের দেখে ভেঙচি কাটল মুখপোড়া। তারপর একটু সরে বসল, ব্যস। রবি বলল, ‘ঝগড়া করেছে বোধহয়। মেজাজ খুবই খারাপ দেখছি।’ পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে দেখি হনুমানের কানের পাশ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ঝগড়ার কথা রবি জানল কী করে? জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়েছিলাম বোঝহয়, রবি বলল, ‘জঙ্গল আর বন্যদের সঙ্গে দিনরাত ঘর করি। তাদের মেজাজমর্জির খবর রাখা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।’ জঙ্গলে আর মাত্র কয়েক মুহূর্ত যাপন। তবু ভালোলাগার রেশ থাকবে মন জুড়ে।  
08th  September, 2024
এবার পুজোয় কোনটা কিনি

কলকাতা ও জেলার বিপণিগুলিতে সাজ সাজ রব। সকলেই সাজিয়ে বসেছে পরসা। কোথায় কেমন দাম? কী মিলছে কোন দোকানে?  বিশদ

14th  September, 2024
 টুকরো  খবর

পুজোর আগে ফের নানারকমের জিনিস এক ছাদের তলায়! সৌজন্যে পিলিট্যাক্সি। আজ ১৪ সেপ্টেম্বর ও আগামিকাল ১৫ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ এলাকায় সুধা হল-এ বসেছে এক প্রদর্শনীর আসর। বিশদ

14th  September, 2024
দীঘার কাছাকাছি, লুকানো মুক্তাবাজি

অফবিট পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গত কয়েকবছরে পর্যটকদের কাছে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে জুনপুট, বাঁকিপুট। বিস্তারিত লিখেছেন সৌমিত্র দাস। বিশদ

08th  September, 2024
রূপকথার রমণীয় দ্বীপে

ইন্দোনেশিয়ার বালির অপার সৌন্দর্য বর্ণনায় সমীর কুমার ঘোষ। বিশদ

08th  September, 2024
কোথায় কেমন পুজোর বাজার

পুজো দোরগোড়ায়। এইবেলা তালিকা মিলিয়ে উপহারের সামগ্রী ও নিজের পোশাকটিও কিনে ফেলতে হবে। কেনাকাটার এই মরশুমে কলকাতার সঙ্গে পিছিয়ে নেই জেলার বিপণিগুলিও। রইল তেমন কিছু প্রতিষ্ঠানের খবর। বিশদ

07th  September, 2024
 টুকরো  খবর

কলকাতা হোক বা শহরতলি, মফস্সল— বডি ওয়াশ ব্যবহারে অভ্যস্ত সব বয়সের মানুষ। ত্বকচর্চায় অভ্যস্তদের কথা মাথায় রেখেই গোদরেজ নিয়ে এল ফোম দেওয়া বডি ওয়াশ। সংস্থার সিন্থল ব্র্যান্ডের ছাতার তলায় বাজারে এল নতুন এই সিন্থল ফোম বডিওয়াশ। বিশদ

07th  September, 2024
নারী সেবা সংঘের প্রাক পুজো সেল

চলছে নারী সেবা সংঘের পুজো সেল। পুজোর আগেই হরেকরকম পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে তাদের মেলা বসেছে যোধপুর পার্কের কৃষ্ণশ্রী হলে। গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে মেলা চলবে আজ (৭ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত। বিশদ

07th  September, 2024
হিমালয়ের কোলে পাবং

রোলি নদীর দুরন্ত স্রোতের সঙ্গে নিস্তব্ধ গভীর পাইনের বন। এই নিয়েই পাবং গ্রামের সৌন্দর্য। বিশদ

31st  August, 2024
কোথায় কেমন পুজোর শাড়ি

শুরু হয়েছে দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউন। কলকাতা ও জেলার নানা জনপ্রিয় শাড়ি প্রতিষ্ঠান নিজেদের পুজোর সম্ভার সাজিয়ে বসেছে। কোথায় কেমন দামে পছন্দের কোন শাড়ি মিলবে তা লিস্ট মিলিয়ে দেখে নেওয়ার পালা। বিশদ

31st  August, 2024
 টুকরো  খবর

‘রাতে মশা, দিনে মাছি’, সনাতন কলকাতাকে নিয়ে কবি ঈশ্বর গুপ্তের এই অমোঘ ব্যাখ্যা অনেকেই পড়েছেন। কলকাতার বয়স বেড়েছে। কিন্তু মশকবাহিনীর জোরে একটুও ভাটা পড়েনি। যুগে যুগে কালে কালে কলকাতার মশকযন্ত্রণাে বেড়েছে। বিশদ

