ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় মেয়েরা ছিল ব্রাত্য। তবু কয়েকজন সেই নিয়ম ভেঙেছিলেন। আগামী ২৩ জুন বিশ্ব ইঞ্জিনিয়ারিং দিবস। তার প্রাক্কালে কয়েকজন মহিলা ইঞ্জিনিয়ারের কথায় রাতুল দত্ত।
সমাজসেবাকেই জীবনের পাথেয় করেছেন তিনি। পথশিশু আর দরিদ্রদের সেবায় নিজেকে সমর্পণ করেছেন। তিনি পাপিয়া কর। গরিব শিশুদের নিয়ে তাঁর কর্মকাণ্ড। এই করোনাকালেও যার বিরাম নেই। তাঁর কথা শোনালেন কমলিনী চক্রবর্তী।
করোনার কালো ছায়া যেন পিছু ছাড়ছে না।এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নাজেহাল সাধারণ মানুষ।মানুষ বড় অসহায়।সমাজে থেকে সমাজের জন্য কাজে আজ যেমন এগিয়ে এসেছেন নানা বিশিষ্টজন, আবার সমাজের নানা স্তরের মানুষও নিজের মতো করে সাহায্য করছেন।
কোভিড আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন শেফ ইরা ও তাঁর হোম শেফের দল। এই পরিষেবা তাঁরা দিচ্ছেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। কোথায় কীভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়, সে কথা জানালেন কমলিনী চক্রবর্তী।
তাঁদের প্রত্যেকের সন্তান অল্প বয়সেই সাফল্যের ছোঁয়া পেয়েছে জীবনে। তার পিছনে মায়েদের অবদান কতটা? মাদার্স ডে উপলক্ষে সেই মায়েদের কথা লিখেছেন অন্বেষা দত্ত।
করোনাকালের বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মায়ের মতো যত্ন দেওয়ার চেষ্টা করছেন চার কন্যা। তাঁদের কথা লিখেছেন রজত চক্রবর্তী।
শ্রমিক ধর্মঘট অথবা আন্দোলন। আট ঘণ্টা শ্রমের দাবি। শব্দগুলো সব আমাদের চেনা ও জানা। মে দিবস কী, তা কাউকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে হয় না। কিন্তু হতাশার বিষয় একটাই, আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকদের সেই আন্দোলনের ১৩৫ বছর পেরিয়ে গিয়েছে, অথচ শ্রমিক বলতে এখনও আমরা শুধু পুরুষদের কথাই ভাবি।
ইন্দোরের এক নিম্নবিত্ত পরিবারে অনীতা বর্মার জন্ম। অভাব আর অনটনের মাঝে তাঁকে পড়াশোনা শেখানোর স্বপ্নও দেখতে পারেননি বাবা মা। অল্প বয়সেই বরং মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন দিনমজুরের সঙ্গে। কিন্তু বিয়ের পরেও বিধি বাম।
স্বামী শিল্পী। তবু সচ্ছলতা নেই তাঁর জীবনে। স্বামীর রোজগারের কোনও ঠিকঠিকানা নেই। কখনও কাজ পান, কখনও পান না। আর না পেলে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে ওঠে ইন্দোর নিবাসী যমুনা সাগোরের। তিনি ছিলেন গৃহবধূ। কিন্তু নিদারুণ দারিদ্র্যর হাত থেকে বাঁচার জন্য একদিন পথে নেমে পড়লেন।
নয়ের দশকের গোড়ার দিকেও চিত্রটা বেশ অন্যরকম ছিল। মেয়েরা ততদিনে অনেকাংশেই ঘর সামলে রোজগেরে হয়ে উঠেছিল বটে, কিন্তু সেই রোজগারের কিছু নির্দিষ্ট গণ্ডি ছিল। সেই গণ্ডিগুলো আজও যে খুব একটা বদলে গিয়েছে তা নয়, তবু মেয়েরা নিজেদের কর্মদক্ষতার কারণে এখন নির্দিষ্ট বেড়া ডিঙিয়ে অনেকক্ষেত্রেই নিজেদের প্রমাণ করেছেন।