31st  August, 2024
পুজোয় নানা বুটিকের সম্ভার

এবার উৎসবের মরশুমে কী ধরনের কালেকশন থাকছে বিভিন্ন বুটিকে? রইল হদিশ। বিশদ

24th  August, 2024
মাইথন থেকে কল্যাণেশ্বরী

শহুরে কোলাহল ছেড়ে একটু শান্ত প্রকৃতির খোঁজে যেতে পারেন মাইথন। পাশেই কল্যা঩ণেশ্বরী মন্দির। প্যাকেজ ট্যুরে ঘুরে নিতে পারেন দু’টি জায়গাই। বিশদ

24th  August, 2024
 টুকরো  খবর

সম্প্রতি ইনোভার্ভ-এর এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়াজগতের নক্ষত্র সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। নিজের খেলোয়াড় জীবনের সফর নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। বিশদ

24th  August, 2024
এক্সপ্লোডিয়ার প্রদর্শনী

ফ্যাশন এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং নিয়ে এনআইএফডি গ্লোবাল সল্টলেক সম্প্রতি আয়োজন করেছিল বার্ষিক ফ্যাশন এবং লাইফস্টাইল প্রদর্শনী ‘এক্সপ্লোডিয়া ২.০’।
বিশদ

17th  August, 2024
একনজরে
চারিদিক আগাছায় ভরা। তার মধ্যে ছোট্ট দু’টি ঘরে চলছে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ঘরের দেওয়ালেও ধরেছে ফাটল। ফলে, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ার মতো অবস্থা ...

জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা প্রত্যাহারের পর কেটে গিয়েছে পাঁচটি বছর। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পর এই প্রথম ভূস্বর্গে ভোট গ্রহণ হতে চলেছে। সেই ভোট গ্রহণ ...

আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে পিজিটি ও জুনিয়র ডাক্তারদের টানা কর্মবিরতিতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের দুর্ভোগ চরমে। গুরুতর অসুস্থ রোগীকে ভর্তি না নেওয়ার অভিযোগ প্রথম থেকেই। এবার চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখেই রোগীদের ছুটি নিতে ‘চাপ’ সৃষ্টির অভিযোগ উঠল। ...

ব্যবহৃত সিরিঞ্জ বেঁকিয়ে ফেলার দরকার নেই। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডাঃ সন্দীপ ঘোষ এমনই নির্দেশ দিতেন ওয়ার্ডের নার্সদের। হাসপাতাল সূত্রে মিলেছে এই ...




আজকের দিনটি কিংবদন্তি গৌতম ( মিত্র )
৯১৬৩৪৯২৬২৫ / ৯৮৩০৭৬৩৮৭৩

ভাগ্য+চেষ্টা= ফল
  • aries
  • taurus
  • gemini
  • cancer
  • leo
  • virgo
  • libra
  • scorpio
  • sagittorius
  • capricorn
  • aquarius
  • pisces
aries

কর্মস্থলে জটিলকর্মে অনায়াস সাফল্য ও প্রশংসালাভ। আর্থিক দিকটি শুভ। ক্রীড়াস্থলে বিশেষ সাফল্য। ... বিশদ


ইতিহাসে আজকের দিন

১৬৩০: আমেরিকার বোস্টন শহর প্রতিষ্ঠিত হয়
১৮৪৬: সাপ্তাহিক ‘দর্পণ’ প্রকাশিত হয়
১৮৬৭: চিত্রশিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম
১৯০৫: বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেন ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটি
১৯১৫: জনপ্রিয় চিত্রশিল্পী  মকবুল ফিদা হুসেনের জন্ম
১৯২৪: হিন্দু মুসলমান সম্প্রীতির জন্য মহাত্মা গান্ধীর অনশন
১৯৪০: মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নেতৃত্বে ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহ শুরু হয়
১৯৪৪: বিশিষ্ট অভিনেতা বিভু ভট্টাচার্যের জন্ম
১৯১৫: চিত্রশিল্পী এম এফ হুসেনের জন্ম
১৯৫০: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্ম
১৯৫৪: কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তর মৃত্যু 
১৯৬৫: প্রাক্তন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার অরবিন্দ ডি সিলভার জন্ম
১৯৭০:  প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার অনিল কুম্বলের জন্ম
১৯৭৭: ইংরেজ উদ্ভাবক ও ফটোগ্রাফির পুরোধা উইলিয়াম টলবোটের মৃত্যু
১৯৮০: পাকিস্তানি ক্রিকেটার মোহাম্মদ হাফিজের জন্ম
১৯৮৬: ক্রিকেটার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের জন্ম
১৯৯৯: কবি ও গীতিকার হসরত জয়পুরির মৃত্যু 



ক্রয়মূল্য বিক্রয়মূল্য
ডলার ৮৩.০৭ টাকা ৮৪.৮১ টাকা
পাউন্ড ১০৮.৬৫ টাকা ১১২.২০ টাকা
ইউরো ৯১.৫৭ টাকা ৯৪.৭৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
পাকা সোনা (১০ গ্রাম) ৭৩,৭০০ টাকা
গহনা সোনা (১০ (গ্রাম) ৭৪,১০০ টাকা
হলমার্ক গহনা (২২ ক্যারেট ১০ গ্রাম) ৭০,৪০০ টাকা
রূপার বাট (প্রতি কেজি) ৮৮,৫০০ টাকা
রূপা খুচরো (প্রতি কেজি) ৮৮,৬০০ টাকা
[ মূল্যযুক্ত ৩% জি. এস. টি আলাদা ]

দিন পঞ্জিকা

১ আশ্বিন, ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪। চতুর্দশী ১৫/৪৫ দিবা ১১/৪৫। শতভিষা নক্ষত্র ২১/৫ দিবা ১/৫৩। সূর্যোদয় ৫/২৭/২৫, সূর্যাস্ত ৫/৩৪/৫৫। অমৃতযোগ প্রাতঃ ৬/১৫ মধ্যে পুনঃ ৭/৪ গতে ১১/৭ মধ্যে । রাত্রি ৭/৫৭ গতে ৮/৪৫ মধ্যে পুনঃ ৯/৩২ গতে ১১/৫৪ মধ্যে পুনঃ ১/৩০ গতে ৩/৫ মধ্যে পুনঃ ৪/৪০ গতে উদয়াবধি। মাহেন্দ্রযোগ রাত্রি ৭/৫৭ মধ্যে। বারবেলা ৬/৫৮ গতে ৮/২৯ মধ্যে পুনঃ ১/১ গতে ২/৩১ মধ্যে। কালরাত্রি ৭/৩ গতে ৮/৩২ মধ্যে।   
৩১ ভাদ্র, ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪। চতুর্দশী দিবা ১১/৫। শতভিষা নক্ষত্র দিবা ২/২৮। সূর্যোদয় ৫/২৭, সূর্যাস্ত ৫/৩৭। অমৃতযোগ দিবা ৭/৫২গতে ১০/১৬ মধ্যে ও ১২/৪০ গতে ২/১৬ মধ্যে ও ৩/২ গতে ৪/৪০ মধ্যে এবং রাত্রি ৬/১৬ মধ্যে ও ৮/৪০ গতে ১১/৬ মধ্যে ও ১/২৭ গতে ৩/৪ মধ্যে। বারবেলা ৬/৫৮ গতে ৮/২৯ মধ্যে ও ১/৩ গতে ২/৩৫ মধ্যে। কালরাত্রি ৭/৬ গতে ৮/৩৫ মধ্যে।  
১৩ রবিয়ল আউয়ল।

ছবি সংবাদ

এই মুহূর্তে
আর জি কর কাণ্ড: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্যাতিতার বাড়িতে সিবিআই

11:57:47 PM

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ভোগান্তি, জাতীয় সড়ক অবরোধ
বন্যা বিধ্বস্ত আরামবাগে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা। তাঁদের ...বিশদ

10:51:00 PM

এনসিপি (এসসিপি)-তে যোগদান করলেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন বিধায়ক বাপু সাহেব তুকারাম পাথারে

10:18:00 PM

এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জয়ী ভারতীয় পুরুষ হকি দলকে শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির

10:13:00 PM

আইএসএল: গোয়াকে ২-১ গোলে হারাল জামশেদপুর

09:35:00 PM

মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বিশেষ টিম তৈরি করল খড়্গপুর জিআরপি
দেশের সর্বোচ্চ আদালত মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরই ...বিশদ

09:28:00 PM