অঞ্জলি সুদ-এর ধরনধারণ বরাবরই একটু ভিন্ন। ছোট থেকে তিনি বড্ড একরোখা। নিজে যা করবেন বলে মনে করেন সেটা করেই ছাড়েন। শুধুমাত্র ঝোঁকের বশে তিনি ম্যাসাচুসেটস বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি হয়ে গিয়েছিলেন ১৪ বছর বয়সে।
পেপসির তিনি সিইও ছিলেন। এখন অ্যামাজন কোম্পানির বোর্ড অব ডিরেক্টরের অন্যতম। তিনি ইন্দ্রা নুয়ি। ভারতীয় এই মহিলার জন্ম চেন্নাইতে। সেখানকার স্কুলেই পড়েছেন। তারপর ১৯৭৮ সালে ম্যানেজমেন্ট পড়ার জন্য মার্কিন দেশে পাড়ি জমান। সেখানেই শুরু হয় তাঁর পেশাদারি জীবন।
অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ক্লান্তি, প্রিয়জনের বিপথগামিতায় অশান্তি ও মানহানির আশঙ্কা সাংসারিক ক্ষেত্রে মতানৈক্য এড়িয়ে চলা ... বিশদ
ব্রাজিলের মেয়ে ফতিমা ওয়েলহ্যাম গতানুগতিক পেশায় যেতে চাননি কখনওই। তাঁর বরাবরই শখ ছিল দু’হাত কাজে লাগিয়ে রোজগার করবেন। তাই ২০০৮ সালে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ শেখায় মন দিলেন। ইটের ওপর ইট সাজিয়ে বাড়ি তৈরি, দেওয়াল ভেঙে ঘর বাড়ানো, বাইরের লনে বেদি তৈরি করে মূর্তি বসানো, ফোয়ারা লাগানো ইত্যাদি নিয়েই দিন কাটে তাঁর। প্রথম দিকে কাজটা মোটেও সহজ ছিল না, জানালেন ফতিমা। তাঁর কথায়, ‘তখন কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে আমি ছাড়া আর কোনও মহিলা ছিল না। ফলে পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করাটা রীতিমতো কঠিন হয়ে উঠত এক এক সময়। আমার সহকর্মীদের কটাক্ষও সহ্য করতে হয়েছে অনবরত। তাই বলে আমি হালও ছাড়িনি, রণেও ভঙ্গ দিইনি। বরং পুরুষদের কাছে সাহায্য চেয়ে, তাদের কাজ দেখে নিজেই কাজ শিখে ফেলেছি। আর এখন তো কনস্ট্রাকশনের প্রশিক্ষণও দিই।’ কিন্তু কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে ফতিমা এসেছিলেন নাটকীয় ভাবে। ব্রাজিলে একটি সরকারি চাকরি করতেন তিনি। হঠাৎই একদিন অন্যের ভুলে চাকরি গেল তাঁর। তারপর নিজের ভাগ্য তৈরি করার তাগিদেই একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে লেবারের কাজে যোগ দিলেন। পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাথর বওয়া থেকে দেওয়াল ভাঙা, সব করেছেন। হাতেকলমে শিখেছেন প্রতিটি কাজ। আর এখন এই কাজে আরও মহিলাকে যুক্ত করতে চান। তাই ইট কাঠ কংক্রিটের কাজ শেখান তিনি মেয়েদের। নিজের অবসর সময়ে অন্যকে কাজ শিখিয়েই কাটে তাঁর। বললেন এই কাজে সৃজনশীলতা প্রচণ্ড। তাই মেয়েরা অনেকেই আকৃষ্ট হচ্ছেন নির্মাণের কাজে। কিন্তু সমাজ এখনও মেয়েদের এই কাজে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। ফলে সেটা সমস্যা তো বটেই। তবু আশা ছাড়ার পাত্রী তিনি নন। তাই নিজের কাজটা করে যাচ্ছেন নিঃশব্দে। মেয়েদের সব বেড়া ভেঙে দিতে শেখাচ্ছেন ফতিমা।
